জেনে নিন তেঁতুলের যত গুন

0
1199

ছবি দেখে নিশ্চয়ই জিভে জল চলে এসেছে? তেঁতুল এমনই এক ফল, যার নাম শুনলে সবারই জিভে জল চলে আসতে বাধ্য। টক এই ফলটির গুণ বেশ মিষ্টি।

 

কারণ এটি খেলে শরীরে একইসঙ্গে অনেকরকম উপকার মেলে। তেঁতুল কাঁচা, পাকা, আচার কিংবা সস তৈরি করে বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। পাকা তেঁতুল সংরক্ষণ করে সারাবছর খাওয়া যায়।

তেঁতুলের পুষ্টিগুণ

প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তেঁতুলে মোট খনিজ পদার্থ ২.৯ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ২৮৩ কিলোক্যালরি, আমিষ ৩.১ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, শর্করা ৬৬.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৭০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১০.৯ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৬০ মাইক্রোগ্রাম ও ভিটামিন সি ৩ মিলিগ্রাম।

তেঁতুলের কিছু উপকারিতা

কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে তেঁতুলের সাহায্য নিন। তেঁতুলের মধ্যে টার্টারিক অ্যাসিড‚ ম্যালিক অ্যাসিড এবং পটাশিয়াম আছে যা কোষ্ঠন্যকাঠিন্য দূর করে। এখনো আয়ুর্বেদে তেঁতুল পাতা ডায়েরিয়া সারাতে ব্যবহার হয়। এছাড়া তেঁতুল গাছের ছাল এবং শিকড় পেটের ব্যথা সারাতে ব্যবহার করা হয়। তেঁতুলের বীজ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। এছাড়া এটি রক্তে চিনির মাত্রাও ঠিক রাখে। এতে উপস্থিত এক ধরণের এনজাইম রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তেঁতুলে উচ্চ মাত্রায় ফাইবার আছে আর একই সঙ্গে এটা সম্পূর্ণ ফ্যাট ফ্রি। রিসার্চ করে দেখা গেছে রোজ তেঁতুল খেলে ওজন কমে। এর জন্যে দায়ী এতে উপস্থিত flavonoids and polyphenols। এছাড়াও এতে উপস্থিত hydroxycitric acid ক্ষুধা কমায়। তেঁতুলে উপস্থিত ফ্ল্যাভরনয়েড ব্যাড কোলেস্টেরল কমায় এবং গুড কোলেস্টেরল বাড়ায়। এছাড়াও রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড (এক ধরণের ফ্যাট) জমতে দেয় না। এতে উপস্থিত উচ্চ পটাশিয়াম রক্ত চাপ কম করতে সাহায্য করে। তেঁতুলে উচ্চ পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে যা কিডনি ফেলিওর এবং কিডনি ক্যান্সার রোধ করতে সাহায্য করে। তেঁতুল গাছের পাতা এবং বাকল অ্যান্টি সেপটিক এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল‚ ফলে ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। নিয়মিত তেঁতুলের বীজের গুঁড়া খেলে পেপটিক আলসার সেরে যায়। তেঁতুলে উপস্থিত পলিফেনলিক কম্পাউন্ড আলসার সারিয়ে তোলে বা হতে দেয় না। পাকা তেঁতুল ভিজিয়ে রেখে সকালে শুধু পানি খেলে হাত-পায়ের জ্বালা কমে। তেঁতুল ক্ষতিকারক আলট্রা ভায়োলেট রে-র হাত থেকে ত্বককে বাঁচাতে সাহায্য করে। এছাড়াও যাদের ব্রণের সমস্যা তাদের জন্যেও উপকারী তেঁতুল। তেঁতুলে উপস্থিত হাইড্রক্সি অ্যাসিড ত্বকের এক্সফলিয়েশন করতেও সাহায্য করে যার ফলে মরা কোষ উঠে যায় এবং ত্বক উজ্জ্বল দেখায়।

গর্ভাবস্থায় তেঁতুল খাওয়া যাবে কি?

গর্ভাবস্থায় নারীরা সাধারণত তেঁতুল খেতে পছন্দ করেন। চিকিৎসাগত দিক থেকেও রয়েছে এর উপকারিতা। তেঁতুলের টক উপাদান গর্ভবতী নারীদের মর্নিং সিকনেস থেকে অনেকটাই মুক্তি দেয়। গর্ভাবস্থায় তেঁতুল খাওয়া নিরাপদ বলেই প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। তবে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে তেঁতুল খাওয়া উচিত। তেঁতুলে থাকা নির্দিষ্ট কিছু প্রোটিন গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে ব্লাড প্রেসার। তেঁতুলের পটাশিয়াম এবং আয়রন ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। তেঁতুল, শরীরে অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধের কাজে বাঁধা তৈরি করে থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় তেঁতুল খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে খাওয়া উচিত। ছোটখাটো সতর্কতা অবলম্বন করে তেঁতুল খেলে সেটা গর্ভাবস্থায় নিরাপদ খাবার হিসেবেই গণ্য হয়। তবে মনে রাখবেন, আপনার খাদ্য তালিকায় তেঁতুল রাখার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে ভুলবেন না যেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 × 1 =