গজারিয়ার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী পরিবারের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম !

1
978

অবি ডেস্কঃ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করেই গজারিয়ার আমিরুল ইসলাম এখন মুক্তিযোদ্ধা দাবিদার। ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সাথে জড়িত থেকে উক্ত ব্যক্তি বিভিন্ন অপকর্ম করছে বলে তার বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধা সনদের জন্য আবেদন কারীর নাম আমিরুল ইসলাম পিতা-মরহুম রোস্তম আলী সাং+থানা-গজারিয়া জেলা-মুন্সিগঞ্জ। এই ব্যক্তি গজারিয়ার গোটা কয়েক দুর্নীতিবাজ মুক্তিযোদ্ধার সহায়তায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে প্রাথমিক কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম উঠাতে আবেদন করছেন বলে জানাগেছে।

 

আবেদনের পর পরই আমিরুল ইসলাম নিজকে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে দাবী করছেন। আমিরুল ইসলামের মুক্তিযোদ্ধার এমন দাবীর প্রেক্ষিতে গজারিয়া তথা মুন্সিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন মহলে শুরু হয়েছে নানান কানাগুসা। গজারিয়ার সুধীমহলসহ এলাকার লোকজন বলাবলী করছে আমিরুল ইসলাম কি আসল মুক্তিযোদ্ধা? নাকি অবৈধ অর্থ আর ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার চেষ্টা করছে। এদিকে বিভিন্ন সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে আমিরুল ইসলাম প্রকৃতি মুক্তিযোদ্ধা নন তিনি একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম উঠাতে বিভিন্ন মহলে তদবির করে চলছে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে আমিরুল ইসলামকে কখনও যুদ্ধে ময়দানে দেখেনি মুক্তিযোদ্ধারা। গজারিয়ার একাধিক মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকার জনগণ এ কথা জানান। আমিরুল ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব বিস্তার করে অবৈধ অর্থের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম উঠাতে দৌড় ঝাপ শুরু করছেন অনেক দিন থেকে। অন্যদিকে আমিরুল ইসলামের মুক্তিযুদ্ধের বির্তকির বিষয়টির ধোয়াশা খোলস করতে অপরাধ বিচিত্রা পত্রিকা থেকে যোগাযোগ করা হয় গজারিয়া, হোমনার যুদ্ধকালিন কমান্ডার বীরপ্রতীক রফিকুল ইসলামের সাথে জানতে চাওয়া হয় আমিরুল ইসলাম কি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ? নাকি ভুয়া মুক্তিযাদ্ধা? এমন প্রশ্নের জবাবে বীর প্রতীক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমিরুল ইসলাম তাদের সাথে যুদ্ধ করেননি। আমিরুল ইসলাম কোথায় যুদ্ধ করছে তা তিনি জানে না ১৯৭১ এর রনাঙ্গানে আমরা তাকে কখনও দেখিনি। তবে ১৯৭১ সালে গজারিয়ার গ্রামে সাধারণ লোকজন খোকা রাজাকার নামক এক ব্যক্তিকে ধরে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে নিয়ে আসে তখন আমিরুল ইসলাম গ্রামের ঐ লোকদের সাথে আমাদের ক্যাম্পে আসতে দেখি লোকজনের পিছে পিছে। এতে কি তিনি মুক্তিযোদ্ধা হন? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা কি হয় তবে শুনেছি উনি আবেদন করছেন। আমাদের সাথে মুক্তিযুদ্ধ করেনি এই কথা সত্যি। যুদ্ধকালিন গজারিয়া ও তার আশপাশের ৭৪ জন মুক্তিযোদ্ধার আরেক কমান্ডার ফজলুল হক এর কাছে জানতে চাওয়া হয় আমিরুল ইসলাম কি মুক্তিযোদ্ধা ? আপনাদের সাথে ৭১ সনে যুদ্ধ করেছে কি ? এই ব্যাপারে আপনার মতামত কি? এই প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার ফজলুল হক বলেন, আল্লাহর কসম, আমার মা-বাবার কসম আমিরুল ইসলাম কোন মুক্তিযোদ্ধা নন তিনি ৭১এর পাকসেনাদের বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধ করেনি সে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। এদিকে একাধিক সূত্রে জানা যায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধা দাবী করেই ক্ষ্যান্ত হননি এই ব্যক্তি বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরিবারের নাম ভাঙ্গিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ করছেন নানান অপকর্ম। কে এই আমিরুল ইসলাম ? জাসদ থেকে জাতীয় পার্টি, অতঃ পর বর্তমানে গজারিয়া থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, এক সময় জাসদ রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল, স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের শাসন আমলে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। এরপর এরশাদের শোষণ ও বিএনপির শাসন আমলে মেঘনা নদীতে অবৈধ বালি উত্তোলন শুরু করলে গজারিয়ার বিভিন্ন গ্রাম নদী ভাংগনের কবলে পড়ে হাজার হাজার বিঘা ফসলের জমি, মসজিদ, স্কুল, বাড়ী, ঘর নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায় এবং বহু লোক হয় বাস্তহারা। আমিরুল ইসলাম গং অবৈধ বালি উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে আবারও শুরু হয় বালু দস্যু আমিরুল ইসলামের অবৈধ কর্মকান্ড। ফাইভস্টার নামক একটি সিন্ডিকেট করে শত শত অবৈধ অস্ত্রধারী ক্যাডার নিয়ে গজারিয়া ও মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীতে শত শত ড্রেজার ও ক্রেণ লাগিয়ে আবার ও শুরু করেন অবৈধ বালি উত্তোলণ। ঔ সময়ে তার এহেন কর্মকান্ডে বিরুদ্ধে এলাকার জনগণ সোচ্ছার হন। গজারিয়া এলাকায় হাজার, হাজার লোকজন তাদের ভিটে মাটি ও ফসলের জমি রক্ষা করতে আমিরুল গং এর অবৈধ বালি উত্তোলন বন্ধ করতে শত শত টলার নিয়ে আমিরুল ইসলাম সিন্ডিকেট ড্রেজারে হামলা প্রস্তুতি নেন। তখন জনতার এই হামলা ঠেকাতে আমিরুল ইসলাম কয়েকশত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে সাধারণ লোকজনের উপর নির্বিচারে গুলি চালায় ও হামলা করে। ঐ হামলায় গজারিয়া পাইলট স্কুলের শিক্ষক আওয়ামীলীগ নেতা বিজয় বল্লভ যায় নিহত হন। জাতীয় পার্টির নেতা আমিরুল ইসলাম ঐ সময় বিজয় বল্লব রায়ের হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। এর পর একটি সিন্ডিকেট করে কয়েক যুগ ধরে গজারিয়া, মুন্সিগঞ্জ, চাঁদপুর এর মেঘনা ও তার আশপাশের নদীতে শুধু করেন শত শত ড্রেজার লাগিয়ে অবৈধ বালি উত্তোলন। মেঘনা ও তার আশ পাশের নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন কালে শত শত বিঘা কৃষি জমি, বাড়ি-ঘর মসজিদ, স্কুল ও বিভিন্ন ¯হাপনা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। আমিরুল ইসলাম গং অবৈধ বালি উত্তোলন করে শত শত কোটি টাকা ও বিপুল ধনসম্পদের মালিক। বর্তমানে হাইকোর্টের নিষেধ অমান্য করে আমিরুল ইসলাম গং গজারিয়া, মুন্সিগঞ্জ ও চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে শত শত ড্রেজার লাগিয়ে অবৈধ বালি উত্তোলন করছে । প্রতিদিন আমিরুল সিন্ডিকেট আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বালু মহল গুলোর নামে। বালু দস্যু আমিরুল ইসলাম বর্তমান সরকারের আমলে বিগত দুইটি উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে গজারিয়া উপজেলা থেকে নির্বাচন করেন। এলাকার জনগণ গত দুইটি নির্বাচনেই তাকে প্রত্যাখ্যান করেন। প্রতিপক্ষ প্রার্থীর কাছে বিপুল ভোটে হেরে যান তিনি। ঐ নির্বাচন দুইটিতে হারার অন্যতম কারণ ছিল মেঘনা নদী থেকে অবৈধ বালি উত্তোলন করে এলাকার লোকজনের ফলের জমি ও বাড়ি-ঘর স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ নদী গর্ভে বিলীণ করে দিয়ে নিজের পকেট ভারী করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এলাকাবাসি জানান বিগত দুটি উপজেলা নির্বাচনে আমিরুল ইসলামের অপকর্মের প্রতিদান দেন এলাকার জনগণ ভোটের মাধ্যমে। বালু দস্যু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলাম এবারও গজারিয়া উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। সূত্রে জানান, বিভিন্ন সময়ে ভূত্ত্বত অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বিশ থেকে ত্রিশ হেক্টর নদী বালি উত্তোলনের জন্য লোক দেখানো ইজারা নিয়ে শত শত হেক্টর নদীতে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করত। বর্তমানে মেঘনা নদীতে গেলে দেখা যাবে এখনও যত্র তত্রভাবে হাজার হাজার ড্রেজার লাগিয়ে বালি উত্তোলন করছে চক্রটি। এই অবৈধ বালি উত্তোলনের ফলে চাঁদপুরের মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পটি এখন নদী ভাঙ্গনের হুমকির মুখে। বিভিন্ন সূত্রের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভুয়া মুক্তি যোদ্ধা আমিরুল ইসলাম প্রধান মন্ত্রী পরিবারের নাম ভাঙ্গিয়ে বর্তমানে শুরু করেছেন নানান অপকর্ম। গজারিয়া এলাকায় স্থাপিত বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে নিজেও তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে করছে নানা অপকর্ম ও চাঁদাবাজি। সূত্রে জানান ক’দিন আগে গজারিয়া স্থাপিত অর্থনৈতিক জোনের এক মালিকের কাছে ভুয়া দশ কোটি টাকার বিল পাঠিয়ে নানান হুমকি দমকি দিয়ে একবার ৭০ (সত্তর) লাখ টাকাসহ কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন বলে ঐ কম্পানির বিশ্বস্ত সূত্রে এই তথ্য জানান। সূত্রে আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী পরিবারের এক সদস্যের সাথে হোটেল সোনারগাঁয়ে ছবি তুলে ঐ কম্পানিকে ঐ ছবি দেখিয়ে এমন অসংখ্য অপকর্ম করেই চলেছে। আমিরুল দীর্ঘ দিন যাবৎ প্রধানমন্ত্রী পরিবারের নাম ভাঙ্গিয়ে মারাত্মক মারাত্মক অপকর্ম করে আজও রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর আদৌও জানে না তার পরিবারের নাম ভাঙ্গিয়ে গজারিয়ার আমিরুল ইসলাম করছে বিভিন্ন অপকর্ম। তার এইসব অপকর্ম বন্ধ করতে আইন প্রয়োগ কারি সংস্থার দৃষ্টি দেওয়ার জন্য বিভিন্ন মহল জোর দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া আমিরুল ইসলাম দুনীর্তির পন্থা অবলম্বন করে নদী থেকে অবৈধ বালি উত্তোলন ও নানান অপকর্ম করে কয়েক শত কোটি টাকার ও বিপুল ধন সম্পদের মালিক। রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট, একাধিক দোকান, গাড়ী, রেস্তরা, বাড়িসহ শত শত বিঘা জমি রয়েছে তার নামে ও বে-নামে। তার এই টাকা ও বিপুল সম্পদের আয়ের উৎস কি? এই ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনকে দৃষ্টি দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন বিভিন্ন মহল।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

twenty − 13 =