সব রঙিন খাবার আমাদের জন্য উপকারি নয়

0
570

আমরা প্রতিদিন যে সব খাবার খাই তার মধ্যে এক একটি একেক রঙের হয়ে থাকে। সব রঙিন খাবার আমাদের জন্য উপকারি নয়। আবার অনেক রং তো শরীরের ক্ষতিও করে।

 

তাহলে কোন রঙিন খাবার শরীরের জন্য উপকারি? সুস্থ থাকতে জেনে নিন এখনই। আমরা তৈরি করা যে রঙিন খাবার খাই তার রং আসলে প্রকৃতির উপাদানের মধ্যেই রয়েছে। এমন সব উজ্জ্বল রঙ কিন্তু শরীরের জন্য জরুরি। কিন্তু এখন প্রাকৃতিক রং ব্যবহার না করে দেয়া হয় কৃতিম রং যা বিভিন্ন অসুখের কারণ। তবে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যদি প্রাকৃতিক রঙের ফল আর সবজি রাখা যায় তবে ভিটামিন, মিনারেল-সহ সব কিছুই পাবেন। তা শরীর সুস্থ রাখার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। তাই কমলা, বেগুনি, লাল, হলুদ, সবুজ, এমনকি সাদা রঙের ফল সবজি খাওয়া জরুরি।

কমলা

চারপাশে তাকালেই চোখে পড়ে নানা ধরনের কমলা রঙের ফল ও সবজি। যেমন কমলালেবু, গাজর, মিষ্টি আলু, কুমড়া, পিচ, আম ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে থাকা ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। কমলা রঙে এমন উপাদান থাকে যা শ্বাসনালী ও আর্থ্রাইটিসের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন মিষ্টি আলু, কুমড়ার তরকারি বা গাজরের স্যালাদ রাখতে পারেন। ফল হিসাবে আম, কমলালেবু বা পিচ তো রয়েছেই।

লাল

টমেটো, লাল ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি, বিট, চেরির মত অনেক সবজি আর ফলে প্রকৃতি লাল রং আছে। এগুলোতে থাকে প্রচুর ভিটামিন এ এবং সি। কড়া রোদ থেকে ত্বক রক্ষা করতে, হৃদরোগ কমাতে এর জুড়ি নেই। এই রঙিন খাবার খেলে হাঁপানির সমস্যাও কমে। টমেটো এবং বিট স্যালাদে ও তরকারিতে খেতেই পারেন। স্ট্রবেরি সকালের নাস্তায় রাখতে পারেন। ডায়েটিশিয়ানরা বলেন, বয়স বাড়লে অবশ্যই খাদ্যতালিকায় নানা ধরনের বেরি রাখা উচিত। এতে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ে।

হলুদ

হলুদ রঙের জন্য অবশ্যই বেছে নিতে পারেন কলা, লেবু, ভুট্টা, আনারস, হলুদ ক্যাপসিকাম। এতে থাকা ক্যারোটিনয়েড শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই বাড়ায় না, ত্বক ভাল রাখে ও বিশেষ কিছু ধরনের ক্যানসারের আশঙ্কাও কমায়। ঠাণ্ডা লাগলেই হঠাৎ করে কলা খাওয়া বন্ধ করে দেয়ার ধারণাও ঠিক নয়। কলায় ভিটামিন ও মিনারেল থাকার কারণে তা খাওয়া উচিত। ফ্রুট স্যালাদের পাশাপাশি ডাল খান অবশ্যই।

সবুজ

প্রকৃতিতে সবুজ রং দেখা যায় প্রচুর। সবুজ শাকের মধ্যে পালং, লাউ, ডাটা, পাট, কলমি, পুঁই ইত্যাদি শাক রয়েছে। এগুলোর সবই উপকারি। এছাড়া লেটুস পাতা, শসা, ব্রকোলি, স্প্রাউট, বিনস, মটরশুঁটি এবং সবুজ আঙুর, আপেল, কিউয়ি জাতীয় ফল তো আছেই। সবুজ রঙে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম থাকে। তাই খাবারে এই রং থাকা মানে শরীরকেই সুস্থ রাখা। সবুজ সবজি দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, হৃদরোগের হার কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু বেশি রান্না করে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট না করে ফেলাই ভাল। অল্প তেলে সাতে বা হালকা সিদ্ধ করে উপকারিতা বজায় রেখেই খান।

সাদা

খাদ্যতালিকায় আমরা সবচেয়ে বেশি রাখি সাদা রং। যেমন আলু এছাড়াও আছে পেঁয়াজ। তবে লাল পেঁয়াজও উপকারি। সাদা রং পেতে পারেন রসুন, ফুলকপি, মাশরুমেও। সাদায় থাকে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। আবার এগুলো খেলে রক্তে দূষণ কমে, হোয়াইট ব্লাড সেলের ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে। এমনকি কোষের মধ্যে সমস্যাও অনেকাংশে কমে। তাই মোটা হওয়ার ভয়ে আলু খাওয়া বন্ধ করবেন না।

বেগুনি বা নীল

নীল রংও কিন্তু সবজিতে ও ফলের মধ্যে পাওয়া যায়। যেমন ব্ল্যাকবেরি, ব্লুবেরি, প্লাম, কালো আঙুরের কিশমিশ, কালো জাম, বেগুন, বেগুনি ক্যাবেজ ইত্যাদি খেতে পারেন। নীল রঙে থাকা উপাদান লিভারের সমস্যা, রক্তচাপ কমায়, বার্ধক্য দূর করে। আবার হৃদযন্ত্রের রোগ কমাতে, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। বেরি দিয়ে ঘন শরবত বানাতে পারেন। কালো জাম শুধু খেতে পারেন। আবার সকালের নাস্তায় ওটসের সঙ্গে মিশিয়েও এগুলো খেতে পারেন। বেগুনের সবজি সকলেই তৈরি করতে পারে। আঙুর স্যালাদ বা শুধুও খেতে পারেন। চিকিৎসকের মতে, যেকোনো ফল বা শাক খাওয়ার আগে ভাল করে ধুয়ে নেয়া জরুরি। বিশেষ ক্ষেত্রে গরম পানিতেও ভিজিয়ে রাখতে পারেন। অতিরিক্ত রান্না করলে পুষ্টিগুণ কিছুটা নষ্ট হয়। ফলে হজমের জন্য যতটা জরুরি, ততটুকুই রান্না করুন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

twenty − 2 =