হুজুরই মুক্তিপণের লোভে তাকে আটকে গলাকেটে হত্যা করেন

3
546

আট বছরের শিশু মনির হোসেন মসজিদে গিয়েছিল ইমাম হাদিরের মক্তবে পড়তে। কিন্তু ওই হুজুরই (শিক্ষক) মুক্তিপণের লোভে তাকে আটকে গলাকেটে হত্যা করেন।

 

মৃত্যু নিশ্চিতের পরও শিশুটির দুটি হাত কাটেন। এরপর বস্তাভর্তি করে লুকিয়ে রাখেন মসজিদের সিঁড়ির নিচে। গ্রেপ্তারকৃত রাজধানীর ডেমরার ডগাইর নতুনপাড়ার নুর-ই-আয়েশা জামে মসজিদের ইমাম হাদির নিজেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে শিশুটিকে হত্যার নৃশংস ওই বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, প্রথমে মনিরের দুই পা বাধেন তিনি। এরপর ধারালো ছুরি দিয়ে প্রথমে বাচ্চাটির গলা ও পরে দুইটা হাতও কেটে ফেলেন। এরপর মরদেহ বস্তাবন্দি করা হয়। নিহত মনির রাজধানীর ডেমরার ডগাইর এলাকায় বাবা সাইদুল হক ও মা কল্পনা বেগমের সঙ্গে থাকতো। তাদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে।সে স্থানীয় নুরে মদিনা মাদ্রাসার শিশু শ্রেণির ছাত্র ছিল। রোববার সকালে মনিরকে আটকে রেখে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিলেন হাদির। শিশুটির পরিবার এক লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধও করেছিলো। কিন্তু পুরো টাকা দিতে দেরি হওয়ায় ওইদিনই শিশুটিকে হত্যা করেন তিনি। সারারাত বস্তাবন্দি মরদেহ লুকিয়ে রেখেছিলেন। পরদিন সোমবার সকালে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজনের হাতে ধরা পড়েন ইমাম হাদির। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাকে আটক ও মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ইমাম হাদিরের স্ত্রী, মাদ্রাসার এক নারী শিক্ষকসহ আরও চারজনকেও আটক করেছে পুলিশ। নিহত শিশু মনির হোসেনের চাচা মাহবুবুর রহমান জানান, মনির প্রতিদিনের মতো ঘটনার দিন সকাল সাতটায় মসজিদের মক্তবে ইমাম হাদিরের কাছে কুরআন পড়তে গিয়েছিল। কিন্তু সব শিশুই ছুটির পর মক্তব থেকে বাসায় চলে গেলেও মনির ফেরেনি।অনেক খোঁজাখুঁজির মধ্যেই বিকালে একটি ফোন আসে শিশুটির পরিবারের কাছে। ফোনের অন্য প্রান্তে থাকা ব্যক্তি বলেন, ‘বাচ্চা চাইলে তিন লাখ টাকা সন্ধ্যার মধ্যে যদি মসজিদের খাটিয়ার মধ্যে রেখে না যাও, তাহলে সকালে ছেলের লাশ পাবে।’ মাহবুবুর রহমান আরো জানান, মনিরের বাবা-মা কোনোমতে এক লাখ ২০ হাজার টাকা জোগাড় করে ঠিক মসজিদের খাটিয়ার ওপর রেখে আসেন। কিন্তু পরদিন সকালেও তাদের সন্তান আর বাসায় ফিরে আসেনি। এর মধ্যে এলাকায় মানুষের কাছে টাকা দেওয়ার কথা জানাজানি হলে সবার সন্দেহ হয় হুজুরের (ইমাম হাদির) ওপর। সময় গড়াতে থাকলে সন্দেহও বাড়তে থাকে এলাকাবাসীর। এলাকাবাসী জানান, দুপুরে ডেমরা থানা পুলিশকে ফোন দিয়ে ঘটনা জানালে তারা এসে হুজুরকে ধমক দিয়ে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেই তিনি ভয় পেয়ে আদায় করা টাকাসহ দৌঁড় দেন। এরপর জনতা তাকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে হাদিরকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি স্বীকার করেন, শিশুটি তার কাছে। আরও জোরালো চাপ দেওয়া হলে বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে তিনি জানান, শিশুটি মসজিদের তৃতীয়তলার সিঁড়ির নিচে বস্তাবন্দি অবস্থায় রয়েছে। সবাই গিয়ে দ্রুত উদ্ধার করলেও মনির আর বেঁচে ছিলো না। ময়নাতদন্তের জন্য শিশু মনিরের মরদেহ সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিদ্দিকুর রহমান ও এসআই নাজমুল হাসান মঙ্গলবার বলেন, `আগের রাতে থানায় করা নিহত মনিরের পরিবারের সাধারণ ডায়রি (জিডি) এখন হত্যা মামলায় রূপ নেবে। হাদির কেন শিশুটিকে হত্যা করলেন, সেটি আমরা খতিয়ে দেখছি। শুধু কি টাকার জন্যই খুন করেছেন, নাকি অন্য কোনো বিষয় রয়েছে, তা মামলার তদন্তে বের হয়ে আসবে।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

two × one =