সাবধান: আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের আবাসন মেলা প্রতারনার আখড়া

1
2122

মো: আহসানউল্লাহ হাসান: প্লট বা ফ্ল্যাট ব্যবসায় প্রতারনার শীর্ষে অবস্থানকারী আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ তাদের ধানমন্ডি কার্যালয়ে আবাসন মেলা চালু করে বিভিন্ন অফার আর গিফট নিয়ে গ্রাহকদের প্রতারনার ফাঁদে পেতে বসেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারী খাস জমি ও নিরহী জনসাধারনের জমি জবরদখল করে জাল দলিল বানিয়ে গ্রাহকের নিকট তা অধিকমুল্যে বিক্রয় করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।


গ্রাহকদের প্রতি সচেতন নাগরিকদের অনুরোধ তারা যেন আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের নিকট থেকে প্লট বা ফ্ল্যাট কেনার আগে ভালো করে জমির কাগজপত্র দেখে শুনে ক্রয় করে। তানাহলে সর্বস্ব হারিয়ে চোখের জল ফেলানো ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। লোভে পড়ে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের নিকট থেকে প্লট কিনলে প্রতারনার শিকার হয়ে আজীবন নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতেই হবে। কারন আমিন মোহাম্মদই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশী খাস জমি দখল করে ভুয়া রেজিষ্টারের মাধ্যমে সাব-কবলা জাল দলিল বানিয়েছে। কেউ চোখে দেখলে বুঝতেই পারবে না এগুলো জাল দলিল। অথচ এই সব দলিল দেখিয়ে গ্রাহকের কাছে প্লট বিক্রি করে যাচ্ছে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ। তাই দেখে শুনে বুঝে আমিন মোহাম্মদের ফাঁদে পা দেবেন। নতুবা কান্না ছাড়া কিছুই করার থাকবে না।

আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের সরকারি জমি দখলের চিত্র

প্রশাসনের নিরবতায় আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের দখলে শত শত একর সরকারী জমি। কোন কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না ভুমি দস্যু আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের জমি দখলের মহোৎসব। মানুষের পৈত্তিক জমি দখলের পাশাপাশি সরকারের খাস জমিও দখল করে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ভুমি দস্যু আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ। দেশে যেন কোন আইনকানুন বলতে কিছুই নেই। সবই কেমন যেন অসহায় আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের রামরাজত্বের কাছে। আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ আশুলিয়া মডেল টাউনের মধ্যে সরকারি খাস জমি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে বলে লিজী ভূক্তভোগী ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি সংস্কার বোর্ডের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির নিকট ৪ (চার) একর সরকারি জমি জালিয়াতির মাধ্যমে বিক্রি করেছে বলে জানা গেছে।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, আশুলিয়া মডেল টাউন এর প্লট জায়গা ক্রয় করে এখনও দলিল ও দখল বুঝে পায়নি গ্রাহকরা । মালেক জোমাদ্দার নামে এক গ্রাহক আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের নামে অভিযোগ করে বলেন, তিনিও আমিন মোহাম্মদ গ্রপের কাছে থেকে আশুলিয়া মডেল টাউনের জমি কিনে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, জমির দখল এবং দলিল বুঝিয়ে দেবে বলে ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন তালবাহানা করে কালক্ষেপন করছেন তারা। আশুলিয়া মডেল টাউনের প্রতারণার ঘটনা এখানেই থেমে নেই, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের এই প্রতারণা চক্রটি বিশাল আকার ধারন করেছে। সৈয়দ নুরুল হুদা সহ মোট ২১ জন এর পৃথক পৃথক আবেদনের প্রেক্ষিতে দখল থাকায় বিভিন্ন সময় ভূমি মন্ত্রণালয়, ভূমি সংস্কার বোর্ড কর্তৃক বিভিন্ন তারিখে মোট ৩ একর জমি লিজ প্রদান করেন। তিন একর জমির কাতে এক একর জমি বরাদ্দের স্মারক নং- ৩১.০২.০০০০.০৩৪.২৬.০২৯.১৮-৩৩৭ তারিখ: ০৮/০৭/২০১৮ পত্র দ্বারা লিজ বরাদ্দের অনুমতি প্রাপ্ত হয়ে তারা আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লি: মতিঝিল কর্পোরেট শাখার পে অর্ডার নং-৩২৭৬১১০ তারিখ: ১২/০৭/২০১৮ এর মাধ্যমে টাকা জমা দেয় বিধায় বই নং-১১৬, রশিদ নং- ১১৫৪৭, ১১৫৪৮, ১১৫৪৯ এবং ১১৫৫০ নং লিজ মানি পরিশোধের রশিদ ভূমি সংস্কার বোর্ড প্রদান করে। স্মারক নং- ৩২.০২.০০০০.০৩৪.৩৪.২৬.০২৯.১৮-৩৬৭/৬৮/৩৬৯/৩৭০ তারিখ: ১৬/০৭/২০১৮ নং পৃথক পৃথক চারটি দলিল সম্পাদন করে দেয়। লিজসূত্রে প্রাপ্ত দখলীয় ভূমির তফসিল- জেলা: ঢাকা, থানা: সাভার, ৬২৩ নং মৌজা খাগান, সি এস খতিয়ান নং-০১, বি এস খতিয়ান নং-৩, সি এস দাগ নং- ১৪৪- চূড়ান্ত প্রকাশিত হাল (বি এস) দাগ নং- ৯৩২, ৯৩৩, ৯৩৪, ৯৩৫, ৯৩৬, ৯৩৭, ৯৩৯, ৯৪০, ৯৪১, ৯১২, ৯১১ এবং সি এস দাগ নং- ১৪৮- চূড়ান্ত প্রকাশিত হাল (বি এস) দাগ নং- ৯৪০, ৯৪১, ৯৪২, ৯৪৩, ৯৪৪, ৯৪৫ এবং সি এস দাগ নং- ১৪২- চূড়ান্ত প্রকাশিত হাল (বি এস) দাগ নং- ৮৯০, ৮৯১, ৮৯২, ৮৯৩, ৮৯৪, ৮৯৫, ৮৯৬, ৮৯৭, ৮৯৮, ৮৯৯, ৯০০, ৯০১, ৯০২, ৯০৩, ৯০৪, ৯০৫, ১১১১, ১১১২, ১১১৪, ১১১৫, ১১১৬, ১১১৭, ১১১৮, ১১১৯, ১১২০, ১১২১, ১১২২, ১১২৩। চৌহদ্দী: খাগান বাস স্ট্যান্ড থেকে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার সরকারি রাস্তা সংলগ্ন মা মঞ্জিলের সামনের রাস্তার দুই পাশের অংশ।


সৈয়দ নুরুল হুদা সহ লিজ গ্রহণকারী কয়েকজন ১৬/০৭/২০১৮ তারিখ লিজ প্রাপ্ত জমিতে গেলে, লিজ প্রাপ্তির খবর জানাজানি হওয়ায় লিজকৃত জমিতে এসে আশুলিয়া মডেল টাউন ওরফে আমিন মোহাম্মদ ল্যান্ডস্ ডেভেলপমেন্ট লি: নামক কোম্পানির অজ্ঞাতনামা কতিপয় সিকিউরিটি বাহিনী বন বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তাদেরকে সাথে নিয়ে এসে তাকে ভয় ভীতি ও হুমকি-ধামকি প্রদর্শন করে। এসময় সন্ত্রাসীরা বলেন, ‘আমরা তোদের বৈধ লিজকৃত সম্পত্তি হতে উচ্ছেদ করবো। জোরপূর্বক বন বিভাগের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সহযোগিতায় লিজ গ্রহণকারীদের মারধর করে সম্পত্তি হতে বের করে দিয়ে অবৈধভাবে তারা স্থাপনা নির্মাণ করবে বলেও পায়তারা চালায়’। এ বিষয়ে জিডিতে লিজ গ্রহণকারীদের পক্ষে সৈয়দ নুরুল হুদা এবং শহিদল্লাহ সরকার উল্লেখ করেন, ‘সরকারের কাছ থেকে সম্পত্তি লিজ গ্রহণ করে এখন নিজেদের জান মালের অপূরণীয় ক্ষতি হবার শঙ্কার মধ্যদিয়ে দিনাতিপাত করছি। এমনকি লিজকৃত জমিও বেদখল হবার আশঙ্কা বিদ্যমান রয়েছে।’ এই বিষয়ে সাভার মডেল থানায় শহিদল্লাহ সরকার আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডাইরী করেন যার নং-১০৩৪, তারিখ: ২০/০২/২০১৮। একই বিষয়ে সৈয়দ নরুƒল হুদা সাভার মডেল থানায় একটি ডাইরী করার আবেদন করলে আবেদনটি ঝুলন্ত অবস্থায় আছে বিধায় উক্ত বিষয় নিয়ে সৈয়দ নুরুল হুদা বাদী হয়ে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর আবেদন করে অনুলিপি দিয়েছেন পুলিশ সুপার, ঢাকাকে। এই পর্যায়ে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ হতে গাজী আহমদ উল্লাহ মিডিয়া প্রধান যার মোবাইল নং- ০১৭১৩০৬৪৩৪৭ এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কোন সদোত্তর না দিয়ে পাশ কাটিয়ে যান। তিনি সরকারি জমি আশুলিয়া মডেল টাউনের মধ্যে জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন কি না এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য ২ (দুই) দিনের সময় নেন। মূলত আশুলিয়া মডেল টাউনের অধিকাংশ জায়গা সি এস এবং বি এস রেকর্ড মূলে মালিক হচ্ছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে- ভূমি মন্ত্রণালয়, ভূমি সংস্কার বোর্ড, কোর্ট অব ওয়ার্ডস, ঢাকা নওয়াব এস্টেট-১৪১-১৪৩ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০। সরকার মালিক হবার পরেও আশুলিয়া মডেল টাউন জোর জবরদস্তি করে সরকারের খাস সম্পত্তি দখল করে বসে আছেন। এলাকার সাধারণ জনগণ তার ভয়ে সদা তটস্থ্য, তার নাকি টাকা দিয়ে পালা গুন্ডা বাহিনী ও সিকিউরিটি বাহিনী রয়েছে। সুত্র জানায়, প্রকৃত বিচারে আশুলিয়া মডেল টাউন দীর্ঘদিন যাবৎ সরকারি সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে। আশুলিয়া মডেল টাউন বিরুদ্ধে ১৯ জুলাই ২০১৮ তারিখে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিভিন্ন নাম্বার হতে ফোনে এবং লোক মারফত সম্পাদককে ভয়-ভীতি দেখিয়ে বলা হয়- ‘‘ আশুলিয়া মডেল টাউন নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে অথবা মিথ্যে মামলায় ফাসিয়ে জেলের ভাত খাওয়ানো হবে।’’ এ বিষয়ে নিরুপায় ও বাধ্য হয়ে সৈয়দ নুরুল হুদা শেরে বাংলা নগর থানায় একটি সাধারণ ডাইরী করেন যার নং- ১৮৩৪, তারিখ: ২৭/০৭/২০১৮।


অপর দিকে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর ২৭/০৭/২০১৮ তারিখে আশুলিয়া মডেল টাউন, ভূমি মন্ত্রণালয়, ভূমি সংস্কার বোর্ড এর নামে সি এস ১৪২ দাগের চূড়ান্ত প্রকাশিত হাল (বি এস) খতিয়ান নং-৩, ৯৩৪ ও ১১১৮ দাগের রাস্তার দু’পাশে দুটি সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়েছে, সেখানে লেখা রয়েছে ‘‘আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের খরিদকৃত সম্পত্তি’’। স্থানীয়রা জানায়, টাকার জোরে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ রাতকে দিন আর দিনকে রাত বানিয়ে সরকারি সম্পত্তি দখল করে রেখেছে। সরকারি সম্পত্তিতে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে বহাল তবিয়তে আছেন। এ বিষয়ে প্রশাসন কেন নর্বিকার প্রশ্ন জনমনে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

11 − two =