ধূমপান ফুসফুসের ক্যানসারের একমাত্র কারণ

0
909

ফুসফুসের ক্যানসার নিয়ে আমাদের সবার মনেই অনেক রকম ধারণা আছে। কিন্তু এই কথাগুলো কি আসলেই সত্যি? চলুন, আজ ফুসফুসের ক্যানসার নিয়ে কিছু চিরাচরিত মিথ বা ভুল ধারণা নিয়ে জেনে নেওয়া যাক-

১। অনেকদিন ধূমপান করলে সেটা ছেড়ে দেওয়ার কোনো উপকারিতা নেই-

কথাটি একেবারেই ভুল। আপনি যতক্ষণ ধূমপান করবেন, ততক্ষণ সেটি আপনার শরীরে ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলবে। আজ যদি আপনি ধূমপান ছেড়ে দেন, তাহলে অন্যদের চাইতে আপনার ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনাও কমে আসবে। তাই, এটা একেবারেই বলাটা ভুল যে, আপনি অনেক বছর ধরে ধূমপান করছেন বিধায় এখন আর সেটা থেকে বিরত থেকে কোনো লাভ নেই।

২। কিছু সিগারেট তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষতিকর-

সিগারেট সবসময়ই একইরকম ক্ষতিকর। আপনি যে ব্র্যান্ডের বা যেমন সিগারেটই খান না কেন। বিশেষ করে, মেনথল আছে এমন সিগারেট ছেড়ে দেওয়া তুলনামূলকভাবে বেশি কঠিন হয়। এছাড়া, এই সিগারেটের মাধ্যমে মানুষ ধোঁয়া গ্রহণ করে খুব দ্রুত। তাই, ক্ষতিটাও বেড়ে যায়।

৩। গাঁজা নয়, সিগারেটেই ক্যানসার হয়-

অনেকেই এই ধারণার ওপরে ভিত্তি করে গাঁজা সেবন করে থাকেন। তারা ভাবেন, গাঁজা সেবন করলে সিগারেট কম খাওয়া হবে। ফলে ক্ষতি কম হবে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, সিগারেট ও গাঁজা যারা একসাথে খান তাদের ক্ষেত্রে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি থাকে।

৪। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ধূমপানের ক্ষতি কমিয়ে দেয়-

গবেষনায় দেখা গিয়েছে, যারা বিটা-ক্যারোটিন গ্রহণ করেন তাদের মধ্যে ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব আরও বেশি পড়ে। তবে, চেষ্টা করুন ফল থেকে পাওয়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নিতে। এটি আমাদের শরীরের জন্য খুব বেশি ক্ষতিকর নয়।

৫। পাইপ আর সিগারেটের প্রভাব আলাদা-

একেবারেই নয়। এই দুইটি উপায়েই ক্ষতিকারক ধোঁয়া আপনার ফুসফুসে যাচ্ছে। তাই, আপনি পাইপের মাধ্যমে ধূমপান করেন কিংবা সিগারেটের মাধ্যমে, প্রভাবটা একই থাকে। দুইভাবেই আপনার ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।

৬। ধূমপান ফুসফুসের ক্যানসারের একমাত্র কারণ-

অনেকেই ভেবে থাকেন যে, শুধু ধূমপানের মাধ্যমেই ফুসফুসের ক্যানসার হয়ে থাকে। ব্যাপারটি একেবারেই ঠিক নয়। মোট দুইটি কারণে ফুসফুসের ক্যানসার হয়ে থাকে। প্রথমটি ক্যানসার হলেও, পরের কারণটি হলো র‍্যাডন নামক এক ধরনের গন্ধহীন রেডিওঅ্যাক্টিভ গ্যাস। পাথর ও মাটি থেকে জন্মানো এই গ্যাস আপনার ঘর, আপনার বিল্ডিংয়েই লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই, ফুসফুসের ক্যানসার থেকে দূরে থাকতে ঘর পরিষ্কার রাখুন এবং মাস্ক পরিধান করুন।

৭। ট্যালকম পাউডারের গন্ধ নিলে ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে-

এমন ধারণা থাকলেও এই ধারণাটিকে সত্যি ভাবার মতো কোনো প্রমাণ পাননি গবেষকেরা। যদিও অ্যাসবেস্টোস এবং ভিনাইল ক্লোরিন নিয়ে কাজ করেন যারা তাদের মধ্যে এই অসুখ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি আছে, এমনটাই ভাবছেন তারা।

৮। ক্যানসার হয়ে গেলে ধূমপান ছেড়ে বিশেষ লাভ নেই-

ব্যাপারটি মোটেও ঠিক নয়। ক্যানসার পরবর্তী চিকিৎসায় ইতিবাচক ফলাফল পাওয়ার জন্য ধূমপান ছাড়াটা অনেক উপকারী। এতে করে সুস্থতা পাওয়া ও সার্জারি করা আরও বেশি সহজ হয়।

৯। শরীরচর্চা ক্যানসার কমাতে সাহায্য করে না-

শরীরচর্চা সবসময় আমাদের অসুখ থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। এটির মাধ্যমে আমাদের হৃদপিণ্ড, ফুসফুস ও অন্যান্য অঙ্গ সুস্থ থাকে। ফলে যেকোন অসুস্থতারই মোকাবিলা করা যায় সহজে।

১০। বায়ু দূষণের সাথে ফুসফুসের ক্যানসারের কোন যোগাযোগ নেই-

এটা ঠিক যে ধূমপানের চাইতে এক্ষেত্রে বায়ু দূষণের ভূমিকা অনেক কম। কিন্তু তবুও, আমাদের ফুসফুসের ক্যানসারের পেছনে যে বায়ু দূষণের কোনো হাত নেই তা কিন্তু নয়।

ধারণা সবসময় মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। এই ধারণা ভুল হতে পারে, আবার সঠিকও হতে পারে। তাই, শুধু ক্যানসার নয়, অন্যান্য যেকোনো ব্যাপারে কোনো ধারণাকে মেনে নেওয়ার আগে সেটি সঠিক কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নিন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

four × three =