স্বামী এবং শাশুড়ির নির্যাতনের শিকার এক গৃহবধূ

0
704

বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক এনে দিতে না পারায় স্বামী এবং শাশুড়ির নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সুলতানা আক্তার (২১) নামে এক গৃহবধূ। স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকেরা নির্মমভাবে নির্যাতন করে তার হাত ভেঙে দিয়েছেন। তিনি জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল (পঙ্গু হাসপাতাল) থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

সুলতানা গার্মেন্টস কর্মী সাদেকুল ইসলামের (সোহাগ) স্ত্রী। তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ থানার  শরিফুল ইসলাম মেয়ে।

সম্প্রতি পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় কথা হয় গৃহবধূ সুলতানার সঙ্গে। তিনি জানান, গত ২০১৬ সালে সুলতানার সাথে গার্মেন্টস কর্মী সাদেকুল ইসলাম (সোহাগ) পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। এর কয়েক মাসের মধ্যেই সাদেকুল গার্মেন্টসের চাকরি ছেড়ে দিয়ে গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জে চলে যান। বাড়িতে গিয়ে অভাবের সংসারে কোনো কাজ না করে, যে কোনো প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে সুলতানাকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসাতে বলেন। সুলতানার গাড়ি চালক দরিদ্র বাবা শরিফুল ইসলাম কয়েক দফায় জামাইকে বেশ কিছু টাকাও দেন। কিন্তু ধীরে ধীরে সাদেকুলের চাহিদা বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ৩০ হাজর টাকার দাবি পূরণে অস্বীকৃতি জানালে স্বামী সোহাগ ও শাশুড়ি শেফালী বেগম ঘরের মধ্যে আাটকে মারধর করলে হাত ভেঙে যায় সুলতানার। ওই সময়ে চিকিৎসা না করালেও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ায় পীরগঞ্জের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহাবুবুর রহমানের কাছে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান সুলতানার স্বামী।

সুলতানা আরো জানান, সে সময় সুলতানার বাবা শরিফুল ইসলাম মেয়ের উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ঢাকায় নিয়ে আসতে গেলে তারা খারাপ ব্যবহার করে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। দীর্ঘ একমাসের চিকিৎসায় কোনো উন্নতি না হলে ডা. মাহবুবুর রহমান অপারগতা প্রকাশ করেন। এ সময় সাদেকুল আর কোনো চিকিৎসা করাতে পারবে জানিয়ে দিলে সুলতানা নিরুপায় হয়ে বাবাকে জানায়। সুলতানার বাবা মেয়েকে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে পীরগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর পুলিশ সুলতানাকে উদ্ধার করে এবং সাদেকুলকে আটক করে। পরে পুলিশ সুলতানার চিকিৎসার জন্য তার বাবার কাছে হস্তান্তর করে এবং মুচলেকা নিয়ে সোহাগকে ছেড়ে দেয়।

এ বিষয়ে সুলতানার বাবা শরিফুল জানান, এ সময় সুলতানাকে নিয়ে প্রথমে রংপুরের একটি বেসরকারি হাসাপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন। সেই অনুযায়ী গত ১৯ মে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সুলতানাকে। সেখানে তার ডান হাতে একটি অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, সুলতানার স্বামী সাদেকুল কিংবা তার পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ এখনো সুলতানার কোনো খোঁজ খবর নেয়নি। এমনকি সুলতানার দুই বছরের শিশু সন্তানেরও খোঁজ নেয়নি সাদেকুল।

শরিফুল আরো জানান, অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার জন্য দ্রুত ঢাকা চলে আসায় সেই মুহূর্তে মামলা করতে পারেননি। পরবর্তীতে মেয়ের চিকিৎসা শেষে হাসাপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাসায় রেখে পীরগঞ্জ থানায় জামাই সাদেকুলের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাদেকুল ইসলাম (সোহাগ)। তিনি বলেন, সুলতানার উপর কোনো ধরনের নির্যাতন করা হয়নি। বরং সুলতানার বাবা আমাকে ঢাকায় নিয়ে অপমান করেছেন।

এদিকে গৃহবধূ সুলতানা আক্তারের ওপর নির্যাতনের কথা জানিয়ে পীরগঞ্জ থানা পুলিশের এসআই আকবর হোসেন জানান, তাদের পারিবারিক সমস্যার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ গিয়ে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nineteen + 20 =