হবিগঞ্জের বিআরটিএ’র কার্যালয় যেন ঘুষ বাণিজ্যের স্বর্গরাজ্য :: অসাধু কর্মকর্তারা, কর্মচারীরা নিজস্ব দালাল চক্র দিয়ে মাসে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে

0
1145

বিশেষ প্রতিনিধি হবিগঞ্জ ॥ ঘুষ দিলেই মেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং গাড়ির কাগজপত্র। আর না দিলে পরিকল্পিত ভাবে ড্রাইভিং পরীক্ষায় ফেল করানো হয়। প্রতিনিয়ত এমন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে হবিগঞ্জ বিআরটিএ (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি) কার্যালয়ে গাড়ির কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসা সাধারণ মানুষকে। হবিগঞ্জ বিআরটিএ কার্যালয়ের দুর্নীতি ঘুষখোরদের হাতে যেন জিম্মি হয়ে পড়েছে  ।

আর এরসবই হচ্ছে খোদ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এর নিচ তলায় অবস্থিত হবিগঞ্জ জেলা বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালকের কার্যালয়ে।সম্প্রতি জানা যায় যে, সারা দেশের ন্যায় আবারও হবিগঞ্জ জেলা জুড়ে জেলার ট্রাফিক এবং ৯টি থানারই পুলিশ, গাড়ির বৈধ কাগজপত্র এবং চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স এর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। আর বৈধ কাগজপত্র বিহীন গাড়ি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় জেলার বিভিন্ন থানায় প্রায় হাজার খানেক মামলাও দায়ের করে পুলিশ।

আর এইসব বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দেখা যায়, এসব দালালদের পরোক্ষ ভাবে তাদের সাথে জড়িত বিআরটিএ’র অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এমন কী অফিস পিয়ন পর্যন্ত।এ মামলা থেকে বাঁচতে গাড়ি ছাড়াতে সবাই ছুটে যাচ্ছে হবিগঞ্জ জেলা বিআরটিএর কার্যালয়ে। এ সময়ের ফায়দা লুটতে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে তারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘুষ বাণিজ্যের ও দুর্নীতির মাধ্যমে রমরমা দোকান ব্যবসা খুলে বসেছেন। এতে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন গাড়ির কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসা মানুষ।

সরজমিনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বিআরটিএ কার্যালয়ে মোটরসাইকেল ও হালকা যানের ড্রাইভিং লাইসেন্সের রানার এর জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে প্রথমে জমা ৫৩৮ টাকা দিতে হয়। এরপর ড্রাইভিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আরো ২৩০০শ’ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হয়। সব মিলিয়ে গ্রাহকের ২৮৩৮ টাকা বৈধ ভাবে খরচ হওয়ার কথা। (বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার ১০% যে বারানো বাড়িয়েছেন” হিসাব ব্যতীত)।

কিন্তু সরকারী নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে, তার স্থলে একজন গ্রাহককে দিতে হচ্ছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এ তো গেল বৈধভাবে পরীক্ষায় পাস করার কথা। পরীক্ষায় ফেল করে কেউ যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে চায় সে ক্ষেত্রে একজন গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।

এখন আসা যাক গাড়ির কাগজপত্রের কথায়। প্রতিটি সিএনজির লাইসেন্স, রোড পারমিট ও গাড়ির নাম্বার প্লেটের জন্য সরকারি নির্দেশনা মতে জমা দিতে হয় ১২৩৫০ টাকা। সে ক্ষেত্রে একজন মালিককে গুনতে হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকা। যা সরকার নির্ধারিত ফি’র প্রায় ৪ গুণ। এছাড়া একটি মাইক্রোবাস, কার ও নোহা গাড়ির জন্য জমা দিতে ১লাখ টাকা হয়ে যায়।

যা নির্ভর করে গাড়ির ক্রয় মূল্যের ওপর। কিন্তু হবিগঞ্জ বিআরটিএ কার্যালয়ে দিতে হয় দেড় থেকে পৌনে দুই লাখ টাকা। এছাড়া প্রতি মাসে ২ বার ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষা নেয়া হয়। প্রতিবারেই দেড় থেকে দুই শতাধিক প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে থাকেন। প্রতি মাসে গড়ে সাড়ে ৩শ’ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করে হবিগঞ্জ বিআরটিএ অফিস। প্রতিটি লাইসেন্স থেকে বিআরটিএ’র এই দুর্নীতিবাজার ৪থেকে

৬ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত আদায় করেন। হবিগঞ্জ বিআরটিএ কার্যালয়ে এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রতি মাসে গড়ে হবিগঞ্জ জেলায় ২শ থেকে ৩শ’ সিএনজির কাগজপত্রের আবেদন জমা পড়ে। এ থেকে প্রতি মাসে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালালদের দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কয়েক কোটি টাকা। আর তাদের এসব অবৈধ টাকার একটি বড় হাতে ব্যক্তিদের পকেটে।

এ জন্য বিআরটির এর অফিসের উচ্চ-মান সহকারী মোঃ মতিউর রহমান, অফিস সহকারী (ফিটনেস) চন্দন মনি পাল ও অফিস সহকারী হিরা মিয়া সবই তাদের সম্পৃক্ততায় নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে বিশাল ৩টি সিন্ডিকেট। তাদের ভয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না।

তাদের সঙ্গে সহযোগিতায় রয়েছে টিপু মিয়া, পান্জু চৌধুরী, শফিক, এমদাদ, হারুন, মুকুল ও সাহিদসহ আরো ৮/১০ জন বহিরাগত দালাল। তাদের সহযোগিতা ছাড়া বিআরটিএ কার্যালয়ে গ্রাহকরা তাদের কাজে গেলেও তারা কাজ করতে পারেন না। আর কাগজ পত্র জমা দিলেও সে কাগজ কখন বা এ বছরের মধ্যে ও আসবে কিনা তা নিয়ে থাকে অনেক সংশয় আদেয় পাবে কি এ ব্যাপার কিছুই কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারে না।

তবে এসব বিষয় সরাসরি অস্বীকার করেছেন উচ্চ-মান সহকারী মোঃ মতিউর রহমান আর অফিস সহকারী চন্দন মনি পাল  বলেন, আমাদের সঙ্গে কোনো দালালের সম্পর্ক নেই। আমরা এই নামের কাউকে চিনি না। তারা এসব বললে কি হবে খোজ-খবর নিয়ে দেখা যায়- প্রশ্ন থেকেই যায় এই দুটা মানুষ নিজেই অফিসের হর্তাকর্তা বলেই সবাই চিনে মোঃ মতিউর রহমান আর চন্দন মনি পাল, কি ভাবে আজ নামে বেনামে কোটি টাকার মালিক হয়েছে তা সবচেয়ে বড় একটি প্রশ্ন হবিগঞ্জ জেলাবাসীর কাছে ?

হবিগঞ্জ জেলা বিআরটিএ’র ইন্সপেক্টর শরফুদ্দিন আকন্দ জানান, এত বড় দুর্নীতি হচ্ছে এই বিষয়টি আমি জানতাম না। অবশ্যই আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ   চেষ্টা করে তাদের সম্পৃক্ত পেলে আমি আমার পক্ষ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান অফিসে বারবার গিয়ে পাওয়া যায়নি। পরে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন আমি ঐ সময়ের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দেখব। আমি তো এসব বিষয়ে কিছুই জানি না, এ কথা বলে ফোন কেটে দেন। উক্ত বিষয়ের বিষয়টি নিয়ে ঢাকা জাতীয় সাপ্তাহিক অপরাধ বিচিত্রা পত্রিকার সম্পাদক ও জাতীয় ভেজাল প্রতিরোধ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মহোদয় গত ১০/০৮/২০১৯ইং তারিখে হবিগঞ্জ বরাবরে একখানা চিঠি ইস্যু করেন। উক্ত বিষয়টির বিষয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।

কিছুদিন যাবৎ ঘটনাস্থলে ও আশেপাশের পারিপার্শ্বিকতায় জানা যায় যে, ইতিমধ্যে যাদের নাম আসছে তাদের মধ্যে ১। মোঃ মতিউর রহমান, উচ্চমান সহকারী, বিআরটিএ হবিগঞ্জ। ২। মোঃ নাসির উদ্দিন, উচ্চমান সহকারী বিআরটিএ, হবিগঞ্জ, ৩। চন্দন মনি পাল, বিআরটিএ, হবিগঞ্জ, ৪। মোঃ পাঞ্জু মিয়া, বিআরটিএ, হবিগঞ্জ, ৫। মোঃ টিপু মিয়া, বিআরটিএ, হবিগঞ্জ, ৬। চন্দন মনি পালের সহকারী মোঃ দুলাল মিয়া, বিআরটিএ, হবিগঞ্জ। তাদের মধ্যে অনেকেই কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় যে, হবিগঞ্জ বিআরটিএ তে যেকোন ধরনের কাজ করিতে গেলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করিতে হয়।

নতুবা কোন কাজেরই সফলতা পাওয়া যায় না। তাদের কোন কোন লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করিলে তারা ধরা ছুয়ার বাহিরে থাকে। তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাননীয় চেয়ারম্যানের ও সম্পাদকের মাধ্যমে সুপারিশ করা হইবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

one × 2 =