সম্রাট নিজে সরাসরিভাবে এসব ব্যবসা পরিচালনা করতেন না

0
609

যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট ও  সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার হাত ধরে ২০১৬ সালে ঢাকায় শুরু হয় ক্যাসিনো কালচার।প্রথমে মতিঝিল পাড়ার স্পোর্টস ক্লাবগুলোকে টার্গেট করেন সম্রাট-খালেদ। সেসব ক্লাবগুলোতে আগে থেকেই হাউজির (জুয়া) আসর বসতো, সেগুলোকেই ক্যাসিনোতে পরিণত করেন যুবলীগের এই দুই নেতা।

গ্রেফতার হওয়ার পর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে যুবলীগ নেতা খালেদ এসব তথ্য র‌্যাবকে জানিয়েছেন বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

খালেদ জানান, ঢাকায় ক্যাসিনো কালচারের শুরু সম্রাটের হাত ধরে। সম্রাট নিজে সরাসরিভাবে এসব ব্যবসা পরিচালনা করতেন না। তার হয়ে যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা এসব ব্যবসার দেখাশোনা করতেন।

নেপাল থেকে ক্যাসিনো এক্সপার্ট আনেন সম্রাট:

জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ বলেছেন, সম্রাট গত কয়েক বছরে ক্যাসিনো কারবার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে নেপাল থেকে এক্সপার্ট এনেছিলেন। তাদের মধ্যে ১১ জন ঢাকার ক্যাসিনো কারবার নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করতেন। সম্রাট সিঙ্গাপুর গিয়ে ক্যাসিনোয় জুয়া খেলায় অংশ নিতেন। সে সময় তিনি দেশের অনেক টাকা পাচার করেছেন।

সম্রাটের হয়ে যারা চালাতেন ক্যাসিনো:

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্রাটের হয়ে ফকিরাপুলের ইয়ংমেন্স ক্লাবের ক্যাসিনোর দেখাশোনা করতেন খালেদ মাহমুদ নিজে। এছাড়া আরামবাগ, দিলকুশা ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ করতেন সম্রাটের ঘনিষ্ঠ সহযোগী দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মোমিনুল হক সাঈদ। তিনি কমপক্ষে পাঁচটি ক্লাবের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।

আর ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনো চালান সম্রাটের আরেক বিশ্বস্ত সহযোগী রশিদুল হক। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কায়সার এই ক্লাবের প্রেসিডেন্ট।

জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাটের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের যুবলীগ সহসভাপতি আরমান, সহসভাপতি সোহরাব হোসেন স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল, সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদ, সহসভাপতি মুরসালিন, মনির হোসেন, মনা, রানা, শফি মনির হোসেনসহ আরো অনেকের নাম বলেছেন খালেদ। এরা সম্রাটের হয়ে ক্যাসিনো কারবারসহ টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন।

এছাড়াও ক্যাসিনো পরিচালনায় সাহায্য করা পুলিশের বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার নাম বলেছেন খালেদ।

ক্যাসিনোর বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় অবৈধ জুয়ার আড্ডা বা কোনো ধরনের ক্যাসিনো পরিচালনা করতে দেয়া হবে না। এসবের নেপথ্যে যত প্রভাবশালীই জড়িত থাকুক না কেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশ কঠোর হবে।

ঢাকায় ক্যাসিনোগুলো চলার সময় পুলিশের কোনো সহযোগিতা ছিল কি না তা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যদি কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান কমিশনার।

নিজ কার্যালয়ে পাহারায় সম্রাট:

ক্যাসিনো নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হওয়ার পর থেকে কাকরাইলের রাজমণি সিনেমা হলের সামনে ভূঁইয়া ম্যানশনে নিজ কার্যালয়ে পাহারায় রয়েছেন যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি সম্রাট। তার পাহারায় রয়েছে কয়েকশ নেতাকর্মী।

রাত যত গভীর হয়, সম্রাটের অফিসে কর্মীদের আনাগোনা তত বাড়তে থাকে। গত তিন দিন ধরে এসব কর্মীরাই সম্রাটকে আগলে রেখেছে। খালেদকে গ্রেফতার ও ক্যাসিনো বাণিজ্যে সম্রাটের নাম আসার পর থেকে গত তিনদিন ধরে কার্যালয়েই বসে আছেন এই যুব নেতা।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

6 + four =