বরিশালে প্যানেল মেয়রের ক্লাবে জুয়ার সরঞ্জাম-মদ

0
523

বরিশাল নগরীর দুটি অভিজাত ক্লাবসহ বেশ কয়েকটি ক্লাবে নিয়মিত জুয়ার আসর বসতো। এর মধ্যে কয়েকটি ক্লাবের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য বেচাকেনার অভিযোগও রয়েছে। অভিজাত দুটি ক্লাবের দায়িত্বে আছেন প্রভাবশালীরা। অন্য ক্লাবগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা।

দীর্ঘদিন ধরে এসব ক্লাবে অবৈধ কর্মকাণ্ড চললেও নীরব ভূমিকা পালন করতেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তবে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে রাজধানী এবং চট্টগ্রামে জুয়া-ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর নড়েচড়ে বসেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি)।

গত ২৪ ঘণ্টায় একটি ক্লাব ও একটি জুয়ার আসরে অভিযান চালিয়ে যুবলীগ নেতাসহ ১৪ জুয়াড়িকে আটক করা হয়। উদ্ধার করা হয় নগদ সোয়া লাখ টাকা, ২ কেজি গাঁজা, মদের খালি বোতলসহ তাস ও জুয়া খেলার নানা সরঞ্জাম।

রোববার রাতে নগরীর নুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এবং সোমবার দুপুরে নগরীর নাজিরেরপুল এলাকায় নবজাগরণ ক্লাবে এ অভিযান চালানো হয়।

ক্লাবটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর প্যানেল মেয়র ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মহানগর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্য রফিকুল ইসলাম খোকন।

কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম জানান, সোমবার দুপুরে নবজাগরণ ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ২ কেজি গাঁজা, মদের ১টি খালি বোতল এবং জুয়া খেলার তাস ও ২ হাজার ৬০০ টাকা উদ্ধার করে। গ্রেফতার করা হয় নুরুজ্জামান জামাল (৫০), মানিক হাওলাদার (৪০), সুলতান হাওলাদার (৪৫), হারুন অর রশিদ (৪২) এবং পরীক্ষিত (৩৮) নামে পাঁচ ব্যক্তিকে।

এর আগে রোববার রাত ১১টার দিকে আলেকান্দা নুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয়তলার একটি কক্ষে অভিযান চালিয়ে ৯ জুয়াড়িকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- যুবলীগের পদহীন নেতা শোয়েব আহম্মেদ সিজান, আরিফ সরদার, মো. ইকবাল, সাদেক সরদার, মো. শামীম, এনাম মাহমুদ জাকির, জিয়াউদ্দিন তিতাস, মো. বিপ্লব এবং মো. সুমন। এ সময় নগদ ১ লাখ ৯ হাজার ৫০০টাকাসহ তাস ও জুয়া খেলার সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, নগরীর নাজিরেরপোল এলাকায় নবজাগরণ ক্লাবটিতে নিয়মিত জুয়ার আসর বসতো। সেখানে মদ, ফেন্সিডিল, ইয়াবা, বিয়ারও বেচাকেনা হতো। প্রতিদিন হাজার-হাজার টাকার অবৈধ বাণিজ্য চলতো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাঠ পর্যায়ের কিছু সদস্য ওই টাকার নিয়মিত ভাগ পেত বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে নবজাগরণ ক্লাবে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ কর্মকাণ্ড চলে আসলেও নীরব ভূমিকা পালন করতেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। মাঝে মাছে অন্য দু’একটি ক্লাবে অভিযান চালানো হলেও নবজাগরণ ক্লাবে কখনোই হানা দেয়ার নজির নেই।

এদিকে এ অভিযোগ অস্বীকার করে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম জানান, আমরা যখনই যেখানে মাদক ও জুয়া খেলার তথ্য পেয়েছি, অভিযান চালিয়েছি।

তিনি বলেন, ক্লাবটির নিয়ন্ত্রক বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর প্যানেল মেয়র ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম খোকন। ক্লাব থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা রয়েছে কি-না খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে প্রমাণ পেলে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

নবজাগরণ ক্লাবের সভাপতি রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, অভিযানের সময় আমি ছিলাম না। আমি সেখানে নিয়মিত যাই না। শুনেছি পুলিশ একটি ব্যাগ নিয়ে ক্লাবে ঢুকেছে। এরপর অভিযান শেষে সেখান থেকে ১ কেজি গাাঁজা উদ্ধারের দাবি করেছে তারা। বিষয়টি সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।

ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী এই নেতা বলেন, নবজাগরণ ক্লাবের আলাদা ঐতিহ্য রয়েছে। ফুটবল খেলায় এই ক্লাবটির নানা অর্জন ও খ্যাতি রয়েছে। ক্লাবের সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য কোনো মহল থেকে হয়তো ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কারণ ক্লাবে তাস খেলার বাইরে আর কিছুই হয় না।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 + thirteen =