গডফাদার আতংকে বি.টি.সি.এল অভিযোগ পাহাড়সম কার্যকর দৃশ্যমান খুবই কম

0
524

আপরাধ বিচিত্রা: মতিঝিল টিএন্ডটি কলোনী যা বর্তমানে বিটিসিএল কলোনী নামে পরিচিত এখানকার একজন গডফাদার সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সি.আই সেলিম রেজা নামের এই ব্যাক্তি জে. এ মো: সাখাওয়াতসহ আরো কিছু সহযোগী ও বহিরাগতদের নিয়ে এসকল অপকর্ম করছে। ইতোমধ্যে তাদের হাতে ভূক্তভোগী ও নির্যাতিতরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। ভূক্তভোগীদের সেই সকল অভিযোগ-উপ-মহাব্যবস্থাপক, ইমারত রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ-১বিটিসিএল মগবাজার থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানী লি:, মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রাণালয়, চেয়ারম্যান-দুর্নীতি দমন কমিশনসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পর্যন্ত পাঠানো হয়েছে। তবে সর্বশেষ আশার কথা হল, গত বৃহস্পতিবার ৩-১০-২০১৯ তারিখে এই সকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিটিসিএল কর্তৃক খান আতাউর রহমান, মেম্বার এডমিনকে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন।

এই তদন্তের নির্দেশ মতিঝিল কলোনীর ২ জন ভূক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে এসেছে বলে জানা গেছে। গত ০১-০৮-২০১৯ তারিখে মো: স্বপন শিকদার, বিটিসিএল ওযার্কচার্জ, বর্তমান ঠিকানা এইচ-২১/৬ নং কোয়ার্টারের বাসিন্দা, উপ-মহাব্যবস্থাপক রক্ষণা-বেক্ষণ বিভাগ-১ বিটিসিএল মগবাজার, ঢাকাÑ বরাবর জি-৩/১ বরাদ্দকৃত কোয়াটারটি তাকে বুঝিয়ে দিতে আবেদন করেন। এরপর গত ২২-০৯-২০১৯ ইং তারিখে ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানী লি: এর নিকট অভিযোগ করে জানান যে, জি-৪/৩/১, বরাদ্দ হওয়া বাসাটি তাকে বুঝিয়ে না দিয়ে সি.আই সেলিম রেজা ও জে. এ, মো: সাখাওয়াত কর্তৃক বহিরাগতদের কাছে ভাড়া দিয়ে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করছে।

উক্ত অভিযোগ পত্র যা সংক্ষেপে এমন-আমি মো: স্বপন শিকদার, ওয়ার্কচার্জড, উপ-মহাব্যবস্থাপক (বর্হি-১), বি.টি.সি.এল মগবাজার, ঢাকায় কর্মরত আছি। বর্তমানে আমি বরাদ্দকৃত বাসা নং-এইচ ২১/৬ পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছি। গত তারিখ ২৫-০৭-২০১৯ তারিখে আমার নামে জি-৪/৩/১, বাসাটি বরাদ্দ হয়, যার বরাদ্দ স্মারক নং-১৪. ৩৩. ০০০০. ৬০১. ১৮. ০১০. ১৯। আমি বিশ^স্থ সূত্রে জানতে পারি যে, আমার নামে বরাদ্দকৃত বাসাটি অবৈধভাবে বহিরাগত লোকের কাছে ভাড়া দেয়া হয়েছে, যার মাসিক ভাড়া ১৬০০০ টাকা তারা অবৈধভাবে উপার্জন করছে। এই জন্য তারা বাসাটি আমাকে বুঝাইয়া না দিয়ে নানা রকমের টালবাহানা করছে।

বর্তমানে আমি আরো জানতে পারি আমার নামে বরাদ্দকৃত বাসাটি তাহারা ৫০ হাজার অথবা ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে নূরুুজ্জামান নামে একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীকে অবৈধভাবে জবরদখল দিবে। আমি যে কোয়টারে বসবাস করি তাতে আমার পরিবার পরিজন নিয়ে স্থান-সংকুলান হচ্ছে না বিধায় আমি মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমি শারিরীক প্রতিবন্ধি হওয়ার জন্য সকলের নিকট আশা যাওয়া করতে পারি না। তথাপি আমি সি, জি, এমওটি, জিএম মহোদয়ের সাথে সাক্ষাৎ করেছি। বর্তমানে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছি। দুশ্চিন্তায় আমার যে কোন সময়ে ষ্ট্রোক হতে পারে।

অতএব হুজুরের নিকট আমার আকুল আবেদন এই যে, আমার নামে বরাদ্দ হওয়া জি-৪/৩/১, বাসাটি পারিবারিক দিক ও শারিরীক দিক এবং মানসিক দিক বিবেচনা করে বুঝাইয়া দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দানে আপনার সদয় মর্জি হয়। বিনীত নিবেদক, মো: স্বপন সিকদার, ওয়ার্কচার্জড, উপ-মহাব্যবস্থাপক বর্হি-১, বিটিসিএল, মগবাজার, ঢাকা। তারিখ: ২৪-০৯-২০১৯ ইং। বাসা বরাদ্দের পত্র নং-১৪. ৩৩. ০০০০. ৬০১. ১৮. ০১০. ১৯ এবং তারিখ ২৫-০৭-২০১৯ ইং।

সদয় অবগতি ও পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য -মাননীয় চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশন, সেগুন বাগিচা। একই তারিখে এই পত্রটি তিনি সরাসরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, গণ ভবন, ঢাকার ঠিকানায় প্রেরণ করেন। এতে সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুলিপি প্রেরিত হয় ১। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রাণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ও ২। সচিব মহোদয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রাণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় এর নিকট। পরবর্তী বিটিসিএল কলোনীর আরেকজন বাসিন্দা জনৈক মো: শহিদুল্লাহ, ব্যবস্থানা পরিচালক বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন।

যেই অভিযোগে বলা হয়, সি. আই সেলিম রেজা মতিঝিল টিএন্ডটি কলোনী বর্তমানে যা বিটিসিএল কলোনী নামে পরিচিত একজন গডফাদার। তার সহযোগী জে.এ পদের এম সাখাওয়াত ও তার রয়েছে আরো কয়েকজন সহযোগী। তাহারা দীর্ঘদিন একই বিভাগে থাকায় ও তাদেরকে বদলি না করায় তারা ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করে। এরা কলোনীর ৭টি জি ও এইচ টাইপ সরকারি বাসা বরাদ্দপ্রাপ্ত কর্মচারীদের বুঝিয়ে না দিয়ে বহিরাগত লোকদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা অগ্রীম নিয়ে প্রতিটি বাসা থেকে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা বাড়া বাবদ গ্রহন করছেন। (অভিযোগ পত্রে সেই সকল বাসাগুলোর ঠিকানা থাকলেও অধিকতর তদন্তের স্বার্থে সাপ্তাহিক অপরাধ বিচিত্রার এই সংখ্যায় সেসব ফ্লাটের নাম্বার ও ঠিকানা প্রকাশ করা হলো না।) এছাড়া এই পত্রে আরো অভিযোগ আছে, এই কলোনীতে দীর্ঘদিন যাবত রয়েছে পানির তীব্র সমস্য।

এখানকার পানির পাম্প চালকরা কলোনীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসায় ঠিকমতো পানি দেয় না। কোনো বাসিন্দা এই বিষয়ে অভিযোগ করতে আসলে পাম্প চালক ও সি. আই সেলিম রেজা তাদের সাথে খারাপ আচরন করে। ইহার ফলে এলোটিদের সাথে পাম্প চালক ও সি. আই সেলিম রেজার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। পাম্প চালকেরা এলোটিদের মারতে আসে। এখানকার বাসিন্দারা ভয়ে তাদের সাথে উচ্চবাচ্য করে না। ফলে দিনের পর দিন এখানকার বাসিন্দাগণ রমজান মাসে অযু ও গোসলের পানি পায় না। যার ফলে এখানকার এলোটিগণ প্রতিনিয়ত পানির কষ্টে দিনাতিপাত করছে। এরা নিজেরাই মতিঝিলের এই আবাসিক এলাকায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে নিজেরাই দখলকৃত ফ্লাট বহিরাগত ব্যবসায়ী বা অন্য পেশার মানুষদের বরাদ্দ ও দখল বুঝিয়ে দিচ্ছে।

অথচ যারা সত্যিকারের সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ পেয়েছে তারা সেই সব ফ্লাটে উঠতে পারছে না। আবার যদি চেষ্টাও করে তাহলে আছে এই বাহিনীর ভয়। এই আবাসিক কলোনীর একমাত্র গোডাউনটি দখল করে বিটিসিএল শ্রমিক কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নাম দিয়ে অফিস বানিয়েছে। অভিযোগ পত্রে আছে, সেখানে মাদক সেবন এবং অসামাজিক কাজ করা হয়। অন্যদিকে কলোনীর গেইটের অভিযোগ কেন্দ্রটি এই চক্র দখল করে সেখানে গোডাউন বানানো হয়েছে। তারা সরকারি ব্যবস্থাপকের অফিস ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে ১৫ হাজার টাকা করে গ্রহন করছে। এভাবে তারা কয়েক কোটি টাকা কামিয়েছে।

এই বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে আসলে সি.আই সেলিম রেজা ও জে.এম মো: সাখাওয়াতের সহযোগীরা এলোটিদের মারতে আসে। বিগত ০৯-০৯-২০১৯ তারিখে সকাল ১০.০০ ঘটিকায় সি.আই সেলিম রেজা ও তার সহযোগীরা মতিঝিল টিএন্ডটি কলোনী সমাজ কল্যান সমিতির সভাপতিকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। এদের আতঙ্কে এখানকার কলোনীর কোন বাসিন্দা ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করছে না। এছাড়া অভিযোগ আছে, এরা সুযোগমত বিভিন্ন এলোটিদের কাছ থেকে জোড় পূর্বক ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে। কেউ এর প্রতিবাদ করলে তার সহযোগীরা অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও মারধর এবং এখানকার কলোনী থেকে উচ্ছেদ বা বের করে দিবে বলে হুমকি দেয়। এদের দলের আরো কয়েকজন সদস্য কয়েকটি অফিসার্স কোয়াটার দখল করে রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

(সেই সকল ফ্লাটের বিষয়েও অপরাধ বিচিত্রার তদন্ত চলছে।) গত ২৭-০৯-২০১৯ তারিখের মতিঝিল থানার একটি জিডি অপরাধ বিচিত্রার হাতে আসে। মতিঝিল থানা-জিডি নং ১৯২০।  তারিখ ২৭/০৯/২০১৯। মতিঝিল থানা সেই জিডি’র আইওÑ এস আই ফেরদৌস আলম, মোবাইল ০১৭১৬-০৯৮২৮৮। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে সি.আই সেলিম রেজা ও জে.এম মো: সাখাওয়াতের অন্যতম সহযোগী মো: মিজানুর রহমান, ওয়ার্কচার্জড (৪৫) জি-২৩/২ নিবাসী অজ্ঞাতনামা কয়েকজন সন্ত্রাসী নিয়ে গত ২৭-০৯-২০১৯ তারিখ দুপুর ১২.৩০ এর সময়ে জি-৬ নং বিল্ডিং এর সামনে হঠাৎ মতিঝিল টিএন্ডটি কলোনী সমাজ কল্যান সমিতির সভাপতিকে আক্রমন করে আহত করে। এতে আহত হয়ে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নীলা ফুলা ও  জখম হয়।

এই সময়ে তারা বিভিন্ন রকম ভয়-ভীতি ও গালাগালি এবং হুমকি প্রদর্শন করে। জিডি’র সেই বিষয়ে মতিঝিল থানায় তদন্ত চলছে। তবে সম্প্রতি সবচেয়ে ভয়াবহ যে বিষয়টি অপরাধ বিচিত্রা জানতে পেরেছে, এই গডফাদারের উপরেও রয়েছে আরো অনেক বড় এক গডফাদার। সেই গডফাদার থাকেন মগবাজার বিটিসিএল অফিসার্স কলোনীতে। সেই বড় গডফাদারই হচ্ছে বিটিসিএলের সকল আবাসিক/ অনাবাসিক কলোনীগুলোর প্রধান নিয়ন্ত্রনকারী। শুধু তাই নয়, সেই গডফাদারের নামে সারাদেশে বিটিসিএল অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এবং তাদের পরিবারগুলোও থাকে আতঙ্কে। সারা দেশে যেখানেই বিটিসিএল অফিস বা বিটিসিএলের আবাসিক কলোনী সেখানেই এই বড় গডফাদারের নির্দেশের বাইরে অন্য কোন কিছু হয় না।

আমরা জানতে পেরেছি, তার নামের প্রথম আদ্যক্ষর ‘ত’। বিটিসিএলের সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী এই ‘ত’ আদ্যক্ষরের নামের মানুষটিকে শুধু যমের মত ভয়ই করে না, পৈত্রিক প্রাণের ভয়ে দরকার হলে সরকারি চাকুরী পর্যন্ত ছেড়ে দিতে রাজি আছে। বিটিসিএলের শীর্ষ পর্যায়েও এর বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর সব অভিযোগ কিন্তু টু শব্দটি পর্যন্ত করতে পারে না কেউ-সবাই এক প্রকার অসহায়। বিটিসিএলের এই মাফিয়া গডফাদারের বিষয়ে বিশদ তদন্ত চলছে, অপরাধ বিচিত্রার সামনের সংখ্যায় যার ছবিসহ সকল অপকর্ম প্রকাশ করা হবে। বিটিসিএলের কোন ভূক্তভোগীর কাছে এর বিরুদ্ধে কোন তথ্য থাকলে পত্রিকার ঠিকানায় নির্ভয়ে পাঠাতে পারেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

11 + eight =