চট্টগ্রাম রেলওয়ে আর এক জিকে শামীম

0
1551

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

চট্টগ্রাম নগরীর আইস ফ্যাক্টরী রোডে রেলের জমি একবছরের জন্য ভাড়া নিয়ে ১০০ কোটি টাকার বিশাল বাণিজ্যিক ভবন গড়ে তুলেছেন শাহ আলম নামের এক ব্যক্তি। অন্যদিকে, তিনি চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় রেল ভবনের (সিআরবি) সামনে রেলের কয়েক কোটি টাকার জায়গা দখল করেও ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

রেলের জায়গায় কোনো ধরনের বেসরকারি অবকাঠামো নির্মাণের সুযোগ না থাকলেও রেলের বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণ করেছেন দামী দামী স্থায়ী অবকাঠামো। সিআরবি ও রেলওয়ে স্টেশনের কয়েকশ’ গজের মধ্যে এমন দখলবাজি এবং স্থায়ী অবৈধ স্থাপনা থাকলেও কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করছে। চট্টগ্রাম রেল স্টেশনেও রয়েছে তার পরিচালনাধীন হোটেল চিটাগাং ইন , বিরতি রেস্টুরেন্ট। সিএনএস এর পাশে রয়েছে তার নিজস্ব ব্যবহারের জন্য একটি কক্ষ। হোটেল চিটাগাং ইন এ চলে যুবতীদের দিয়ে রমরমা দেহ ব্যবসা ও মাদকের কারবার। রেলওয়ের একাধিক সূত্র জানায়, কেবল এই জায়গাগুলো নয়; কুমিল্লার বাসিন্দা শাহ আলমের নামে-বেনামে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে কুমিল্লা স্টেশন পর্যন্ত রেলের প্রতিটি স্টেশনেই রয়েছে দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রায় অর্ধশত দোকান ও জায়গা দখলে নিয়ে নিজে অথবা ভাড়ায় ব্যবসা পরিচালনা করছেন তিনি। রেলওয়ের এস্টেট ও ওয়েলফেয়ার বিভাগের অসাধু লোকজনকে ম্যানেজ করেই তিনি রেলে চালাচ্ছেন দখলবাজির রাজত্ব। শাহ আলম কখনও নিজের নামে, কখনও তার স্ত্রী ইয়াসমিন আলমের নামে রেলের জায়গা ও দোকানপাট কৌশলে ভাড়া ও টেন্ডারের নামে হাতিয়ে নেন। এরপরই স্থায়ীভাবে গেড়ে বসেন রেলের জায়গায়। রেলওয়ের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এমন কথা প্রচলিত আছে যে, ‘শাহ আলম রেলে যাই চান, তাই পান।’ তিনি যেন আরেক জিকে শামীম।রেলের নিয়োগ বাণিজ্যে তিনি এক প্রতিষ্ঠিত নাম। সূত্র জানায়, দুইটি সমিতির নাম ব্যবহার করে চট্টগ্রাম নগরীর আইস ফ্যাক্টরী রোডে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পাশে রেলের জমি একবছরের জন্য ভাড়া নেন। কিন্তু সরকারি বিধি ভঙ্গ করে এ জমিতে ৯৫,৯৯২ বর্গফুটের বিশাল বাণিজ্যিক ভবন গড়ে তুলেন তিনি। বাণিজ্যিক ভবনের প্রতিটি দোকান ২৫ থেকে ৫০ লক্ষ টাকায় ৯৯ বছরের জন্য বিক্রি করে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শাহ আলম সিন্ডিকেট। সূত্র আরও জানায়, শাহ আলম তার স্ত্রী ইয়াসমিন আলমের নামে সিআরবির সামনে রেলওয়ের ৪৭৫ বর্গফুটের একটি পরিত্যক্ত ঘরে ফাস্টফুডের দোকান পরিচালনার জন্য রেল থেকে লাইসেন্স নেন। বার্ষিক মাত্র বর্গফুটপ্রতি ৫০ টাকা হারে ভাড়া দেয়ার নিমিত্তে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই দোকান শর্তযুক্তভাবে তাকে বরাদ্দ দেয়। কিন্তু দেখা গেছে, মাত্র ৫০০ বর্গফুট বরাদ্দ নেয়া হলেও এর আয়তন অবিশ্বাস্যভাবে বেড়ে গেছে প্রায় পাঁচ হাজার বর্গফুট। ওই জায়গায় শাহ আলম স্থায়ী অবকাঠামো বানিয়ে চালু করেছেন তাসফিয়া গার্ডেন। রেলওয়ের এস্টেট বিভাগ লাইসেন্স দেয়ার মালিক হলেও কৌশলে শাহ আলম রেলওয়ের ওয়েলফেয়ার বিভাগ থেকে এই জায়গা বা দোকান ভাড়ার লাইসেন্স নেন। সূত্রে আরও জানা যায়, মাদারবাড়ীতে রেলওয়ের স্টেশন কলোনি এলাকার একটি পরিত্যক্ত ভবন ভাড়ার নামে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে স্বপ্নীল গ্রামার স্কুল নামে একটি প্রতিষ্ঠান। অথচ পরিত্যক্ত ওই ভবনটি আবদুস ছালাম নামে রেলওয়ের এক কর্মচারীকে (ওয়েম্যান) বাসা হিসেবে বরাদ্দ দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ওই বাসায় আর উঠতে পারেননি এই কর্মচারী। রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া বাইরের কেউ রেলওয়ে কোয়ার্টার বরাদ্দ নেয়ার বিধান থাকলেও শাহ আলমের স্ত্রী ইয়াসমিন আলমের নামে নিয়েছেন রেলের সরকারি কোয়ার্টার বরাদ্দ। এছাড়া রেলওয়ের কদমতলী নতুন স্টেশনে পুলিশ ব্যারাকের জায়গায় গড়ে তুলেছেন লন্ড্রি, সেলুনসহ ১২টি প্রতিষ্ঠান। একই স্টেশনের দোতলায় অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে বন্ধ করে দেয়া একটি হোটেল নাম পরিবর্তন করে চালাচ্ছেন শাহ আলম। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে কুমিল্লা স্টেশন পর্যন্ত যতগুলো স্টেশন আছে প্রায় সব স্টেশনেই রেলের স্থাপনায় আছে শাহ আলমের ‘অংশীদারিত্ব’। প্রথম শ্রেণীর রেলগাড়ির বগির প্রতিটি সিট কভারে এসএ কর্পোরেশনের নাম লিখা আছে। জানা যায়, এই এসএ কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী শাহ আলম এবং তার স্ত্রী। রেল গাড়ির জন্য চুক্তিভিত্তিক যে সকল এ্যাটেন্ডেন্স নিয়োগ করা হয়েছে তার বেশিরভাগই শাহ আলমের লোক। প্রত্যেকের বেতন ১৫ হাজার টাকা হলেও তারা তা পায় না। মাস শেষে এ্যাটেন্ডেন্সের বেতন হতে শাহ আলম পায় প্রায় ২ কোটিরও বেশি টাকা। অথচ তাদের নিয়োগ কালে প্রত্যেকের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা করে ঘুষ গ্রহণেরও অভিযোগ রয়েছে। রেলের যাত্রীদের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়েই এসব এ্যাটেন্ডেন্সরা চলে। এভাবে রেল থেকে প্রতিমাসে শাহ আলমের আয় প্রায় ১০ কোটি টাকার মতো। এসব অভিযোগ জানতে শাহ আলমের মোবাইলে (নম্বর ০১৭১১৩১১০২৮) একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিকে রেলে শাহ আলমের দখলদারিত্ব বিষয়ে রেলের চীফ এস্টেট অফিসার ইসরাত রেজার সাথে কথা হয়। সার্বিক বিষয়ে যুগ্ম সচিব রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তদন্তের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে তিনি জানান। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন হতে এসব বিষয়ে তদন্ত হয়েছে এবং তদন্ত প্রতিবেদন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

twenty − 7 =