বনশ্রী রামপুরা এলাকায় রাজউকের নকশা বহির্ভূত ভবন ইমারত পরিদর্শক ও অথারাইজড অফিসারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

0
898

মো: আবদুল আলীম: একটি শহরের ভূমি কী পরিমান ওজন ধারণক্ষমতা রাখে তা নির্ণয় করে সেখানে স্থাপনা নির্মান করা প্রয়োজন। যখনই তা ধারণক্ষমতা  অতিক্রম করে তখনই সেখানে দূর্যোগ দেখা দেয়। ঢাকাসহ গোটা দেশে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত হচ্ছে একের পর এক হাইরাইজ ভবন। ইতোমধ্যে অনিয়মের মাধ্যমে নির্মিত অনেক ভবন কাত হয়ে নিকটস্ত ভবনগুলোর জন্য ঝুঁকির কারণ হয়েছে। প্রায় বছর দশক আগে পূর্ত মন্ত্রণালয় পাঁচ হাজারের ওপর ভবন চিহ্নিত করেন। এসব ভবন রাজউকের নিয়ম ও নকশা ভঙ্গ করে নির্মিত হয়েছে। এসব ভবনগুলোর অনিয়মিত অংশ উচ্ছেদের জন্য একাধিকবার পদক্ষেপ নিলেও তা আলোর মুখ দেখে নাই। এদিকে দশ বছর পর রাজউকের নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে নির্মিত ভবনের সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে প্রকাশ। অভিযোগ রয়েছে রাজউকের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ ইমারত পরিদর্শক, অথারাইজড অফিসার ও তদুর্ধ্ব কর্মকর্তা এধরনের নকশা বহির্ভূত ভবন থেকে মোটা অংকের মাসোহারা নিয়ে থাকেন। একারণে নকশা বহির্ভূত ভবনগুলোর অধিকাংশই টিকে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে অনিয়মিত ভবনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। কিন্তু এ অভিযান প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন রাজউকের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারনে রাজধানী বসবাসের উপযোগিতা হারিয়েছে। এখনও অবাধে গড়ে উঠছে নকশা বহির্ভূত হাইরাইজ ভবন। কার পার্কিং এর জায়গায় বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মান করা হচ্ছে অবাধে।

অনেক ভবন আছে যেগুলো রাজউকের নকশা ছাড়াই নির্মিত হয়েছে যেগুলোর তথ্য এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। নকশা বহির্ভূত এসব ভবনগুলোর প্রতি রাজউকের ইমারত পরিদর্শক ও অথারাইজড অফিসার সংগত কারণেই খুবই সদয়। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না এমন উদাহারন অসংখ্য।  তথ্য প্রাপ্তির এক আবেদনের প্রেক্ষিতে রাজউকের স্মারক নং ২৫.০০.০০০০.০১১.৯৯.২৮৭ (১১).১৮-৫৫৬ স্থা: তারিখ ১৪-০৩-২০১৯ ইং থেকে জানা গেছে ১। গৌছউদ্দিন এবং নাজমা, প্লট নং ৪৮, রোড নং ০৩, ব্লক-ই, ইষ্টার্ন হাউজিং, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা ঠিকানায় ০৯ তলা আবাসিক ভবনের নকশা অনুমোদন দেয়া হয় যার নকশা নং

২৫.৩৯.০০০০.১২২.৩৩.২৩০.১৬-২৭৮ স্থা: তারিখ ১৫-০৫-২০১৬ ইং। ভবনটির সেটব্যাক সন্মুখে ১.৫২ মিটার এর স্থলে ০.৮০ মিটার, পশ্চাতে ১.৫২ মিটার এর স্থলে ০.৮৫ মিটার, ডানে ২.২৮ মিটার এর স্থলে ১.১০ মিটার, বামে ২.১৭ মিটার এর স্থলে ০.৮০ মিটার রেখে নির্মিত হয়েছে। ২। মিজানুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ফাষ্ট সিকিউরিটিজ ডেভে: লি:, প্লট নং ০৭, রোড-০৩, ব্লক-এফ, ইষ্টার্ন হাউজিং, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা ঠিকানায় ০৬ তলা ভবনের নকশা অনুমোদন হয় যার নকশা নং রাজউক /নঅঅ/তসি-৫৩৪/০৬/৩৫৩ স্থা: তারিখ ০৮-০৩-২০০৭ ইং।

ভবনটির সেটব্যাক সন্মুখে ১.৫২ মিটার এর স্থলে ০০ মিটার, পশ্চাতে ১.৫২ মিটার এর স্থলে ০.৫০ মিটার, ডানে ১.০০ মিটার এর স্থলে ০.৪০ মিটার, বামে ১.০০ মিটার এর স্থলে ০.৪০ মিটার ছেড়ে নির্মিত। অধিকন্ত ভবনটি ছয় তলা অতিক্রম করে সাত তলা নির্মান করা হয়েছে। এভাবে দেখা যায় ভবন দুইটি রাজউক এর নিয়মের প্রচুর ব্যত্যয় ঘটিয়ে নির্মিত হয়েছে। উক্ত এলাকার ইমারত পরিদর্শক হচ্ছেন মো: আবু বকর সরকার এবং অথারাইজড অফিসার ৬/১, ২ ও ৩ হচ্ছেন মো: নুরুজ্জ¥মান হোসেন জাহির (সম্প্রতি অন্য জোনে বদলি)। দীর্ঘ দিন অতিক্রম হলেও ভবন দুইটির অনিয়মিত অংশ উচ্ছেদ করা হচ্ছে না।

ভুক্তভোগী এলাকাবাসীগণ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান নিয়ম বহির্ভূত ভবন মালিকদের সাথে রাজউকের ইমারত পরিদর্শক ও অথারাইজড অফিসারের অর্থিক লেনদেন রয়েছে যার কারনে অনিয়মিত ভবনগুলোর বিরুদ্ধে কোন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা হচ্ছে না। অধিকন্ত ভবনগুলো অনিয়মের মাধ্যমে নির্মানের সময় রাজউক কর্তৃক তদারকি করা হয় নাই। ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী জানান ইমারত পরিদর্শক আবু বকর সরকার এসব এলাকার অনিয়মিত ভবন মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নেন।  মাসোহারার টাকা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছেও যাচ্ছে বলে রাজউকের বেশ কয়েকজন ইমারত পরিদর্শক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান।

এ ব্যাপারে ইমারত পরিদর্শক আবু বকর সরকারের বক্তব্য নেয়ার জন্য তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই। তদন্ত সাপেক্ষে ইমারত পরিদর্শক ও অথারাইজড অফিসারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া এবং ভবন দুইটির অনিয়মিত অংশ উচ্ছেদ করা এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণলয় এবং দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে ওঠবে। উল্লেখ, বনশ্রী রামপুরা এলাকা এবং অথারাইজড অফিসার-৬/১, ২ ও ৩ এলাকায় রাজউকের নকশা ভঙ্গ করে  ভবন নির্মান এবং রাজউকের জ্ঞাতসারে এসব অনিয়মিত ভবনগুলোর বিরুদ্ধে রাজউক কর্তৃক কোন ব্যবস্থা না নেয়া সংক্রান্ত অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে প্রচুর তথ্য নিন্মস্বাক্ষরকারীর নিকট সংরক্ষিত আছে যা ধারাবাহিকভাবে পরবর্তী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

16 − one =