মাধবী ইয়াসমিন রুমা ঃ যশোরের আলোচিত গৃহবধু তুলি হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী বিমান কর্মী জুলফিকার আলী অবশেষে গত ১১ নভেম্বর সকালে যশোর আদালতে আত্মসমর্পন করেছে বলে জানা গেছে। তবে মামলার অপর আসামী ফরিদা বেগম এখনো পলাতক রয়েছে। প্রকাশ, স্ত্রী ও ২ সন্তান থাকা সত্ত্বেও বিমানবাহিনীর কর্মী জুলফিকার আলী নিজেকে অবিবাহীত পরিচয় দিয়ে সাবেক প্রেমিকা এক সন্তানের জননী আঁখি আফরিন প্রিয়া নামের এক গৃহবধুকে দ্বিতীয় বিয়ে করে। আঁখি আফরিন প্রিয়া বাঘারপাড়া থানার ছোট খদুড়া গ্রামের আলমগীর হোসেন খোকনের স্ত্রী ও যশোর কোতয়ালী থানার রাজাপুর গ্রামের আলমগীর হোসেনের কন্যা। পূর্ব সম্পর্কের জের ধরে তাদের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে তারা গত ২৪ ডিসেম্বরে ১০ লক্ষ টাকা কাবিনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। উল্লেখ্য, বিমান কর্মী জুলফিকারের দ্বিতীয় বিয়ের কাবিনে প্রথম স্বাক্ষী হিসেবে ছিলো জুলফিকারের ছোট ভাই বিমানকর্মী শাহাবুদ্দিন। বর্তমানে শাহাবুদ্দিন আটক আছে। দ্বিতীয় বিয়ের কথা গোপন রেখে জুলফিকার দেনার অজুহাত দেখিয়ে প্রথম স্ত্রী জিনিয়া ইয়াসমিন তুলিকে ২ সন্তানসহ কৌঁশলে ঢাকা থেকে যশোরের বাঘারপাড়ায় পাঁঠাইয়ে দেয়। তুলি তার ২ সন্তান সহ শ^শুরবাড়িতে অবস্থান করছিল। জুলফিকারের কথামত তার মা ফরিদা বেগম, ছোট ভাই শাহাবুদ্দিন ও বোন সুরাইয়া তুলিকে প্রায়ই মারধর করতো।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১২ এপ্রিল জুলফিকারের মা ফরিদা বেগম, ভাই বিমানকর্মী শাহাবুদ্দিন ও বোন সুরাইয়া পূণরায় তুলিকে মারধর করলে তুলি তার পিতাকে ফেনে জানায়। ওইদিনই তুলির পিতা শহিদুল ইসলাম ছোট নাতি হামজাসহ তুলিকে প্রথমে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় পরে তার নিজ বাড়ি একই জেলার ঝিকরগাছায় নিয়ে যায়। পরের দিন ১৩ এপ্রিল বিকালে শ্বাশুড়ী ফরিদা বেগম তুলিকে ফোন করে জানায়, তোমার বড়পুত্র আলিফ (২) অসুস্থ্য।
এ কথা জানার পর তুলির বাবা শহিদুল তুলিকে নিয়ে সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার সময় বাঘারপাড়ার পান্তাপাড়া গ্রামে পৌঁছায়। তুলির পিতা শহিদুল ইসলাম মেয়ে তুলির ঘরে এশার নামাজ পড়ছিল। হঠাৎ তুলির আত্মচিৎকার শুনতে পায়।
নামাজ পড়া বাদ দিয়ে ঘর হতে বের হতে যেয়ে দেখে বাইরে থেকে দরজা আটকানো। কোনো উপায় না পেয়ে শহিদুল ঘর টপকে পাশের ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে দেখতে পায়, শাহাবুদ্দিন তুলিকে এলাপাতাড়ীভাবে ছুরি দিয়ে আঘাত করে চলেছে।
আর তার মা ফরিদা বেগম ও বোন সুরাইয়া শাহাবুদ্দিনকে সহযোগিতা করছে তুলিকে মারতে। ধারালো ছুরি দিয়ে তুলির পিঠে, পেটে, বাম হাতের কব্জির উপরে ও পায়ে মোট ১২টি মারাত্বকভাবে আঘাত করে। তখন শহিদুল রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের কবল থেকে তুলিকে উদ্ধার করে।
ওই সুযোগে ঘরের দরজা খুলে ঘাতক শাহাবুদ্দিন ও তার মা এবং বোন পালিয়ে যায়। পরে ওই এলাকার এক ব্যক্তির সহযোগিতায় মাইক্রোবাসযোগে তুলিকে প্রথমে যশোর সদরহাসপাতালে ভর্তি করে। তুলির অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে যশোর সিএমএইচ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে।
অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পরের দিন ১৪ এপ্রিল সকালে তুলিকে ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন কর্তব্যরত ডাক্তাররা। সকল প্রস্তুতি শেষ করে যশোর বিমানবন্দরের নেওয়ার সময় তুলি মুত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।