তাজরীন ট্র্যাজেডির ৭ বছর, হত্যাকাণ্ডে দায়ী ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেফতার করার দাবি

0
585

যে শ্রমিক দেশ গড়ার কারিগর, দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার কারিগর, তাদের জীবনের নিরাপত্তা নয় কেন? শ্রমিক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তাজরীন গার্মেন্ট শ্রমিক হত্যাকাণ্ডে দায়ী ব্যক্তিদের জামিন বাতিল করে অবিলম্বে গ্রেফতার করার দাবিসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে পালন করা হলো তাজরীন ফ্যাশন ট্র্যাজেডি দিবস। এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। তাজরীন ট্র্যাজেডির সাত বছর পালন উপলক্ষে গতকাল সকালে কারখানার সামনে ফুল দিয়ে নিহত শ্রমিকদের শ্রদ্ধা জানায় তাদের স্বজন, আহত শ্রমিক ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। সকাল ৮টা থেকে নিশ্চিন্তপুর এলাকার বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে ফুল দিয়ে নিহত শ্রমিকদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ ছাড়া সকালে রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানেও শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। এ সময় নিহত শ্রমিকদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়াও করা হয়।

সকাল ৮টায় নিশ্চিন্তপুরে তাজরিনের সামনে ও জুরাইন কবর স্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন করে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতারা। পরে তাজরীনসহ সব শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের বিচার, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, সুচিকিৎসা, পুনর্বাসনের দাবিতে গার্মেন্ট টিইউসির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

তাজরীন গার্মেন্টসের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে শ্রমিক নেতা সাইফুল হকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার, কেন্দ্রীয় নেতা মো. শাহজাহান, রানা প্লাজার শ্রমিক নেতা এমাদুল ইসলাম ও শ্রমিক নেতা মনজুরুল ইসলাম প্রমুখ। জুরাইন কবরস্থানে সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাদেকুর রহমান শামীম,

এমএ শাহীন, দুলাল সাহা, মঞ্জুর মঈন প্রমুখ। সমাবেশ থেকে অবিলম্বে তাজরীন গার্মেন্ট শ্রমিক হত্যাকাণ্ডে দায়ী ব্যক্তিদের জামিন বাতিল করে গ্রেফতার করার দাবি জানানো হয়। তাজরীন হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়ার বিলম্বের প্রতিবাদ জানানো হয় এবং তাজরীন,রানাপ্লাজা,ট্যাম্পাকো,মাল্টিফ্যাবসসহ সব শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করা হয়।

এ উপলক্ষে কর্মস্থলে মৃত্যুজণিত ক্ষতিপূরণের জন্য মানদণ্ড নির্ধারণ করার দাবিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্লোবাল ইউনিয়নের অর্ন্তভুক্ত ৪টি সংগঠন জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন (এনজিডব্লিউএফ), বাংলাদেশ বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ পোশাক শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, একতা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন গার্মেন্টস শ্রমিক নিরাপত্তা র‌্যালি করে।

বিভিন্ন দাবি-দাওয়া সম্বলিত ফেস্টুন হাতে শ্রমিকদের অংশগ্রহণে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে র‌্যালিটি বের হয়ে হাইকোর্ট, তোপখানা রোড, পল্টন মোড় হয়ে ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। এরআগে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

শ্রমিক নেতা আমিরুল হক আমিনের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন শ্রমিক নেতা সালাউদ্দিন স্বপন, তৌহিদুর রহমান, কামরুল হাসান, আরিফা আক্তার, তাহমিনা রহমান, সিমা আক্তার, পাপিয়া আক্তার প্রমুখ। এদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ উপলক্ষে এক সমাবেশে করেছে বাংলাদেশ শ্রম অধিকার ফোরাম।

সংগঠনের সভাপতি শ্রমিক নেতা আবুল হোসাইনের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন কৃষক নেতা বদরুল আলম, গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন সভানেত্রী লাভলী ইয়াসমিন, শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ বাহারানে সুলতান বাহারসহ বিভিন্ন গার্মেন্ট শ্রমিকরা। সমাবেশ থেকে শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মস্থল ও জীবিকা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয় ।

তাজরীন ট্র্যাজেডিতে হতাহতদের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে তাজরীন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের অংশগ্রহণে অবস্থান ধর্মঘট পালিত করেছে জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। ফেডারেশনের আহ্বায়ক বাহারানে সুলতান বাহারের সভাপতিত্বে অবস্থান ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করেন, কেন্দ্রীয় সদস্য মোহাম্মদ মোস্তফা,

তাজরীন ট্র্যাজেডিতে আহত শ্রমিক মিরাজ, সোলেমান, জরিনা, রোখছানা, রেহেনা, নাসিমা প্রমুখ। ধর্মঘটে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন সাম্যবাদী দলের সভাপতি হারুন চৌধুরী, মাহাতাব উদ্দিন শহীদ, শান্ত¦না আক্তার, আল আমিন, গাজীনূর আলম, শামীম, অন্তর রহমান প্রমুখ।

এ উপলক্ষে গত শনিবার সন্ধ্যায় নিহতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন করেছেন আহত শ্রমিক ও নিহতদের স্বজনরা। শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আবিসি), সাভার-আশুলিয়া কমিটির উদ্যোগে তাজরীন ফ্যাশনসের পরিত্যক্ত কারখানার সামনে এই মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়।

এ সময় মোমবাতি হাতে ‘তাজরীন, টাম্পাকো, রানা আর না, আর না’ এই স্লোগান তুলে নিহতদের স্মরণ করা হয়। এ ছাড়া শ্রমিকদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

প্রসঙ্গত, আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন ফ্যাশনস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দগ্ধ হয়ে ১১১ শ্রমিকের প্রাণহানিসহ তিন শতাধিক শ্রমিক আহত হন।

আহতদের অনেকেই হারিয়েছেন তাদের কর্মক্ষমতা। এখন তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দেশের ইতিহাসে শতাধিক শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনা এটাই প্রথম। তাজরীন ফ্যাশন ট্র্যাজেডির ৭ বছর পূর্তিতে কারখানার সামনে নিহতদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন নিহতের স্বজনরা, আহত শ্রমিক, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন।

রোববার সকালে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় তুবা গ্রুপের তাজরীন ফ্যাশনের মূল ফটকে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন , নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের স্বজনরা অশ্রু আর ফুলেল শ্রদ্ধার মধ্য দিয়ে ভয়াল শোকাবহ দিনটির স্মরণ করেন

দিনটির শুরুতে কারখানার মালিক দেলোয়ার হোসেনের ফাঁসির দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তাজরীন ফ্যাশনের সামনে জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

পুষ্পাঞ্জলি আর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মানববন্ধন কর্মসূচি ও নিহতের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় নিহত স্বজনদের আহাজারি আর কান্নায় তাজরীন ফ্যাশনের সামনে আকাশ-বাতাস ভারী হতে থাকে ।

নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো শেষে মানববন্ধনে নিহত শ্রমিকদের স্বজনরা ও আহত শ্রমিকরা ক্ষোভ নিয়ে বলেন, আজ তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের ৭ বছর পূর্ণ হলো। কিন্তু এতদিন পরেও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে পারেনি সরকার ও বিজিএমইএ। এমতাবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে জানিয়েছেন বক্তারা।

বক্তারা আরও বলেন, ২৪ নভেম্বর কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রধান ফটক আটকে দিয়ে ১১৩ জন শ্রমিককে ভেতরে পুড়িয়ে মেরেছিল। এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। যা বিভিন্ন তদন্তে প্রমাণ হয়েছে। কিন্তু সরকার এতদিনেও খুনি দেলোয়ারের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারেনি। তাই অবিলম্বে খুনি দেলোয়ারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিতের দাবি জানান তারা।

কিন্তু সরকার এতদিনেও খুনি দেলোয়ারের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারেনি। তাই অবিলম্বে খুনি দেলোয়ারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিতের দাবি জানান তারা।

এ সময় জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা সহায়তা ট্রাস্ট ও টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার ফেডারেশনসহ অন্য শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

২০১২ সালে ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় আশুলিয়ার নিশ্চিতপুরে আকাশ রক্তিম হয়ে ওঠে আগুনের লেলিহান শিখায়। সেই লেলিহান শিখায় ১১৩ জন পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করে প্রায় ২ শতাধিক পোশাক শ্রমিক।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

8 − two =