শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) শাজাহান খান ঃ মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শ্রীনগর বাজার এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। সরেজমিনে শ্রীনগর বাজারের বিভিন্ন অলি-গলি ঘুরে দেখাগেছে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, শ্রীনগর সার্কেল কার্যালয়ের পশ্চিম পাশের দেয়াল ঘেষে বাজারে মূল প্রবেশ পথ। মূল প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে বাজারের প্রায় প্রতিটি অলি-গলির ফুটপাথ দখল করে ছোট ছোট চৌকি বসিয়ে কতিপয় ব্যক্তি বছরে পর বছর ফল,কাচাঁ-তরকারিসহ নানা ধরনের পন্য সামগ্রীর জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বাজারের ফুটপাথ দখলের ফলে সরু পথে চলাচলে ক্রেতা ও সাধারন পথচারিদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, কিছু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আসায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদের দোকানের সামনের ফুটপাথ ভাড়া দিয়েছে। এছাড়া দেখাগেছে, বাজারের বিভিন্ন অলি-গলিতে সর্বদা চলছে দোকানিদের বিভিন্ন ধরনের পন্য আনা নেওয়ার কাজ। প্রতিনিয়ত পন্য আনা নেওয়ায় ফলে ক্রেতা ও পথচারীদের পরতে হচ্ছে নানা সমস্যায়।
ব্যস্ততম বাজারটিতে রয়েছে অগ্রনী ব্যাংক,পুর্বালী ব্যাংক,সোস্যাল ব্যাংক, বীমা কোম্পানী, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ, উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্ব পূর্ন প্রতিষ্ঠান। বাজারের পাশেই রয়েছে শ্রীনগর সরকারি কলেজ, শ্রীনগর সরকারি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ, ১ নং মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীনগর সরকারি সুফিয়া এ হাইখান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
প্রতিদিন অনেক শিক্ষার্থী বাজারের উপর দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। প্রতিনিয়ত উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার নানা শ্রেণী পেশার শত শত মানুষের সমাগম ঘটে ঐতিহ্যবাহী এ বাজারটিতে। ঐতিহ্যবাহী বাজারটিতে নেই কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারনে কাচাঁ তরকারী ও মাছ বাজরের পানিসহ মুরগীর বিছা,পট্রি মুরগী ড্রেসিংয়ের ময়লা পানি, বাজারে জবাইকৃত গরু-খাসির রক্ত ও গোবর মিশ্রীত দূর্গন্ধ যুক্ত পানি ক্রেতা সাধারনের পায়ে লেগে পুরো বাজারের অলি-গলি ছড়িয়ে পরে। ফলে ক্রেতা সাধারনের জামা-কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। বাজারে ময়লা আবর্জনা ফেলার কোন নিদিষ্ট স্থান না থাকার কারনে দোকানিরা যত্র তত্র ময়লা আবর্জনা ফেলছে।
ময়লা-আবর্জনার দূর্গন্ধ নিয়েই চলছে ক্রয়-বিক্রয়। আর সামান্য বৃষ্টি হলেই পুরো বাজারের চিত্র পাল্টে যায়। সামান্য বৃষ্টির পানি বাজারের বিভিন্ন স্থানে জমে থাকে।যার ফলে ময়লা কাদা মিশ্রিত পানি পুরো বাজার স্যাত স্যাতে পিচ্ছিল হয়ে পরে। আর বাজারের সরু পিচ্ছিল পথে পড়ে যেয়ে অনেক ক্রেতা ও পথচারিদের হাত-পা মচকানোর খবরও পাওয়া গেছে।
এছাড়া বাজারে আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস গাড়ি প্রবেশের নেই কোন রাস্তা। এছারা বাজারে কেউ অসুস্ত কিংবা কারও দুর্ঘটনা ঘটলে এ্যাম্বুলেন্স প্রবেশতো দুরের কথা ভ্যান কিংবা রিকসা নিয়ে বাজারে প্রবেশ করাই অনেক কষ্টকর হয়ে দাড়ায়। বাজারে কোথাও নেই কোন বৈদ্যুতিক ল্যাম্পপোষ্ট।
দোকানীরা ব্যবসা শেষ করে রাতে দোকান বন্ধ করলে পুরো বাজার অন্ধকারে নিস্তব হয়ে পরে। বিশাল এ বাজারটি মাত্র ৪ জন পাহাড়াদার দিয়ে চালান হয় পাহাড়ার কাজ। সামান্য কয়েকজন পাহাড়াদার দিয়ে পাহাড়ার কাজ চালানোর ফলে প্রতি বছর চুরির ঘটনা ঘটছে। নির্বাচনহীন প্রায় দেড় যুগের বাজার পরিচালনা কমিটি দিয়ে চলছে পরিচালনা।
বাজার পরিচালনা কমিটির নেই কোন নিজস্ব অফিস। ফলে বাজার পরিচালনা কমিটিকে বাজার ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসেই নানা ধরনের সমস্যার সমাধান দিতে হয়। বাজারের নানা সমস্যা সম্পর্কে বাজার কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ দেলোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সভাপতি চিকিৎসার জন্য ভারতে আছেন।
আর বাজারের যে সকল সমস্যার কথা আপনি তুলে ধরেছেন তা সবই সত্য। তবে বাজার পরিচালনা কমিটির নির্বাচন দেওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।নির্বাচন হয়ে গেলে পর্যায় ক্রমে সমস্যা গুলোর সমাধান হয়ে যাবে। এছারা বাজার পরিচালনা কমিটির অফিসের জন্য জায়গাও নির্ধারন করে রাখা হয়েছে।
শ্রীনগর প্রান কেন্দ্রের বাজারটির নানা ধরনের সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে,উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাম্মৎ রহিমা আক্তার বলেন,আমি নতুন এসেছে। জেনে ব্যবস্থা নিবো। শ্রীনগর প্রান কেন্দ্রের বাজারটির নানা ধরনের সমস্যা সমাধানে প্রশাসন অতিদ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন বাজার ব্যবসায়ী ও উপজেলার সর্বস্তরের জনগন।