রাজকন্যা হারানো এক বাবার আর্তনাদ

0
864

যে সময়টাতে তোমাকে সবচেয়ে বেশী দরকার ছিল, ঠিক সেসময়-ই আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি। কেমন করে আমার জীবন থেকে তুমিবিহীন আজ ৪৯২ দিন কেটে গেলো?  বিশ্বাস করো মা, তুমিবিহীন প্রতিটি মূর্হুতই ছিল বিষাদময়, হাহাকার ও অশ্রুশিক্তে ভরা। আর প্রতিটি রাত ছিল নির্ঘুম ও তোমাকে কাছে না পাওয়ার তীব্র যন্ত্রনার। অর্চি, তুমি আমার কাছে যে কি ছিলে তা আমি প্রতিটি সেকেন্ড উপলব্দি করি। স্বর্গ আমি দেখিনি, কিন্তু মাস্বর্গকে পেয়েও আমি হারিয়ে ফেলেছি। প্রতিটি মেয়েই তার বাবা মার কাছে রাজ কন্যা। তুমিও ছিলে আমার কাছে তাই। আজ তুমি অনেক দূরে, বহু দূরে, যোজন যোজন দূরে চলে গিয়েছ। আমি মাঝে মধ্যে ভাবি, কি করলে তোমার সাথে শুধু একটি বারের জন্য, একটি মূর্হুতের জন্য দেখা করতে পারবো, একটু স্পর্শ করতে পারবো?  —– তোমাকে ফিরে পাবার সব যুক্তির কাছে আমি যখন হেরে যাই, তখন  নিজের অজান্তেই অশ্রুশিক্ত নয়নে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।

জানো তো অর্চি এই সামনেই শুভ বড়দিন।  সবার বাড়িতেই সাজ সাজ রব। নূতন নূতন জামা কাপড় কেনাকাটায় সবায় ব্যাস্ত।  আজ তুমি থাকলে তাই করতে। তন্বী দিদি, তমা দিদি ও বৃষ্টি দিদিকে ফোন করতে কে কি নিচ্ছে। তোমার কত কত বায়না থাকতো।

আজ কিছুই নেই তোমাদের বাসায়। আজ তুমি নেই, যেন তোমাদের বাসার কারোর জন্যই কোন কিছুর প্রয়োজন নেই। কত বার যে বিভিন্ন মার্কেটে গিয়েছি। মেয়েদের জামা গুলো নেড়ে চেড়ে শুধু দেখেই এসেছি।

এই দোকান, ঐ দোকান ঘুরেছি আর উলট পালট করে জিপার, বেল্ট, লেইস, স্টিচ গুলো চেক করে নিজের অজান্তেই অশ্রুশিক্ত নয়নে দোকান থেকে একপা দুইপা করে হেটে হেটে চলে এসেছি। সুন্দর সুন্দর জামা গুলো দেখে একটা জামা ভীষণ কিন্তে ইচ্ছে করেছে।

তোমার অমি দাদাকে ব্লেজার, শার্ট,  জুতা কেনার জন্য টাকা দিয়েছিলাম; অমি প্যান্ট আর জুতা ছাড়া আর কিছুই নিবে না। তোমার মাকেও শতবার করে বলেছি; সেইও নিরব নির্বিকার। আর আমি? আমি তো একটা জিন্দালাশ।

অর্চি,  তুমি ছাড়া আজ আমি নিঃস্ব গরিব অসহায়। আজও আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে তোমার সেই শুদ্র পোষাকে মলিন মুখটি। যেন অভিমান করে ঐদিকে মুখ করে চুপটি মেরে চোখ দু’টি বন্ধ করে নিরবে শুইয়ে আছো। দৃশ্যটি কতই না বর্বর ও নিষ্ঠুর ছিল।  কত কেঁদেছি, আহাজারি করেছি। আমাদের কান্নায় সাভারের আকাশ বাতাস এক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তবুও তুমি জেগে উঠনি।

দেখো মামনি, আমি না খুব নিষ্ঠুর হয়ে, বুকে পাথর বেঁধে এখনো বেঁচে আছি। সত্যিই বলছি অর্চি আমি এখনো বেঁচে আছে। সারাক্ষণ বিরবির করে তোমার আত্নার কল্যাণে প্রার্থনা করি। প্রতি দিন ভোরে ও রাত্রে রোজারী মালা প্রার্থনা করি। জানি না তোমার এই বাবার প্রার্থনা স্বর্গের দ্বার পর্যন্ত যায় কিনা।

তুমি যেখানেই থাকোনা কেন মা, তুমি অনন্ত সুখে থাকো। হে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, তোমার সামনে আমি দু’হাত তুলেছি। তুমি সদয় হয়ে এই অধমের প্রার্থনা শোন, আমাদের প্রার্থনার গুনে অর্চির আত্নাকে তুমি স্বর্গের অনন্ত শান্তি দান করো- আমেন।-

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

13 − eight =