ব্যাংক আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হচ্ছে

2
693

ব্যাংক ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে আনতে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ শতাংশ সুদে আমানত গ্রহণ করা হচ্ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে জানিয়েছেন বিভিন্ন ব্যাংকের এমডিরা।আজ রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকে গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ কথা জানায় ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)-এর প্রতিনিধি দল। সংগঠনটির নতুন চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আজ থেকে ব্যাংক আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করেছেন তারা। এটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা চান এমডিরা। এ বিষয়ে লিখিত সসুপারিশ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গভর্নর।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, এবিবির নতুন কমিটি গভর্নরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছিল। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসময় সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার বাস্তবায়নসহ বেশ কিছু বিষয়ে মৌখিক দাবি করেন তারা। গভর্নর বিষয়গুলো লিখিত আকারে দিতে বলেছন।

বৈঠক বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাহেল আহমেদ জানান, সৌজন্য সাক্ষাতই ছিল মূল উদ্দেশ্য। আগামী ১ এপ্রিল থেকে ৯ শতাংশে ব্যাংক ঋণের সুদহার নামিয়ে আনার বিষয়ে গভর্নরকে অবহিত করেছি। পাশাপাশি চলতি ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই আমানতের সুদহার কমিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

এর আগে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়নে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ শতাংশের বেশি সুদে আমানত গ্রহণ করছে না কোনো ব্যাংক। মেয়াদি স্কিম ছাড়া সব ধরনের আমানতের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে। তবে যেসব আমানতের মেয়াদ শেষ হবে, সেগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রেও এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

২৮ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) রাতে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) বৈঠকে এসব বিষয়ে একমত হয়েছেন। রাজধানীর গুলশানে ইস্টার্ন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ওই বৈঠকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা ও প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক প্রসঙ্গে এবিবি চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার বলেছিলেন, কোনো ব্যাংক ৬ শতাংশ সুদে আমানত নিলো আবার কোনো কোনো ব্যাংক ৭ শতাংশে আমানত নিলো এতে বাজারে অসমতা সৃষ্টি হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ধাপে ধাপে আমানতের সুদহার কমাতে শুরু করেছি। ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকারের আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে। সেই অনুসারে আস্তে আস্তে আমানতের সুদহার কমাচ্ছি। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১ এপ্রিল থেকে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে নিয়ে আসবো। এটি বাস্তবায়নে আমরা কাজ শুরু করেছি। তাই আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করেছি যেন সবাই আমানতের সুদহার ৬ শতাংশের নামিয়ে আনতে পারি।

এদিকে সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণের সুদহার নামাতে ব্যাংককারদের দাবি অনুযায়ী সরকারের আমানতের সুদহার নির্দিষ্ট করে সম্প্রতি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এতে সরকারের নিজস্ব অর্থের ৫০ শতাংশ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে রাখার বিধান রাখা হয়েছে। ব্যাংকের সুদহার বেঁধে দেয়ার পর আমানতকারীদের সবাই যাতে সরকারি ব্যাংকের দিকে ঝুঁকে না পড়েন, তা ঠেকাতে বেসরকারি ব্যাংকে ডিপোজিটে মুনাফা আধা শতাংশ বেশি করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখলে সর্বোচ্চ সুদ পাবে ৬ শতাংশ। আর এই অর্থ যদি সরকারি ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখে তাহলে সর্বোচ্চ সুদ পাবে সাড়ে ৫ শতাংশ। অর্থাৎ বেসরকারি ব্যাংকে সুদ বেশি পাবে আধা শতাংশ।

এদিকে ব্যবসায়ীদের দাবি ও প্রধানমন্ত্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনতে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে ব্যাংকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এবং ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) বৈঠক করে। উভয় পক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে সব ধরনের ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ হবে। আর সাধারণ জনগণকে আমানত বিপরীতে ৬ শতাংশের বেশি সুদ দেবে না। তবে ক্রেডিট কার্ডে সুদহার বেশি হবে। এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে আগামী ১ এপ্রিল থেকে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করবে।

ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বর্তমানে বেশিরভাগ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পে ১০ শতাংশের বেশি সুদে ঋণ বিতরণ করছে। অনেক ব্যাংক ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ সুদেও ঋণ দিচ্ছে। ক্ষুদ্র শিল্পে সর্বোচ্চ ১৮ ভাগ হারে ঋণ বিতরণ করছে কোনো কোনো ব্যাংক।

গবেষণা সংস্থা বিআইডিএস’র এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো গড়ে এখন ৯ থেকে ১১ শতাংশে সুদে আমানত নিচ্ছে আর ১৩ থেকে ১৫ শতাংশে হারে ঋণ বিতরণ করছে।

এমন পরিস্থিতিতে নয় শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণের জন্য ছয় শতাংশ সুদে আমনত নিশ্চিত করতে হবে। এ হারে আমানত সংগ্রহ করাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

20 − 15 =