বাংলাদেশ বর্তমান সময়ে যেন দুর্নীতি অনিয়মের আখড়া হয়ে গিয়েছে। দেশের প্রতিটা ক্ষেত্রেই এখন দুর্নীতির প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি এখন খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের দায়িত্ব কর্তব্য ভুলে মান সম্মান বিসর্জন দিয়ে অর্থলোভী হয়ে এই সমস্ত কুরুচিপূর্ণ কাজ করে নিজেদের পকেট ভরতে ব্যস্ত।
নরসিংদী বেলাব উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা শারমিনের বিরুদ্ধে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে উপজেলা পরিষদের তহবিল হতে বরাদ্দকৃত উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেধাবী, দরিদ্র ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে শিক্ষা বৃত্তির টাকা আত্মসাৎসহ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০১৯ সালের বিজয় দিবসের পুষ্পস্তবক অর্পণ ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বরাদ্দকৃত অর্থ না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নরসিংদী বেলাব উপজেলার ৮৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৩ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬টি মাদ্রাসা ও ৭টি কলেজ রয়েছে। তার মধ্যে গেল বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ২৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট ১০০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩ হাজার টাকা করে বিতরণ করা হলেও মাষ্টাররোলে ৪ হাজার টাকা করে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় বলে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ এনেছে বেলাব উপজেলা চেয়ারম্যান শমসের জামান ভূঁইয়া রিটন।
এ ঘটনায় বেলাব উপজেলার বারৈচা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামালের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার স্কুলের ১০জন শিক্ষার্থী শিক্ষা বৃত্তির টাকা পেয়েছে সবাই ৩ হাজার করে। একই স্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার, সুমাইয়া আক্তার, ঐশী আক্তার ,জান্নাতুন ফেরদৌস, রেজুয়ানাসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানান, মাষ্টাররোলে শুধু নাম ও পিতার নাম ছিল তবে কোন টাকার অংক ছিলো না। আমাদেরকে বলেছে সাক্ষর দিতে আমরা স্বাক্ষর দিয়েছি। পরে আমাদেরকে ৩০০০ হাজার টাকা করে দিয়েছে।
হাড়িসাঙ্গান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঃ মজিদ বলেন,তার স্কুলে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১১ জন ৩ হাজার করে টাকা পেয়েছে। পাশাপাশি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরিদ্র, মেধাবী তালিকাভুক্ত শিক্ষার্থী থাকার সত্ত্বেও তারা তালিকার বাইরে রয়েছে, তাদেরকে কোন শিক্ষা বৃত্তি দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজার বাগ সরকারি প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম খান বলেন, কিভাবে এই উপজেলায় এই তালিকাগুলো করে তা আমরা জানিনা, আমার স্কুলে এই শিক্ষা বৃত্তি পাওয়ার মত অনেক শিক্ষার্থী থাকার পরেও তারা পায় নি। তিনি বলেন প্রতি বছর বিজয় ফুল প্রতিযোগিতায় প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ২হাজার করে টাকা দেওয়ার কথা থাকলে ও আমাদেরকে এই টাকা দেওয়া হয় না।
এ ব্যাপারে উপজেলার একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, গত ২ বছর যাবৎ বিজয় ফুল প্রতিযোগিতার বরাদ্দকৃত কোন টাকা তারা পায়নি। এ ছাড়া উপজেলায় অনুষ্ঠেয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারি বরাদ্দ থাকার পরে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ইউএনও অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হান্নান এর মাধ্যমে বিভিন্ন অংকের টাকা চাঁদা নেয় বলে জানান শিক্ষকরা। বিজয় ফুল প্রতিযোগিতার টাকা সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (সাবেক) শহিদুর রহমান জানান, গত ১৬ই ডিসেম্বর স্কুল পর্যায়ে বিজয় ফুল প্রতিযোগিতার টাকা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল। ইউএনও টাকা উঠিয়ে নিয়ে গেছে, কোন স্কুলে দেওয়া হয়নি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা শারমিন। তার দাবি এসব অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। একটি মহল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। অন্যদিকে বেলাব উপজেলা চেয়ারম্যান শমসেরের জামান ভূইয়া রিটন বলেন, শিক্ষা বৃত্তির টাকা একজন ইউএনও আত্মাসাৎ করে এটা খুবই দুঃখজনক। এ ব্যাপারে আমি জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এবং নরসিংদী স্থানীয় সরকার বিভাগে কমপ্লেইন করেছি। আমরা বেলাববাসী এই ঘটনার বিচার চাই।
দেশে একের পর এক ঘটে চলেছে দুর্নীতি অনিয়মের ঘটনা। প্রতিনিয়ত আমরা দেশের বিভিন্ন সরকারি ক্ষেত্রগুলোর দুর্নীতি ও অনিয়মের খবর জানতে পারি। জনগণের কল্যাণে সরকারি অর্থ ব্যয় না করে সেই অর্থ দিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি তে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন অনেক অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। জনগণের টাকা আত্মসাৎ করে নিজেরা বিলাসবহুল জীবন যাপনে ব্যস্ত থাকেন। দেশের দুর্নীতির কালো ছায়া গ্রাস করেছে শিক্ষাক্ষেত্রকেও।