স্টাফ রিপোর্টার:
হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জে হাওরে মৎস্য লুটপাটকারী মশক আলীর বিরুদ্ধে প্রশাসনের নিরবতায় চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে গ্রামবাসী। সম্প্রতি মৎস্য লুটেরা মশক আলী আজমিরিগঞ্জ থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে ফতেপুর হাওরের কৃষক ওমেদ আলীর মাছের ঘের থেকে অন্তত ১০ লাখ টাকা মুল্যের মাছ জোড়পূর্বক ধরে নিয়ে যায়। মশক আলী বিশাল লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে মাছ লুটপাট করার আশংকায় ওমেদ আলী থানা পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে মাছ ধরার কয়েকদিন আগেই একটি জিডি করেন। কিন্তু থানা পুলিশ উক্ত জিডির কোন তদন্ত না করে উল্টো মশক আলীকে মাছ লুটপাট করার সময় নিরবতা পালন সহ ওমেদ আলীকেই গালমন্দ করেন। এতে স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর মৌজাধীন হাওরের মৎস্য হরিলুটের মুলহোতা মশক আলীর বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। জামায়াত-শিবির পন্থী মশক আলী বর্তমানে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের শেল্টারে থেকে ফতেপুর এলাকায় একটি লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করে জোড়পূর্বক নিরহী মানুষের সহায় সম্পদ লুটে নিয়েই হয়েছেন কোটিপতি। স্থানীয় প্রশাসন মশক আলীর এহেন কর্মকান্ডে অভিযোগ পেয়েও কোন ব্যবস্থা গ্রহন করে না। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে অভিযোগকারীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানোর ব্যবস্থা করে ভুমিদস্যু মশকআলী। জমি দখল, মাছের ঘের লুটপাট, হামলা, মামলাবাজির মতো নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পায়নি এলাকার জনগন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, আজমিরিগঞ্জ উপজেলার রনিয়া গ্রামের রনিয়া মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি রাজকুমার দাস ও সাধারন সম্পাদক হরঞ্জণ দাস রনিয়া মৌজাস্থ সাটিয়া হাওর বা বিলের ইজারা গ্রহন করে পরবর্তীতে অধিক মুনাফায় ঐ হাওরটি ভুমিদস্যু মশক আলীর নিকট সাব-ইজারা প্রদান করে। মশক আলী সাব-ইজারা নেয়ার পর তার ভুমিদস্যু লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে রনিয়া মৌজার সাটিয়া বিলের অন্তরালে পাশেরই ফতেপুর মৌজার হাওরে জোড়পূর্বক প্রবেশ করে মাছ ধরে নিয়ে যায়। এতে ফতেপুর ও উদ্ভবপুর এলাকার গরীব মানুষেরা লাখ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মূখীন হয়ে পড়ে। মৎস্য হরিলুটে সময় মৎস্যচাষীরা বাঁধা দিলে মশক আলী তার লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে তাদের উপর হামলা করে গুরুত্বর আহত করে। প্রতিবছরই মশক আলী মাছ ধরার মওসুমে এভাবে জোড়পুর্বক অন্যের জমির মাছ লুটপাট করে নিয়ে যায়।
ফতেপুর এলাকার কৃষক উমেদ আলী বলেন, আমি পৈত্তিকসুত্রে প্রাপ্ত হাওরের জমি নিজে চাষাবাদ করা সহ কিছু জমি জনৈক মৎস্যচাষী সামছুলের নিকট ইজারা দেই। সামছুল দীর্ঘদিন যাবৎ ঐ জমিতে মৎস্যচাষ করে আসছে। কিন্তু মশক আলী সাটিয়া বিল ইজারা নেয়ার পর থেকেই তার লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে সামছুলের ঘেরের মাছ একাধিবার জোড়পূর্বক ধরে নিয়ে গেছে এবং তাকে প্রাননাশের হুমকিও দিয়েছে। ফলে মশক আলীর ভয়ে সামছুল সহ অন্য কেউ আমার ঐ জমি মাছচাষের জন্য ভাড়া নিতে চাচ্ছে না। এতে আমি আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। তাছাড়া আমি মশক আলীর এধরনের দস্যুপনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় সে কৌশলে পুশিল ম্যানেজ করে আমাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করিয়ে জেল খাটিয়েছে। পরবর্তীতে স্বাক্ষপ্রমানের ভিত্তিতে মাননীয় আদালত সত্য ঘটনা জানতে পেরে ঐ মামলা থেকে আমাকে নির্দোষ হিসেবে মুক্তি দিয়েছে।
ভুক্তভোগি ফতেপুর গ্রামের মৃত জানে আলমের ছেলে মো: রুবেল মিয়া বলেন, আমাদের বোরো ধানের জমিতে বর্ষা মওসুমে অনেক টাকা খরচ করে ঘের দিয়ে মাছ চাষ করি। কিন্তু মাছ ধরার সময় ঘনিয়ে এলে মশকআলী লাঠিয়াল নিয়ে জোড়পূর্বক মাছ ধরে নিয়ে যায়। গতবছর আমার জমি থেকে অন্তত তিন লাখ টাকার মাছ লুটপাট করে নিয়ে গেছে। আমার মতো প্রায় অর্ধশত লোকের জমি থেকে এভাবে জোড় করে মাছ ধরে নিয়ে যায় মশক আলী। মশক আলীর এরুপ অপকর্মের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিয়ে কোন প্রতিকার পাইনি।