সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট রংপুর মহানগর শাখার উদ্যোগে মানববন্ধন

0
450

বাজেটের ২৫ ভাগ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ,চলতি শিক্ষাবর্ষে ছাত্রবেতন-ফি বাতিল,মেসভাড়া মওকুফে রাষ্ট্রীয় বরাদ্দসহ ৬ দফা দাবিতে গতকাল ১২ মে ২০২০ সকাল ১১টায় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র রংপুর মহানগর শাখার উদ্যোগে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।এতে বক্তব্য রাখেন মহানগর কমিটির আহ্বায়ক সাজু রায়।ঘন্টাব্যাপি চলমান মানববন্ধনে সাজু বলেন করোনার কারণে দেশের মানুষ চরম সংকটের মধ্যে পড়েছে।করোনা সংক্রমনের কারনে সারাদেশে একটি সংকটময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সারাদেশের কৃষি-স্বাস্থ্য-শিক্ষা সকল খাতেই বিশেষ আর্থিক বরাদ্দ প্রয়োজন। আগামী মাসেই  ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট প্রণয়ন করা হবে। বরাবরই অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে শিক্ষাখাতকে  অবহেলা করা হয়। একটি দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে ও দেশকে এগিয়ে নিতে শিক্ষাখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। ইউনিসেফ এর প্রস্তাবনায় একটি দেশের জাতীয় আয়ের শতকরা ৮ ভাগ অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রতি বছরেই শিক্ষাখাতের পর্যাপ্ত বরাদ্দকে উপেক্ষা করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে সারাদেশের প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে সকল উচ্চ শিক্ষা স্তর পর্যন্ত সুষ্ঠু পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ক্রমাগত শিক্ষার মানোন্নয়ন, উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্রে গবেষণা ব্যাহত হচ্ছে।

বাজেটের স্বল্পতার কারণে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে। বেসরকারি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে ভয়াবহ শিক্ষাব্যবসা। অধিকাংশ কৃষক-শ্রমিকের এ দেশে তাই শিক্ষার অধিকার ক্রমাগত সংকুচিত হচ্ছে। বর্তমানে আর্থিক সামর্থ্যের মাপকাঠিতে শিক্ষালাভের সুযোগ মিলছে।

শিক্ষাক্ষেত্রের এই বিপুল অর্থব্যয় নির্বাহ করতে না পেরে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী ছিটকে পড়ছে উচ্চ শিক্ষার দোরগোড়া থেকে। গত ১০ বছরে শিক্ষার ব্যয় এতো বেড়েছে যে প্রাথমিক স্তর শেষ করে মাধ্যমিক স্তরেই লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। সারাদেশে  উচ্চ শিক্ষালাভের সুযোগ সংকুচিত করা হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণায় নামেমাত্র বরাদ্দের কারনে শুধু সার্টিফিকেটসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সংকট ক্রমাগত ঘনীভূত হচ্ছে।

গত কয়েক বছরে দফায় দফায় শিক্ষার্থীরা  আন্দোলনে ফেটে পড়লেও সংকট নিরসনে পর্যাপ্ত বরাদ্দের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শর্ত না মেনে চললেও ইউজিসির অনুমোদন নিয়ে বছরের পর বছর ভর্তি ফি, টিউশন ফি নিয়ে উচ্চশিক্ষার নামে সার্টিফিকেট ব্যবসার অবাধ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

এসমস্ত সংকটের মধ্যে দিয়ে চলছিল আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। এর সাথে সংকট সৃষ্টি করেছে করোনা। এ  বছরে করোনা সংক্রমনের কারনে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন হুমকীর মুখে পড়েছে।

অর্থনৈতিক সংকটের এ সময়ে অসংখ্য পরিবারের যখন বেঁচে থাকাই কঠিন তখন শিক্ষাব্যয় নির্বাহ একটি বাড়তি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুঃস্থ এসকল শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ আর্থিক বরাদ্দ প্রয়োজন। আবার নিজস্ব আবাসিক ব্যবস্থার অভাবে জেলা শহরগুলোতে কয়েক লক্ষ শিক্ষার্থীকে মেসভাড়া করে থাকতে হয়৷ শহরের মেসগুলোেতে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগই টিউশনি করে চলতো, অনেকে পরিবারেও কিছুটা সহযোগিতা করতো।

লক ডাউনে দুই মাস টিউশনি নেই। শিক্ষার্থীরা মেসে না থাকলেও মেস মালিকরা দু মাসের বকেয়া ভাড়া আদায়ের চেষ্টা করছে। অনেক মেসমালিক আবার এই মেসভাড়ার ওপর নির্ভরশীল। এই সংকট নিরসনে এই সংকটগ্রস্ত মেসের শিক্ষার্থীদেরকে মেসের ভাড়া পরিশোধের জন্য বিশেষ আর্থিক বরাদ্দ প্রয়োজন।

একই সাথে এ বছরের সকল প্রকার বেতন-ফি ও সেমিস্টার ফি বাতিল করা প্রয়োজন।  পরিশেষে শিক্ষাক্ষেত্রের এ সকল সংকট বিবেচনায় এনে আগামী ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে বাজেটে ২৫ ভাগ শিক্ষাখাতে বরাদ্দের প্রস্তাবনা গ্রহনের দাবি জানাই।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nineteen + 4 =