গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী সর্বস্তরের মানুষ প্রণোদনা পাবে

0
483

এজাজ রহমান: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সমালোচনাকারীদের ত্রাণ নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান,  নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে অর্থনৈতিক অভিঘাত মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। শিল্প কলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে সচল থাকে সে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ এই বিশেষ প্রণোদনা খাতে এবার ব্যয় করা হবে। সেটা সর্বস্তরের মানুষ পাবে। গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদান গ্রহণকালে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই প্রণোদনা শুধু আজকের জন্য নয়, এখনকার যে সমস্যা সেটা সমাধান করা এবং আগামী তিন অর্থবছর পর্যন্ত যে পরিকল্পনা তা বাস্তবায়ন করা। তিনি বলেন, আমাদের দেশের একেবারে নিম্নআয়ের মানুষ-আমাদের দিন মজুর শ্রেণি কামার-কুমার, রিকশাওয়ালা, ভ্যানওয়ালা থেকে শুরু করে ছোট ছোট দোকানদাররা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী-প্রত্যেকের কথাই আমরা চিন্তা করেছি এবং প্রত্যেকের দিকে লক্ষ্য রেখেই এই প্রণোদণার ঘোষণা দিয়েছি। সব শিল্প-কলকারখানা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে চালু থাকে।

তিনি বলেন, শুধু আজকে বাংলাদেশ বলে না, পুরো বিশ্বেই কিন্তু এর একটা প্রভাব পড়বে। সেজন্য বাংলাদেশকে সুরক্ষিত করার জন্যই আমরা খাদ্য উৎপাদনে বিশেষভাবে জোর দিচ্ছি। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে, সুরক্ষিত করতে হবে, পরিবারকে সুরক্ষা করতে হবে। এ জন্যই বাইরের লোকের সঙ্গে না মেশা, জনসমাগম যেখানে, সেখানে না যাওয়ার মাধ্যমে নিজেকে সুরক্ষিত করার পাশাপাশি অন্যকেও সুরক্ষিত করতে হবে।

সেই দায়িত্ব সবাইকে পালন করতে হবে। তিনি বলেন, যদিও খেটে খাওয়া দিন-মজুর শ্রেণির এবং ছোট ব্যবসায়ীদের কষ্ট হচ্ছে,তাদের জন্য সময়টা খুব দুঃসময়, সেটা আমি বুঝতে পারি। করোনার অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশকে আমরা সুরক্ষিত রাখতে চাই। সে জন্য আমাদের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং খাদ্যের নিরাপত্তাটা নিশ্চিত করার জন্য আমরা বিশেষভাবে জোর দিচ্ছি, যাতে মানুষ কষ্ট না পায়।

এত কথা না বলে মানুষের পাশে দাঁড়ান : মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে একটা শ্রেণি শুধু সরকারের সমালোচনা করে যাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি অনেকে অনেক কথা বলে বেড়াচ্ছেন, অনেক দল-মত, সুশীল সমাজ বা অনেকেই। তারা কিন্তু মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসছেন না। সমালোচনা করতেই ব্যস্ত। তিনি বলেন, ৬৮ হাজার জায়গায় আমরা ঠিক মতো দিয়ে যাচ্ছি, সেখানে ৫/৭টা জায়গায় একটু সমস্যা হয়, আমরা তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাও নিয়েছি।

সেটা নিয়ে তারা চিৎকার করে যাচ্ছেন। তারা কিন্তু একটা মানুষকেও একটি পয়সা দিয়ে সাহায্য করছেন না। মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। তারা কিন্তু তাদের কথাটা বিক্রি করেই যাচ্ছেন। এ ধরনের লোক থাকবেই, সব সমাজেই থাকে। তারা কথা বেচেই যাবে এটাই তাদের প্রফেশন। এটাই তারা করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত কথা না বলে কয়েকটা মানুষকে সাহায্য করেন। এই দুঃখের সময়ে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। মানুষকে নিজে কতটুকু দিলেন সেই হিসাবটা করুন। সরকারপ্রধান বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন এবং সেটা আমরা কার্যকর করে যাচ্ছি।

চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিটি সদস্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। সমগ্র বাংলাদেশে আমাদের যে নেতা-কর্মী তাদেরও আমরা নির্দেশ দিয়েছি। তারাও মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। সরকারিভাবে যা দেওয়া হচ্ছে পাশাপাশি বেসরকারিভাবে যে যতটুকু পারছেন সাহায্য করে যাচ্ছেন।

ত্রাণ নিয়ে নয়-ছয় বরদাস্ত করব না : ত্রাণ বিতরণে যে কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে দলমত বিবেচনা না করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ত্রাণ নিয়ে কোনো নয়-ছয় আমরা বরদাস্ত করব না। সেটা আমার দলেরই হোক বা অন্য দলেরই হোক আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। ৫/৭টি জায়গায় ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কয়েকটা জায়গায় এ সমস্যা পেয়েছি, তা খুব বেশি না। আমরা যদি তুলনা করি আমাদের প্রায় ৬৮ হাজারের মতো নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। ৪ হাজারের ওপরে ইউনিয়ন, এরপর উপজেলা রয়েছে।

সব হিসাব করে দেখা গেল যে, হয়তো ৫/৭ জায়গায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষকে যেমন বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি তেমনি ১০ টাকা কিলো মূল্যে ওএমএসের মাধ্যমে চাল সরবরাহের ব্যবস্থা করেছি। যারা তালিকার বাইরে রয়েছে তাদের জন্য আমরা কার্ড তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। প্রতিটি মানুষ যেন সহায়তাটা পায় সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। যাতে প্রত্যেকের ঘরে এই ত্রাণ সহযোগিতাটা পৌঁছে যায়। রাতে রাতে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। যাতে কেউ ভিড় না করে। এক সঙ্গে জমা না হয়। নতুন করে কেউ যাতে সংক্রমিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বিচ্ছিন্নভাবে জনসমাগম করে ত্রাণ বিতরণ না করে প্রশাসনের মাধ্যমে সমন্বিতভাবে ত্রাণ বিতরণ করার পরামর্শ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এক জায়গায় জড়ো হওয়া বা ভিড় করে ত্রাণ বিতরণ করবেন না। ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। যারা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন তারা সরকার, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় ত্রাণ বিতরণ করেন, যাতে লোকসমাগম না হয়। প্রত্যেকটি এলাকায় কমিটি করে দিয়েছি, স্বেচ্ছাসেবকরা রয়েছে। তাদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করলে সবাই পাবে। কেউ বাদ যাবে না। তিনি বলেন, আজকের যে দুঃসময় সেটা একদিন কেটে যাবে এবং বাংলাদেশ আবারও এগিয়ে যাবে এবং এই বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবেই ইনশা আল্লাহ গড়ে তুলব।

করোনা পরিস্থিতিতে ক্ষতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই করোনাভাইরাস আসার পর অর্থনৈতিক গতিধারা কিছুটা শ্লথ হয়ে গেছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপীই এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। করোনাভাইরাসে সমগ্র বিশ্ব বলতে গেলে স্থবির হয়ে আছে। সবাইকে সচেতন থাকা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে, মানুষকে সুরক্ষিত করতে হবে, পরিবারকে সুরক্ষিত করতে হবে। সে কারণে আহ্বান জানিয়েছি পরিবার নিয়ে একসঙ্গে থাকুন সেটা ঠিক আছে কিন্তু বাইরের লোকের সঙ্গে না মেশা।

ভিডিওকলে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় : প্রতি বছর গণভবনে পয়লা বৈশাখে দলীয় নেতা-কর্মী, বিচারপতি, কূটনৈতিক, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করলেও এবার করোনার কারণে বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিওকল করে তাঁর রাজনৈতিক কার্যালয়ে উপস্থিত দলীয় নেতা-কর্মী ও কার্যালয়-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টার সময় দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও কল করে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সতর্ক, সাবধান, সচেতন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরার পরামর্শ দেন। এ সময় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খানসহ কার্যালয়-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদান দিল আরও ৩৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান : করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদান দিয়েছে আরও ৩৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। গতকাল দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাঁর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এসব অনুদান গ্রহণ করেন। আর্থিক অনুদান প্রদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়; স্থানীয় সরকার বিভাগ;

পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ; ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল); ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; বিইউপি; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়; কাশেম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান এম এ কাশেম; সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম; বাংলাদেশ ফরেইন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন; বিসিএস কর অ্যাসোসিয়েশন; ইনস্টিটিউশন্স অব ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইবি); ঢাকা ক্লাব;

বিএসআরএম গ্রুপ; সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড; উত্তরা গ্রুপ, টেক্সকোটেক; হামদর্দ ফাউন্ডেশন; গান বাংলা; শাওমি টেকনোলজিস বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড; ইস্পাহানি টি লিমিটেড; সিদ্ধেশ্বরী বালিকা বিদ্যালয়; আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন; চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স; আইডিইবি; ইইডি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি।  এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে পিপিই অনুদান প্রদান করে ওলিলা গ্লাস ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এবং জাহাঙ্গীর আলম সরকার। করোনা পরিস্থিতিতে সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী।

জনগণের আস্থা বজায় রাখতে পুলিশের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের তাদের কাজের মাধ্যমে অর্জিত জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জনবান্ধব কাজের জন্য জনগণের মধ্যে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আমি আশাকরি আপনারা এই সুনাম ধরে রাখতে কাজ করে যাবেন।

গতকাল সকালে গণভবনে নবনিযুক্ত মহা-পুলিশ পরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদের র‌্যাঙ্ক ব্যাজ পরিধান অনুষ্ঠানে প্রদত্ত সংক্ষিপ্ত ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শেষে প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন নবনিযুক্ত মহা-পুলিশ পরিদর্শককে র‌্যাঙ্ক ব্যাজ পরিয়ে দেন।

আর এর মাধ্যমে ড. বেনজীর বিদায়ী মহা-পুলিশ পরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর স্থলাভিষিক্ত হলেন। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রেখে পুলিশ বাহিনীতে সাম্প্রতিক নিয়োগের ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, এই বাহিনী এর মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্যের বদনাম ঘুচিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রশংসা করেন।

কভিট-১৯-এর কারণে সমগ্র বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের আঘাত আসার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই অবস্থার মোকাবিলায় আমাদের খাদ্য উৎপাদনকে বাড়াতে হবে। শেখ হাসিনা পুলিশ সদস্যদের কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব চলমান থাকায় দেশব্যাপী বন্ধের মধ্যে বোরো ধান কাটার সঙ্গে জড়িত লোকদের তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে সহায়তা করারও আহ্বান জানান।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলতি মৌসুমে সরকার বোরো ধানের আট লাখ মেট্রিক টন (এমটি) কিনে নেবে, কৃষকরা যাতে তাঁদের ন্যায্য দাম পেতে পারে সেজন্য গত মৌসুম থেকে দুই লাখ মেট্রিক টন বেশি সংগ্রহ করবে।

দেশব্যাপী বন্ধের কারণে দুগ্ধ খামারিদের দুধ যেন নষ্ট না হয় সেজন্য তিনি দুগ্ধজাত সামগ্রী যেমন ঘি, মাখন এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত সামগ্রী প্রস্তুতের দিকেও সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, সচিব তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, বিদায়ী আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী,

র‌্যাবের নতুন মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। সরকার গত ৮ এপ্রিল র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ড. বেনজীর আহমেদকে পুলিশের নতুন আইজিপি হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে।

সে দিনই ড. বেনজীর আহমেদকে নিয়োগ দান করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সার্কুলার প্রকাশিত হয়, যা ১৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়ার কথাও জানানো হয়। সরকার বিদায়ী আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীকে সৌদি আরবে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। ১৩ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী তাঁকে আরব বিশ্ব এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির রাষ্ট্রদূত হিসেবে তিন বছর মেয়াদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত ত্রাণ কমিটি গঠনের নির্দেশ শেখ হাসিনার : করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত ত্রাণ কমিটি গঠন করার নির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই কমিটি মানুষের মানবিক সংকটে সার্বিক সহযোগিতা এবং ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করবে।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দিতে সহযোগিতা করবে। পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। গতকাল সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, গতকাল বিকালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ে উপস্থিত দলীয় নেতাদের সঙ্গে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করেন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই মতবিনিময়কালে তিনি করোনাসংকট মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বিভিন্ন সাংগঠনিক নির্দেশনা প্রদান করেন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাংগঠনিক নির্দেশনাগুলো হলো- এক. সারা দেশে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সমন্বয়ে ত্রাণ কমিটি গঠন করতে হবে। সব সাংগঠনিক উপজেলা শাখার নেতাদের অতিদ্রুতই ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ত্রাণ কমিটি প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক জেলা শাখায় জমা দিতে হবে।

এই ত্রাণ কমিটি ওয়ার্ড পর্যায়ে দল-মত নির্বিশেষে প্রকৃত দরিদ্র, দুস্থ ও অসহায় মানুষের তালিকা প্রস্তুত করবে। ওই তালিকা স্থানীয় প্রশাসনকে প্রদান করে সঠিক তালিকা প্রণয়নে সহায়তা ও সমন্বয় করবে। একই সঙ্গে এই কমিটি মানুষের মানবিক সংকটে সার্বিক সহযোগিতা এবং ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দিতে সহযোগিতা করবে।

দুই. বর্তমানে ৫০ লাখ হতদরিদ্র, দুস্থ, অসহায় ও কর্মহীন খেটে খাওয়া মানুষকে সরকারিভাবে রেশন কার্ডের আওতাভুক্ত করা হয়েছে এবং করোনাভাইরাসে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় আরও ৫০ লাখ মানুষকে রেশন কার্ডের অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি দল-মত নির্বিশেষে সমাজের হতদরিদ্র, দুস্থ, অসহায় ও কর্মহীন খেটে খাওয়া মানুষ যাতে অন্তর্ভুক্ত হয় সে ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান করবে।

তিন. আওয়ামী লীগের এই ত্রাণ কমিটি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যথাযথ সরকারি নির্দেশনা পালন, সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনগণকে সচেতন করবে এবং মানবিক সংকটে জনগণের পাশে দাঁড়াবে। পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three + twelve =