বহিরাগত সন্ত্রাসী ও কতিপয় অসাধু লোকদের কাছে জিম্মি আদমজি ইপিজেড

0
565

মো: আবদুল আলীম: দেশের বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে একটি অন্যতম গুরুত্ব স্থান আদমজি ইপিজেড। বেশ কিছুদিন যাবত এখানে বহিরাগত সন্ত্রাসী, অবাধ্য সিএন্ড এফ এজেন্ট ও এক শ্রেনীর হলূদ সংবাদিকের দৌড়াত্ব সম্পর্কে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি আইনসংগতভাবে সমাধান ও বাণিজ্যিকভাকে গুরুত্বপূর্ণ এই এলকাকাটিকে সংঘবদ্ধ চক্র থেকে মুক্ত করার জন্য কাস্টমস  বন্ড কমিশনারেট এর কমিশনার বরাবর অভিযোগ ও তার প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন ইপিজেড এলাকায় অবস্থিত কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট এর একাধিক সৎ, দ্বায়িত্ববান ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা। প্রকাশ, গোটা বিশ্বে চলমান করোনা ভ্রাাসের কারনে বাংলাদেশও চলতি বছর মার্চ এর শেষ থেকে মে এর শেষ পর্যন্ত লক ডাউন ও সাধারণ ছুটি ছিল। এর মধ্যেও আদমজি এপিজেড এর কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট এর কর্মকর্তাগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাত দিন কাজ করে রপ্তানি প্রক্রিয়াকে সচল রেখেছেন। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে উক্ত দপ্তরের সহকারী কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফয়সাল, সাব ইন্সপেক্টর মো: রফিকুল ইসলাম ও মো: মোয়াজ্জেম হোসেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হোম আইসালেসনে আছেন। অভিযোগ রয়েছে  স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে দপ্তরের কার্যক্রম সম্পাদনের নির্দেশনা থাকলেও কতিপয় সি এন্ড এফ এজেন্ট ও কাস্টম সরকার তা না মেনে পূর্বের ন্যায় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বল প্রয়োগ করে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে অনেক সি এন্ড এফ এজেন্ট এর কর্মচারি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কামার্র্শিয়াল কর্মচারি ও অনেক কাস্টম সরকার ভাইরাসে আক্রান্ত ছিল। তাদের সংস্পর্শে  কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট এর সহকারী কমিশনার, দুইজন সাব ইন্সপেক্টর ও তাদের পরিবার করোনায় আক্রান্ত হন। পরিস্থিতি বিবেচনায় সদর দপ্তর হতে শুধুমাত্র পারমিটধারী কাস্টমস সরকার এবং অনুমোদিত কামার্শিয়ালগণের সাথে স্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ প্রেক্ষিতে দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ আমদানী ও রপ্তানীর বিল অব এন্ট্রি দাখিলের সময় কাস্টমস সরকারগণের পারমিট দেখতে চাইলে তাদের অধিকাংশই তা দেখাতে পারে নাই।

অনুসন্ধানে জানা যায় তারা এই ইপিজেডে  পারমিট ছাড়া দীর্ঘ দিন যাবৎ কাজ করে যাচ্ছে। এ ধরনের আচরন কাস্টম এজেন্ট বিধিমালা, ২০১৬ এর বিধি ১৬(৩), (৪) ও (৫) এবং বিধি ১৭(১) ও (২) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই বিধিমালা ভঙ্গ করেই পারমিটবিহীন কাস্টমস সরকার দপ্তরে প্রবেশে বল প্রয়োগ করে এবং উত্তেজনাপূর্ণ কথাবার্তা বলে। কিছু পারমিটধারী কাস্টস সরকার একটি সিএন্ড এফ এজেন্ট এর কার্যক্রম সম্পাদন করার অনুমোতি থাকলেও তারা অন্যায় প্রভাব খাটিয়ে একাধিক সিএন্ড এফ এজেন্ট এর কাজ করছে। তারা অনেকেই কাস্টমস ও বন্ড কমিশনারেট এর অনুমোদন ছাড়া

ভুয়া দলিলাদি প্রস্তুত করে বিল অব এন্টি/আউটপাশ দাখিল করেন যা কাস্টমস এজেন্ট লাইসেন্সিং বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ১৮(খ) এর পরিপন্থি।

জনাব গোলাম কবির, কাস্টমস সরকার, অসিফ ইন্টা: এবং জনাব মো: শহিদুল ইসলাম, কাস্টমস করকার, জিও ট্রান্স ও প্রদিপ এন্ড কোং দীর্ঘদিন যাবত শারীরিক অসুস্থতার জন্য অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন। তাদেরকে করোনা নিগেটিভ টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে এ দপ্তরে কাজ করতে অনুরোধ করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং কাস্টমস কর্মকর্তাগণকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। অধিকন্ত যেসব সি এন্ড এফ এজন্ট এর পারমিট নেই তাদের পারমিট গ্রহণ করার অনুরোধ করলে তাদের স্বার্থ হানি হয়। তারা সকলে মিলে একটি অসাধু চক্র গঠন করে এবং গত ১৫-০৬-২০২০ খ্রি; (১) জনাব গোলাম কবির, আসিফ ইন্ট:, (২) জনাব মো: শফিকুল ইসলাম শফিক, রুমা ট্রেড সিন্ডিকেট (৩)

জনা মো: শহিদুল ইসলাম, জিও ট্রান্স এন্ড কোং (৪) জনাব সাইফুল আলম রিপন, নভো কার্গো সার্ভিসেস লি: (৫) জনাব মো: মাহবুব, নভো কার্গো সার্ভিসেস লি: নামীয় সিএন্ডএফ এজেন্ট ও কাস্টমস সরকারের নেতৃত্বে পারমিটবিহীন প্রতিষ্ঠান ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা অযৌক্তিক কিছু দাবিতে ইপিজেড কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট দপ্তরের কাজে বাধা প্রদান করে, আমদানী-রপ্তানী সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম স্ববির করে দেয়। তারা মিলে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।

তারা যে বেআইনি দাবি করে সেগুলো হচ্ছে (১) পরীক্ষনে কোন গাড়ি চেক করা যাবে না, বিল অব এন্ট্রি পাশের ক্ষেত্রে ইউডি, ইউপিসহ দলিল পত্র চেক করা যাবে না। লোকাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে মুসক চালান চাওয়া যাবে না। (২) পারমিট বিহীন কাস্টমস সরকারদের নিয়মিত কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। (৩) করোনায় পজিভি থাকলেও কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। (৪) স্বাস্থ্য বিধি সিথিল করে পূর্বের মতো জটলা করে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। (৫) বন্ড রেজিস্ট্রার কামার্শিয়াল নয় বরং কাস্টমস সরকার বন্ড অফিসার দ্বারা বন্ড রেজিস্ট্রার স্বাক্ষর করাবে।

অসাধু চক্র ঘটনার দিন অনেক কাস্টমস সরকার ও সিএন্ড এফ এজেন্টকে আমদানী-রপ্তানী কার্যক্রম সম্পাদন করতে চাইলেও বাধা দেয় ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। আদমজি এপিজেড এ অচলাবস্থা নিরসনের জন্য কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, ঢাকার যুগ্ন কমিশনার এ দপ্তরে উপস্থিত হয়ে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যা সামাধানের জন্য একাধিকবার ডাকলেও উক্ত সি এন্ড এফ এজেন্ট ও কাস্টমস সরকাররা তাতে কোন গুরুত্ব দেন নাই। এক পর্যায়ে আমদানী-রপ্তানী কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার জন্য যুগ্ন কমিশনার বেপজার জিএম আহসান কবির এর সাথে আলোচনা করে সেই স্টেশনের কার্যক্রম সচল করেন।

এযাবৎ একাধিকবার উল্লিখিত সিএন্ড এফ এজেন্ট ও কাস্টমস সরকারদের নেতৃত্বে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা আদমজি এপিজেড কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট অফিসে তান্ডব চালায়। তান্ডবের সময দপ্তরের অনেক কর্মকর্তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে, দাপ্তরিক কাজে বাধা প্রদান করে এমনকি জোরপূর্বক দপ্তর ত্যাগ করতে বাধ্য করে। এধরনের ঘটনা পুণরায় ঘটবে বলে আশংকা রয়েছে। এখানেই তারা ক্ষ্যান্ত নয়।

ইতোপূর্বে তারা স্থানীয় কিছু অখ্যাত পত্রিকা ও হলুদ সাংবাদিক দিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট ও মান হানিকর সংবাদ প্রকাশ করেছে সৎ ও নিষ্টবান একাধিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যা দপ্তরের কমিশনার মহোদয়ও অবগত আছেন। এর ফলে ইপিজেড এ কাস্টমস কর্মকর্তা ও কর্মচারিগণ ঝুঁকি ও হুমকির মুখে পরেছেন। কিছু সিএন্ড এফ এজেন্ট , কাস্টমস সরকার ও হলুদ সাংবাদিকের কাছে আদমজি ইপিজেড আজ জিম্মি।

সরকারী কাজে বাধা প্রদানকারী ও দপ্তরকে অস্থিতিশীল করার জন্য বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে যেসব সিএন্ড এফ এজেন্ট ও কাস্টমস সরকার অপতৎপরতা চালাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেঃ

(১) গোলাম কবির, আসিফ ইন্টারন্যাশনাল। তিনি আদমজি ইপিজেড কাস্টমস সরকার এর সভাপতি এবং সকল অস্থিশীল পরিস্থিতির প্রধান পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারী। (২) শফিকুল ইসলাম শফিক, রুমা ট্রেড সিন্ডিকেট। সকল অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির অর্থের যোগানদাতা। (৩) শহীদুল আসলাম, জিও ট্রান্স।

অখ্যাত পত্রিকার সাংবাদিক দিযে হয়রানির হুমকিদাতা। (৪) সাইফুল আলম রিপন, নভো কার্গো সার্ভিসেস লি: (৫) হোসেইন সৈয়দ মাহবুব, নভো কার্গো সার্ভিসেস লি:। ক্রমকি নং ৪ ও ৫ বহিরাগত সন্ত্রাসির যোগানদাতা।

এ প্রতিবেদক সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিভিন্ন অনুমোদিত সিএন্ডএফ এজেন্ট ও কাস্টমস সরকারের সাথে কথা  বলে জানতে পারেন আদমজি ইপিজেড কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট এর কর্মকর্তাগণ ২৪ ঘন্টা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমদানী- রপ্তানী কাজকে সচল রাখার জন্য সততার সাথে কাজ করে যান।

এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ,  বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দ্বারা হামলা, হলুদ সাংবাদিক দ্বারা মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন ও কিছু সিএন্ড এফ এজেন্ট এর অনৈতিক দাবি দু:খজনক। এক্সপ্রেস সিএন্ড এফ এজেন্ট এর কাস্টমস সরকার মো: কামাল হোসেন এ প্রতিবেদকে জানান তাদের কাজে কোন ত্রুটি ছিল না। শতভাগ সঠিক পদ্মতি অবলম্বন করে কাজ করার কারণে কর্মকর্তাগন সম্পূর্ন বিশ্বাসের সাথে তাদের কাগজপত্র স্বাক্ষর করেন।

মনির ট্রেডিং কর্পোরেশনের কাস্টমস সরকার রাসেল মিয়া একই বক্তব্য প্রদান করেন। অনন্ত হুয়াকজিয়ান সোয়েটার ফ্যাক্সটরির ডিজিএম বলেন কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট এর কর্মকর্তাগণ নিয়মের বাইরে কাজ না করার কারণে কিছু সিএন্ড এফ এজেন্ট ও কাস্টমস সরকার তাদের পিছু লেগেছে। 

চেক পয়েন্ট ইপিজেড নারায়নগঞ্জ এর জিএম নুরজাহান, মাইরোশিয়া ইপিজেড এর কমার্শিয়াল ম্যানেজার রিমি হোল্ডিং  কেইউএস সিএন্ড এফ এজন্ট এর কামর্শিয়াল রফিকুল ইসলাম  জেটিসিএল নামক সিএন্ড এফ এজেন্ট এর কমার্শিয়াল এক্সিুকউটিভ মো: রুহুল আমিনসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের সাথে

কথা বলে জানা গেছে আদমজি ইপিজেড কাস্টম বন্ড কমিশনারেট এর কর্মর্তাদের মধ্যে কোন ধরনের অনিয়ম বা প্রশ্নবিদ্ধ  কোন কিছু ছিল না। পরিস্থিতির আলোকে কিছু সিএন্ডএফ এজেন্ট ও কাস্টমস সরকারের বিরুদ্ধে কমিশনার, কাস্টমস বন্ড, সেগুনবাগিচা, ঢাকা বরাবর অভিযোগ ও সুপারিশ চেয়ে আবেদন করেন আদমজি ইপিজেড বন্ড কমিশনারেট এর কর্মকর্তাগণ।

এসব কর্মর্তাদের মধ্যে রয়েছেন  সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো: জাকির হোসেন শেখ, সোলেমান শাহেদ, মো: জাফর আহমেদ ও রাজস্ব কর্মকর্তা (চ:দা:) অনির্বাণ কুমার সাহা। কর্মকর্তাগণ উল্লিখিত অরাজক অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য ও অভিযুক্ত সিএন্ডএফ এজেন্ট এবং কাস্টমস সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকরি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বেশ কিছু সুপারিশ কমিশনার বরাবর পেশ করেন। এ ব্যপারে এ প্রতিবেদকের তদন্ত অব্যহত আছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

two + 9 =