সুব্রত-সেলিম গংদের হাতে মৌলভীবাজার জেলার রাজস্ব বিভাগ জিম্মী-অনাদায়ী লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব

0
539

স্টাফ রিপোর্টারঃ হাওড়-বাওর এর এই বাংলাদেশ। কিশোরগঞ্জসহ  সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার , সুনামগঞ্জ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে হাওড়।এসব হাওড় এলাকায সারাবছরই  মাছের অভয় আশ্রম হিসেবে পাওয়া যায় বিভিন্ন জাতের দেশীয় মাছ। এইসব জলমহালে মাছের চাষ,  মাছ ধরা, বিক্রয় ও প্রক্রিয়াজাত করার জন্য ভূমি মন্ত্রনালয় ও জেলা প্রশাসন থেকে হাওড়, বিল,জলমহালগুলো ইজারা দেওয়া হয় বিভিন্ন মৎস্যজীবী সমিতি ও মৎস্যজীবীদের মধ্যে। এমনি একটি জলমহাল মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার “হুগলা চৌঢালু কালাচান্দের ডহর (বদ্ধ) জলমহাল । এই জলমহালটি  বিধি মোতাবেক রাজস্ব ও সরকারি করাদি পরিশোধের শর্তে ১৪২২বাংলা সনে  ০৬(ছয়)বছরের জন্য ইজারা নেয় “লাল সবুজ মৎস্যজীবি  সমবায় সমিতি লিমিটেড” যার সভাপতি মোঃ আব্দুল খালিক। সমিতির পক্ষে খালিক এই জলমহালের মাছ ধরে বিক্রি করেন ও সরকারি করাদি পরিশোধ করেন। কিন্তু একটি অসাধু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখার একজন অফিস সহকারি সুব্রত ধর এর সহযোগিতায় ১৪২৬ও ১৪২৭ বাংলা সনের খাজনা পরিশোধ না করেও বিধিবহির্ভূতভাবে খালিক জলমহালের মাছ ধরে  তা  বিক্রি করে আসছে। বিধান অনুযায়ী প্রতিবছরের রাজস্ব ও করাদি বছর শুরুর পূর্বে অর্থাৎ আগের বছরের ৩০ চৈত্রের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় এই জলমহালের ইজারা বাতিল করা হবে। সেই মতে ১৪২৬বাংলা সনের রাজস্ব ও করাদি ১৪২৫বাংলা সনের ৩০চৈত্রের  মধ্যে পরিশোধ করার কথা এবং ১৪২৭বাংলা সনের রাজস্ব ও করাদি ১৪২৬বাংলা সনের ৩০চৈত্রের  মধ্যে পরিশোধ করার কথা থাকলেও সমিতিটি  দুই বছর যাবত খাজনা পরিশোধ না করে অবৈধভাবে মাছ ধরে বিক্রি করে আসছে। সুব্রত ধরের আশীর্বাদে দুই বছরের   প্রায় ২৪-২৫ লক্ষ টাকার সরকারি রাজস্বের ফাইল  জেলা প্রশাসনের নজর এড়িয়ে যায়। পরবর্তীতে আব্দুল খালেক গত ১৪-ই জুন ২০২০ তারিখে উক্ত দুই বছরের খাজনা ও  করাদি  কিস্তিতে পরিশোধ করার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলে মন্ত্রণালয় 

৫-ই জুলাই ২০২০তারিখে জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার কে বিধি বিধান মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ প্রদান করে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর জেলা প্রশাসন উক্ত জলমহালের ইজারা বাতিল করে ক্যালেন্ডার করে। পরবর্তীতে সুব্রত ধর ও সেলিম সিন্ডিকেটের মন্ত্রে মুগ্ধ  খালিক গং এক বছরের রাজস্ব ও করাদি পরিশোধ করলে জেলা প্রশাসন জলমহালটি পুনরায় উক্ত সমিতির নামে বরাদ্দ বহাল করেন।

কিন্তু ১৪২৭ বাংলা সনের কোন রাজস্ব আদায় না করে এবং ১৪২৬ বাংলা সনের প্রথম দিকে নিয়ম অনুযায়ী খাজনা আদায় না করে দীর্ঘ  ১৬ মাস  অবৈধভাবে এই বিলের মাছ ধরা ও বিক্রি করার সুযোগ দান করায় জেলা প্রশাসনের প্রতি বিভিন্ন মৎস্যজীবি সমিতির মধ্যে  বিরূপ প্রশ্ন জেগেছে। কিসের বিনিময়ে জেলা প্রশাসন উক্ত সমিতিকে এই সুযোগ দিলেন? জনশ্রুতি আছে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এই ফাইল জেলা প্রশাসনের দৃষ্টির আড়াল করে রেখেছে সুব্রত সেলিম সিন্ডিকেট ।

এ বিষয়ে সুব্রত ধরকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তেজিত হয়ে মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেন। এর কিছুক্ষণ পরই সেলিম চৌধুরী নামে একজন ফোন করে নানান উচ্চবাচ্য করেন এবং আমাদের প্রতিনিধিকে দেখে নেবেন বলে হুমকি প্রদান করেন। অনুসন্ধানে জানা যায় , সেলিম চৌধুরী পিতা-মৃত আবদুর রহমান চৌধুরী,সাং-পূর্ব গগড়া,হাকালুকি, বরলেখা, মৌ;বাজার,  সাবেক মেম্বার বেলাল মেম্বার, সমিতির সভাপতি আব্দুল খালিক এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব বিভাগের অফিস সহকারি সুব্রত ধর  এই চারজনের একটি সিন্ডিকেট।  সুব্রত সামলায় অফিস এবং সেলিম সামলায় বড়লেখা উপজেলাধীন হাকালুকি হাওর ও তীরবর্তী মৎস্যজীবী সমিতি গুলো ।

তার সহযোগী হিসেবে থাকে সাবেক মেম্বার  বেলাল ও আব্দুল খালিক । ইতপূর্বে অন্য পরিচয়ে আব্দুল খালিক ও সেলিম চৌধুরীর সাথে মোবাইল ফোনে আমাদের প্রতিনিধি যোগাযোগ করলে তারা দুজনেই  জানায় গত ১৬ মাস যাবত রাজস্ব না দিয়ে কিভাবে উক্ত জলমহাল থেকে মাছ ধরছে এবং ইজারা বাতিল না হওয়ার মন্ত্রটাই বা  কি? সেলিম চৌধুরী বলেছে, সে এবং বেলাল মেম্বার অফিস সহকারি সুব্রত ধরকে মোটা অংকের টাকা দিয়েছে। আর সুব্রত ধর বিষয়টি এডিসি রাজস্ব এর নজর এড়িয়ে রাখেন। আব্দুল খালেক এসব এর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সেলিম চৌধুরী আমাকে যখন যা দিতে বলেছে আমি তা দিয়েছি। দু‘একবার আমি সুব্রত ধরকেও বিকাশে টাকা দিয়েছি । আমি প্রায় দেড় লক্ষ টাকা দিয়েছি। বেলাল মেম্বারও টাকার কথা উচ্চারণ না করে বলেছে ডিসি অফিস কি আর এমনি এমনি কাজ করে? তাদের সাথে তো একটা ভালো সম্পর্ক রাখতে হয় ।

এই বিষয়ে জেলা প্রশাসকের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি নুতন এসেছেন বলে এডিসি রেভিনিউ মল্লিকা দে এর মোবাইল নম্বার দিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জেনে নেওয়ার পরামর্শ দেন। মৌলভীবাজার জেলার এডিসি রেভিনিউ মল্লিকা দে এর সাথে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,সেলিম চৌধুরী ও সাবেক মেম্বার বেলালকে নিয়ে আ: খালিক কয়েকবার আমার কাছ থেকে সময় নিয়েছে।কিন্তু কোন তারিখেই রাজস্ব জমা দেয় নাই। সে‘জন্য আমরা বিধি মোতাবেক ইজারা বাতিল করে ক্যালেন্ডার করি।

গত ২২/০৭/২০২০ তারিখে আবারো সেলিম, বেলাল, আ: খালিক আরো সময় প্রার্থনা করলে আমি অপারগতা প্রকাশ করি। কিন্তু তাদের পিড়াপিড়িতে পরবর্তী রবিবার ২৬/০৭/২০২০ তারিখে মিনিমাম একবছরের খাজনা পরিশোধ করতে হবে এবং বাকি একবছরের খাজনা ০৪/০৮/২০২০ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে এই মর্মে আ: খালিকের অঙ্গীকারনামা রাখি ও বলি তারপর দেখা যাবে ইজারা বহাল বা পূণ:ইজারা দেওয়া যায় কিনা।

কিন্তু আ: খালিক ২৬/০৭/ ২০২০ তারিখেও রাজস্ব জমা দেয় নাই।  পরবির্তীতে গত ২৯/০৬/২০২০ তারিখে আ: খালিক এক বছরের রাজস্ব ও করাদির টাকা জমা  দিয়েছে । ইজারা বাতিল করে ক্যালেন্ডার হওয়ার পর আংশিক রাজস্ব আদায় করে ইজারা বহাল বা পূণ:ইজারা দেওয়া যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা জেলা প্রশাসনের এখতিয়ারভুক্ত।

সুব্রত ধর সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, সুব্রত ধর কে তা জানেন না। বিষয়টি নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (সায়রাত-১) জনাব তাজুল ইসলাম মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে উনি বলেন জলমহাল নীতিমালার বাহিরে যাওয়ার কারো কোন  এখতিয়ার নাই । এইরূপ কিছু মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনে ঘটে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।(চলবে)

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

one × 2 =