সাবমেরিন ক্যাবল কাটা পড়ার ঘটনায়- বিএসসিসিএল কর্তৃপক্ষের গ্রাহক ও ক্রেতা পর্যায়ে আর্থিক ক্ষতি নিয়ে ধ্রæমজাল

0
475

আনোয়ার হোসেন আনু: বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানী লিমিটেড(বিএসসিসিএল) কুয়াকাটা ল্যান্ডিং স্টেশনের ল্যান্ড ফাইবার ক্যাবল ও পাওয়ার ক্যাবল কাটা পড়ায় বিএসসিসিএল, গ্রাহক ও ক্রেতা পর্যায়ে আর্থিক ক্ষতির হিসাব নিকাশ নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠেছে। ক্যাবল কাটার ঘটনায় ক্ষতিসাধনের কথা উল্লেখ করে মামলা হলেও (বিএসসিসিএল) কর্তৃপক্ষ ক্ষয়ক্ষতির পরিমান তাতে উল্লেখ করেনি। বিএসসিসিএল’র দায়ের করা মামলায় স্থানীয় দুই ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ । এ ঘটনার ১৩ দিন অতিবাহিত হলেও বিএসসিসিএল কোম্পানীর তরফ থেকে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ভাবে কোন ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করেনি। একই সাথে কুয়াকাটা বীচ ম্যানহোল থেকে ল্যান্ডিং স্টেশন পর্যন্ত ৪ ধাপে নিরাপত্তা কর্মীদের দেখভালের দায়িত্ব থাকলেও তাদের ব্যর্থতার বিষয়েও কর্তৃপক্ষ কোন সিদ্ধান্তে পৌছায়নি। বিএসসিসিএল কর্তৃপক্ষের সাবমেরিন ক্যাবল লাইনের সূরক্ষায় গাফেলতি রয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। কুয়াকাটা ল্যান্ডিং স্টেশন (সিমিউই-৫) থেকে গত ৯ আগস্ট দীর্ঘ ১৩ ঘন্টা দেশের সর্বত্র ইন্টারনেটের ইনকামিং এন্ড আউটগোয়িং ট্রাফিক বিচ্ছিন্ন থাকার ফলে প্রতি সেকেন্ড ৭শ’ ৬০ গিগাবাইট ইন্টারনেট সরবরাহ বন্ধ ছিল। এই ১৩ ঘন্টায় প্রায় ৩৫ কোটি ৫৬ লাখ ৮ হাজার গিগাবাইট ইন্টারনেট সরবরাহ বন্ধ ছিল।

বিএসসিসিএল বিভিন্ন ¯øপে ২৮০ টাকা থেকে ৪২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে। অন্যদিকে গ্রাহক পর্যায় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা ৬শ’ টাকা থেকে ৮শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকে । এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানী ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররঅ। উচ্চ মূল নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে রয়েছে অভিযোগ।

উচ্চগতির ক্ষমতাসম্পন্ন (ব্রডব্যান্ড) কুয়াকাটা ল্যান্ডিং স্টেশন (সিমিউই-৫) থেকে পারসেকেন্ডে ১৬০০ গিগাবাইট সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে। অপরদিকে সম্প্রতি কুয়াকাটার স্টেশন থেকে ট্রাফিক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে কক্সবাজার (সিমিউই-৪) স্টেশন থেকে সক্ষমতার (পারসেকেন্ড ২০০ গিগাবাইট) সবটাই সরবরাহ করা হলেও তা ছিল ধীরগতি সম্পন্ন।

চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহের প্রায় ৬০% কুয়াকাটা ল্যান্ডিং (সিমিউই-৫) স্টেশন থেকে সরবরাহ করে আসছিল। ফলে বিএসসিসিএল কক্সবাজার থেকে চালু থাকা (সিমিউই-৪) সংকটময় মুহূর্তের দায় স্বীকার করে নিলেও যথাযথ গ্রাহক সেবা দিতে ব্যর্থ হয় কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, বিএসসিসিএল এর সাথে বিটিআরসি’র লাইসেন্সপ্রাপ্ত বিআইসিডবিøউ, আইআইজি, আইসিএক্স বা আইএসপিসহ যেসকল কোম্পানীর সাথে ব্যান্ডউইথ বিক্রির চুক্তি রয়েছে ওইসকল চুক্তিপত্রে ট্রাফিক বিচ্ছিন্নের পেনাল্টি বিষয়ে কোন শর্ত নেই বলে দাবি করেছে বিএসসিসিএল। ফলে ট্রাফিক বিচ্ছিন্নে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছেনা।

তবে বিএসসিসিএল এর একটি সূত্রে এবং মাঠপর্যায়ে থাকা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সিমিউই-৫ থেকে গত ৯ আগস্ট পাওয়ার ক্যাবল কাটা পড়ার ফলে রিপিটারে বিদ্যুৎ যাচ্ছিল না। এজন্য ব্যান্ডউইথ পেতে প্রায় ১৩ ঘন্টা সমস্যা হওয়ায় গ্রাহক পর্যায়ে ৫০ কোটি টাকার উপরে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

এটি টাকার অংকে বের করা অসম্ভব দাবি করে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অব বাংলাদেশ (আইসিপি) এর চেয়ারম্যান আমিনুল হাকিম বলেন, বিএসসিসিএল এর সাথে চুক্তির কোথাও পেনাল্টি বিষয়ে উল্লেখ না থাকায় গ্রাহক পর্যায় কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হলেও এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ করা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে কুয়াকাটা ল্যান্ডিং স্টেশনের উপ-মহাব্যবস্থাপক (চালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ) প্রকৌঃ মোঃ তারিকুল ইসলাম বলেন, আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি বিএসসিসিএল’র নিরুপণ করা সম্ভব নয়। এটি দেশের ভাবমূর্তিরও একটি বড় ক্ষতি।

তবে ধীরগতি থাকলেও ক্যাবল কাটা পড়ার ঘটনায় ইন্টারনেট সার্ভিস একেবারে বন্ধ ছিলনা। নিরাপত্তা কর্মীদের দায়িত্ব অবহেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমুদ্র থেকে ল্যান্ডিং স্টেশন পর্যন্ত ৬ কিঃ মিঃ জায়গায় আগে থেকে এমন কোন হুমকি ছিলনা।

তারপরেও ধাপে ধাপে এটি প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখা হয়। এরই মধ্যে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমাদেরকে না জানিয়ে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কাটার কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। এর জন্য আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে ক্যাবল কাটার ঘটনা নিছক দূর্ঘটনা বলে দাবী করেছেন কুয়াকাটা পৌর মেয়র। এমন দূর্ঘটনার জন্য সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানী তাদের নিজেদের দ্বায় এড়াতে পারেন না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বর্তমানে দেশে ১ হাজার ৭৫০ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হচ্ছে। এর অর্ধেকের বেশি আসে কুয়াকাটা দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন (সিমিউই-৫) থেকে।

উল্লেখ্য, বিএসসিসিএলের আওতাধীন দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলটির (সিমিউই-৫) বীচ-ম্যানহোল থেকে ল্যান্ডিং স্টেশন পর্যন্ত ল্যান্ড ফাইবার ক্যাবল ও তৎসংলগ্ন পাওয়ার ক্যাবল কুয়াকাটার আলীপুর বাজারের কাছে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত খননযন্ত্র দ্বারা আকস্মিকভাবে কাটা পড়ে। এতে সিমিউই-৫ সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে চালু ট্রাফিক ১৩ ঘন্টা বিচ্ছিন্ন ছিল।  

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

six + fourteen =