বনানীতে নোয়াখাইল্লা আনোয়ার ও আকরামের হোম ডেলিভারিতে মাদক ব্যবসা

0
753

হাবিব সরকার স্বাধীন: করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সারা দেশ কার্যত লকডাউনে থাকলেও জরুরি পণ্যবাহী যানবাহনে মাদকদ্রব্য বহন করছে কারবারিরা। দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সবজির ট্রাক, সিমেন্ট বা পাথরবাহী ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের মাদক রাজধানীতে ঢুকছে। পরে এসব মাদকদ্রব্য রাজধানীর মাদকসেবীদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ, র‌্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে। অপরাধ বিচিত্রা অনুসন্ধানের  জানা যায়। লকডাউনের কারণে অধিকাংশ যানবাহন ও যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও থেমে নেই মাদক কারবার। জরুরি সেবার আওতায় চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনে মাদক বহন করছে কারবারিরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বেশি ব্যস্ত থাকায় তারা প্রায় নির্বিঘেœ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মাদক বহন করছে। বিশেষ করে রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, সিলেট ও কুমিল্লা জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নিত্যপণ্যের আড়ালে মাদকের চালান রাজধানীতে ঢুকছে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় দুটি পণ্যবাহী ট্রাক থেকে বিপুল পরিমাণ গাঁজা ও ফেন্সিডিল উদ্ধার করেছে র‌্যাব। এছাড়া গত এক মাসের ‘লকডাউনকালে’ র‌্যাব ও পুলিশের হাতে অন্তত অর্ধশত মাদক কারবারি গ্রেপ্তার হয়েছে। তবে করোনা সংকটের কারণে বেশিরভাগ কারবারি অধরাই থেকে যাচ্ছে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজড ক্রাইম শাখার (সিরিয়াস ক্রাইম) অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার। পুলিশ ও গোয়েন্দারা এখন করোনাসংশ্লিষ্ট অপরাধ দমনে ব্যস্ত। এ সুযোগটাই পুরোপুরি কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে মাদক কারবারিরা। তারা বিভিন্ন জরুরি পণ্যের হোম ডেলিভারির সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য মাদকসেবীদের ঘরে পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকায় তল্লাশি কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও কারবারিরা নানা কৌশলে মাদকের কিছু চালান রাজধানী ঢাকায় নিয়ে আসছে। এখানে আসার পর তারা খুচরাসেবীদের কাছে সরবরাহ করছে। করোনা সংকটের আগে পুলিশ যেমন ক্লোজ কন্টাক্টে গিয়ে তল্লাশি করতে পারত, এখন সেই সুযোগ নেই। নিজেকে নিরাপদ সোশ্যাল ডিসট্যান্স বজায় রেখে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

যার কারণে কোনো মাদক কারবারির দেহ তল্লাশি করা যাচ্ছে না বিধায় তারা সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। ডিএমপির মাদক নিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, করোনা সংকটকালে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা ও বিয়ার। এরপরই মদ ও ফেন্সিডিলের অবৈধ বিক্রি চলছে। লকডাউনের কারণে অধিকাংশ মানুষ ঘরে অবস্থান করায় অনলাইনে বিভিন্ন পণ্যের বুকিং নিয়ে তা সরবরাহ করছে অনেক প্রতিষ্ঠান।

এ সুযোগে অনেক কারবারি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অগ্রিম টাকা নিয়ে মাদকসেবীর কাছে মাদকদ্রব্য পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে। রাজধানীর  গুলশান, বনানী, মহাখালী ডিএস, ও মোহাম্মদপুর এলাকায় সবচেয়ে বেশি হোম ডেলিভারি সেবা দিচ্ছেন ভাঙ্গারি আকরাম, নোয়াখাইল্লা আনোয়ার, নাটাই আলম, মিজান, রুস্তম, একজন মাদক ক্রেতা বলেন চশমা আকরাম এর কললিস্টে  দেখা যাবে শত শত মাদক বিক্রেতার নাম্বার।

এ বিষয়ে একাধিক আসামি আকরাম কে প্রশ্ন করা হলে তার সোজা উত্তর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি না চায় তাহলে কি তা করা সম্ভব!!  আমি এলাকার সবচাইতে ক্ষমতাবান কোভির গাজীর মাল বিক্রি করি। অনুসন্ধানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে একটি বাইকে করে মাদক, ইয়াবা, ফেন্সিডিল, আর সকল মাদক দ্রব্য তার গাড়ির মাঝে থাকে।  সে বুঝিয়ে দিচ্ছে কোভিদ গাজীর বনানীর সেরা।

করোনা সংকটের আগে থেকেই হোম ডেলিভারি সার্ভিস চালু ছিল। বিশেষ করে যেকোনো ব্র্যান্ডের মদ, ইয়াবা ও গাঁজা পৌঁছে দিত কারবারিরা। স¤প্রতি করোনাভাইরাসের কারণে এ ধরনের সার্ভিস বেড়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে কারবারিরা চড়া মূল্যে মাদক বিক্রি করছে।

এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ডিএমপির অধিকাংশ কর্মকর্তা করোনা সংকট মোকাবিলায় দায়িত্ব পালন করছেন। গুরুত্বপূর্ণ চুরি, ডাকাতি ও খুনের ঘটনার বাইরে অন্য কোনো বিষয়ে তদন্ত বা তল্লাশি কার্যক্রম নেই বললেই চলে। তাছাড়া একজন পুলিশ কর্মকর্তা বা সদস্য এক দিন দায়িত্ব পালন করার পর অন্তত তিন থেকে চার দিন বাসায় অবস্থান করছেন। যার কারণে জনবল সংকটও রয়েছে। এসব দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে অবৈধ মাদক কারবারিরা কারবার চালিয়ে যাচ্ছে।

র‌্যাবের একাধিক কর্মকর্তা জানান, লকডাউনের মধ্যে তারা বেশকিছু মাদকের চালান জব্দ করেছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় দুটি অভিযানে কুমিল্লা থেকে ঢাকাগামী পণ্যবাহী একটি ট্রাক থেকে ৫২ কেজি গাঁজা ও সিমেন্টবাহী আরেকটি ট্রাক থেকে ১৭০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়।

এ দুটি ঘটনায় চারজন গ্রেপ্তার হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, কুমিল্লার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গাঁজা ও ফেন্সিডিল সংগ্রহ করে তারা রাজধানীর কারবারিদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছিল। জরুরি পণ্য সেবার আওতায় তারা কোথাও বাধা পায়নি।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিজেদের পেশাদার মাদক কারবারি সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য হিসেবে জানিয়েছে তারা। তদন্তে ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ট্রাকটি লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর সীমান্ত থেকে পাথরবোঝাই করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করে।

পথিমধ্যে জেলার হাতিবান্ধা এলাকার ফেডাসন বাজারের কাছে বিশেষ কায়দায় ট্রাকে বোঝাইকৃত পাথরের মধ্যে গাঁজা ও ফেনসিডিল বোঝাই করে। এই কৌশলে দেশের উত্তরাঞ্চলের সীমান্ত এলাকা থেকে বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্যের বড় বড় চালান এনে তারা বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করেছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

9 + two =