রাজশাহীতে অক্সিজেন সংকটে মরলো ১৪ কোটি টাকার মাছ

0
364

রাজশাহীতে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পানিতে অক্সিজেন সংকটে প্রায় ৬১৬ মেট্রিক টন মাছ মরে গেছে। রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় তিন দিনে ৪ হাজার ৯৩০ জন মাছচাষির প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ও বুধবার রাজশাহীতে বৃষ্টি হয়েছে। আকাশ ছিল মেঘলা। এ কারণে পানিতে অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দেয়। এতে পুকুরের মাছ মরে ভেসে উঠতে থাকে। রাজশাহীর আশপাশের জেলাগুলোতেও একইভাবে পুকুরের মাছ মরে গেছে। এতে চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেন পবা উপজেলার চাষিরা। এ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মাছ চাষ হয়। এছাড়া জেলার দুর্গাপুর, মোহনপুর, বাগমারা ও গোদাগাড়ীসহ সব উপজেলাতেই মাছের ক্ষতি হয়েছে। যেসব পুকুরে বড় আকারের মাছ ছিল সে পুকুরেই বেশি মাছ মরেছে। বড় বড় মাছ নামমাত্র মূল্যে বিক্রির চেষ্টা করেছেন চাষিরা।

পবা উপজেলার মাছ চাষি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বৃষ্টির পর পুকুরে গিয়ে মাছ মরে ভেসে উঠতে দেখি। চোখের সামনেই লাখ টাকার মাছ মরে গেছে। পরে মাছগুলো কিছু অংশ তুলে বাজারে নেন। বাকি মাছ পুকুরে পচে গেছে।

মোহনপুর উপজেলার মৎসচাষী আব্দুল মতিন বলেন, সকালে জানতে পারি পুকুরে মরা মাছ ভাসছে। বিষয়টি জেনে পুকুরে গেলে ততক্ষণে দেখি অনেক মাছ মরে ভেসে উঠে। পুকুরের অর্ধেকের বেশি মাছ মরে গেছে। বাকি কিছু মাছ পকুরে রয়েছে। প্রায় ৪ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।

কেশরহাট মাছের আড়ৎ মালিক সমিতির সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন বলেন, বাজারে হঠাৎ অতিরিক্ত মাছের আমদানি হয়। প্রায় মাছ পচে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ঢাকায় পাঠানোর উপযোগী ছিল না। মোহনপুর ছাড়াও পুঠিয়া, দুর্গাপুর, পবা, বাগমারা থেকেও মাছ নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে ৩ থেকে ৪ কেজি ওজনের রুই, কাতলা ও সিলভার কার্প মাছ ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফিশারিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এম মনজুরুল আলম বলেন, সূর্য না ওঠার কারণে পুকুরের উদ্ভিদকণা সালোকসংশ্লেষণ করতে পারেনি। উদ্ভিদকণা কার্বনডাই অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন ছাড়তে পারেনি। এ কারণে পুকুরে অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দেয়। আর করোনাকালে চাষিরা মাছ বিক্রি করতে পারেননি। পুকুরে অতিরিক্ত মাছ ছিল। তাই অক্সিজেন স্বল্পতায় মাছ মরতে শুরু করে। চাষিদের আসলে কিছু করার ছিল না।

বাগমারা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন জানান, দুর্যোগপরবর্তী সময়ে পুকুরগুলোতে অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দেয়। পুকুরে অতিরিক্ত মাছ থাকলে মাছ মরার সম্ভাবনা বেশি। তবে যাদের পুকুরে পরিমিত মাছ আছে, তাদের ক্ষতি কম হবে। তাই এখন পুকুরের মাছ কমিয়ে ফেলতে হবে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা জানান, গত কয়েকদিন আবহাওয়া খারাপ ছিল। রাজশাহীর অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা পুকুরে অতিরিক্ত খাবার দিয়ে মাছ চাষ করেন। যার কারণে পুকুরগুলোতে অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দেয়। আর এতেই মাছ মারা গেছে। এছাড়া অনেকেই পুকুরে অতিরিক্ত মাছ চাষ করেন। বর্ষার আগেই পুকুরের মাছ কমিয়ে ফেলা উচিত।

তিনি জানান, তারা ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন। এতে বলা হয়েছে, দুই দিনে রাজশাহীর প্রায় ৬১৬ মেট্রিক টন মাছ মারা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষির সংখ্যা ৪ হাজার ৯৩০ জন। তাদের ১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এটা কম-বেশি হতে পারে। ক্ষয়ক্ষতির এই হিসাব মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য অধিদপ্তরে পাঠানো হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

13 + nine =