রাজধানী ঢাকায় মাত্র ২ শতাংশ সবুজ অবশিষ্ট রয়েছে: সবুজ আন্দোলন

0
327

১লা সেপ্টেম্বর ২০২০খ্রি: মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ২য় তলায় জহুর হোসেন চৌধুরী হল-এ পরিবেশবাদী সামাজিক সংগঠন সবুজ আন্দোলন’র উদ্যোগে ‘বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন ও ‘গ্রীনম্যান অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার বলেন, “বাসযোগ্য ঢাকা” এ যেন এক কল্পকাহিনী। ঢাকা শহরে বসবাসরত সকল নাগরিক খুঁজে ফেরেন একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার জায়গা। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ঢাকা শহর আজ বসবাসের অনুপযোগী শহরে পরিণত হয়েছে। কিন্তু একটি শহর গড়তে জলাশয় ও খোলা জায়গা, সবুজ এলাকা এবং পরিকল্পিত অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। বিগত ২০ বছরে ঢাকা শহরে স্থাপত্য নির্মাণ বৃদ্ধি পেলেও কমেছে জলাশয় ও ফাঁকা জায়গা। বিভিন্ন পরিবেশবাদী সামাজিক সংগঠনের তৎপরতায় শহরের জনগণ পরিবেশের বিপর্যয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়ায় সবুজায়নের প্রতি দিনদিন গুরুত্ব দিচ্ছে।

সবুজ আন্দোলন তথ্য ও গবেষণা পরিষদের সমীক্ষা অনুযায়ী ২০০০ সাল হতে ঢাকা শহরের প্রায় ৭০ ভাগ পাকা ঘরবাড়ি আচ্ছাদিত ছিল। ২০২০ সালের মে মাস পর্যন্ত তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৮৩ ভাগ। বিগত সময়ে জলাশয় ও খোলা জায়গা প্রায় ১৫ ভাগ থেকে কমে ৬ ভাগের নিচে নেমে এসেছে। তবে সবুজায়ন বেড়েছে ৫ ভাগ।

সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজধানীর ৩০৫.৮৭১ বর্গ কিলোমিটারের ১৩৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে সবুজ এলাকা জলাশয় খোলা উদ্যান ও স্থাপনা নির্মাণ বিবেচনায় রিমোট সেন্সিং ইমেজ বিশ্লেষণ ও জিআইএস প্রযুক্তির মাধ্যমে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের এই সমীক্ষা চালানো হয়।

সমীক্ষা অনুযায়ী ঢাকা শহরের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, রমনা পার্ক, মগবাজার, লালবাগ, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, বসিলা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, দুয়ারীপাড়া, রাজাবাজার, ইন্দিরা রোড, শেরে বাংলা নগর ও মিরপুর সেনানিবাস এলাকায় সবুজায়নের পরিমাণ চোখে পড়ার মতো।

যে কোন শহরকে বসবাসের উপযোগ্য রাখতে মোট ভূমির ১৫-২০ শতাংশ সবুজ ভূমি, ১০-১৫ ভাগ জলাশয় এবং হাঁটা দূরত্ব বজায় রাখতে পার্ক কিংবা খোলা জায়গা আবশ্যক। কিন্তু বর্তমানে রাজধানীতে ৮৩ শতাংশই দালানকোঠা মাত্র ২ শতাংশ সবুজ অবশিষ্ট রয়েছে।

বাপ্পি সরদার ঢাকা শহরের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় সবুজ আন্দোলন’র পক্ষ থেকে বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে নি¤েœাক্ত প্রস্তাবনা তুলে ধরেনÑ

১.             সবুজায়ন বৃদ্ধি করতে ঢাকার চারপাশে বহমান নদী ও খালের পাড় জুড়ে, রেলের পতিত জমি ও রেললাইনের দুই ধারে ও অনুমোদিত সকল আবাসন প্রকল্পে ২৫% বনায়ন নিশ্চিত করা।

২.             নদী ও খালের পানিকে দূষণ মুক্ত রাখতে ইটিপি ফর্মুলা শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে।

৩.            শহরের সকল মার্কেট ও দোকানের সামনে নূন্যতম ২টি করে গাছের টব ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, ছাদ-কৃষি  ও ছাদ-বাগান বৃদ্ধি করণ।

৪.             বায়ু দূষণ সংক্রান্ত আইন-২০১৯ বাস্তবায়ন এবং বায়ু দূষণ কমাতে শহরের চারপাশে অবস্থিত সকল ইটভাটা বন্ধ, শহরের রাস্তাকে দিনে দুইবার ঝাড়– ও সপ্তাহে একদিন পানি দিয়ে ধৌত নিশ্চিত করা।

৫.             ঢাকার শহরের সকল খাল দখল মুক্ত করা, খাল খনন এবং শহরের চার পাশের নদীর ব্যবহার বাড়াতে বেসরকারিভাবে নৌযান চলাচল বাড়াতে হবে।

৬.            বর্জ্য ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ই-বর্জ্য রাখার জন্য ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করতে হবে এবং মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ইনসিনেরেটর ব্যবহার করা, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

৭.             শিক্ষাক্ষেত্রের সর্বস্তরে পাঠ্যসূচিতে পরিবেশ শিক্ষা ও আইন অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৮.            ঢাকার রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে মানসম্পন্ন গণপরিবহন ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার,

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সবুজ আন্দোলন’র উপদেষ্টা আব্দুল কুদ্দুস বাদল, মহাসচিব মহসিন সিকদার পাভেল, অর্থ-পরিচালক ওমর ফারুক চৌধুরী, পরিচালক ও কার্যনির্বাহী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাসিরুল ইসলাম নাসির, সাধারণ সম্পাদক উদয় খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী হুমায়ুন কবির, আনোয়ার সাদাত সবুজ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে জলবায়ু পরিবর্তন ও বায়ুদূষণ রোধে গবেষণায় স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার, বন সংরক্ষণ ও জনসচেতনতা তৈরিতে একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার হোসেন সোহেল, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের স্টাফ রিপোর্টার জয়শ্রী ভাদুড়ী, নাগরিক টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার ফারাহ হোসাইন, সময় টেলিভিশনের রিপোর্টার কেফায়েত উল্লাহ চৌধুরী (শাকিল) এবং হোমিওপ্যাথি গবেষণা ও সবুজায়নে ডা. মো: মাহতাব হোসাইন মাজেদ ‘গ্রীনম্যান অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ প্রদান করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

6 + one =