জোয়ারের পানি ঠেকাতে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ সংস্কারে নেমেছে হাজারো গ্রামবাসী

0
369

সাতক্ষীরার আশাশুনিতে তীব্র জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কারে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজে নেমেছে হাজারো গ্রামবাসী। সম্প্রতি আশাশুনি উপজেলার উপকূলীয় প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নে উপকূল রক্ষা রিং বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় দুই ইউনিয়নের ৩৯টি গ্রাম। ভেসে যায় ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। এর আগে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সময়ও উপকূলীয় এসব এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। যা আজও সংস্কার করা হয়নি।

বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের নেতৃত্বে প্রতাপনগর গড়িবিল খাল সংলগ্ন এলাকায় লোকালয়ে পানি প্রবেশ ঠেকাতে ২০০ ফুট বাঁধ রক্ষায় কাজ শুরু করেছে এলাকাবাসী। অন্যদিকে শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালী থেকে হিজলিয়া বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার বাঁধ তীরবর্তী এলাকায় বিকল্প রিং বাঁধ দেয়ার কাজ শুরু করা হয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিলের নেতৃত্বে সেখানে কাজ করছেন হাজারো গ্রামবাসী।

প্রতাপনগর গ্রামের বাসিন্দা সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের প্রভাষক ইদ্রিস আলী জানান, গত ১৭ আগস্ট নদীর পানির তীব্র স্রোত ও বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয় প্রতাপনগর ইউনিয়নের ১৭টি গ্রাম। গ্রামের মধ্য দিয়ে এখন জোয়ারভাটা ওঠানামা করে। ভেঙে গেছে রাস্তাঘাট। আম্ফানে ভেঙে যাওয়া বাঁধ এখনও সংস্কার করা হয়নি। উপকূলবাসীর দুর্ভোগের শেষ নেই। কোনো উপায় না পেয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ রক্ষায় কাজ শুরু করেছে গ্রামবাসী।

প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, আম্ফানে ভেঙে যাওয়া উপকূল রক্ষা বাঁধগুলো এখনও সংস্কার করা হয়নি। গ্রামের মধ্য দিয়েই জোয়ারভাটা চলছে। নিরুপায় হয়ে গ্রামবাসী লোকালয়ে পানি প্রবেশ ঠেকাতে বাঁশ দিয়ে ও মাটির বস্তা ফেলে বিকল্প রিং বাঁধ দেয়ার কাজ করছে। তিনদিন আগে থেকেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁশ ও বস্তা দিয়ে সহযোগিতা করেছে। বাকি কাজ ইউনিয়ন পরিষদের বাস্তবায়নে করা হচ্ছে। বেঁচে থাকার তাগিদে প্রতিদিন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করছে ৫০০ জন।

অন্যদিকে শ্রীউলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল জানান, হাজরাখালী এলাকা থেকে হিজলিয়া পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার রিং বাঁধ দেয়া হচ্ছে। ৮-১০ হাজার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁশ ও বস্তা দিয়ে সহযোগিতা করতে চেয়েছিল। তবে এখনও কোনো সহযোগিতা করেনি।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তিন মাস অতিবাহিত হলেও হাজরাখালী এলাকার ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধটি নির্মাণ করা যায়নি। সরকার লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলেও বাঁধ নির্মাণ শেষ পর্যন্ত সম্ভব না হওয়ায় এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সড়কের পাশে এই বিকল্প রিং বাঁধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত ১৫ দিনে শ্রীউলা ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী আশাশুনি সদর ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বসবাসের উপযোগী না থাকায় অসংখ্য মানুষ ইউনিয়ন ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ (আশাশুনি) এর নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু সরকার বলেন, শ্রীউলা ও প্রতাপনগর ইউনিয়নের তিনটি পয়েন্ট দিয়ে নদীর জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। বাঁধটি সংস্কারের জন্য সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কাজ শুরু করবে বলে আমাদের জানিয়েছে। প্রাথমিকভাবে লোকালয়ে পানি প্রবেশ ঠেকাতে বিকল্প উপায় হিসেবে রিং বাঁধ দিতে গ্রামবাসী কাজ করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বাঁশ ও বস্তা দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eighteen − two =