বাংলাদেশের জন্য বিদেশে কর্মী পাঠানো চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দিয়েছে

0
317

করোনা মহামারি ও বৈশ্বিক মন্দার কারণে বিশ্বব্যাপী শ্রমবাজার হুমকিতে পড়েছে। ফলে অন্যতম কর্মী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য বিদেশে কর্মী পাঠানো চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ একটি চ্যালেঞ্জ। এরপরেও আমরা আশাবাদী। আমরা জানি রাতের পর দিন আসে এবং ওই দিনটা খুব শিগগিরই আসবে।

বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে কার্যপ্রণালী বিধির ৩০০ বিধিতে বিবৃতি প্রদানকালে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এ কথা বলেন। শ্রমবাজার নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নানা সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় এ সম্পর্কিত বিভ্রান্তি দূর করতে এবং শ্রমবাজারের সবশেষ তথ্য তুলে ধরতে এ বিবৃতি বলে জানান মন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, আমরা দক্ষ শ্রমশক্তি প্রস্তুত রাখতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। মন্দা পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ শ্রমশক্তিকে যেন বিদেশে পাঠাতে পারি সে লক্ষ্যে কাজ করছি। যদি করোনা পরবর্তী বাজারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে পারি, তাহলে প্রবাসী আয় প্রবাহ অব্যাহত থাকবে।

শ্রমবাজারের সর্বশেষ পরিসংখ্যান তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, বিগত বছরগুলোর হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে প্রায় প্রতি মাসে ৬০ হাজার কর্মী বিদেশ গেছেন। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত চার লাখ ৬০ হাজার কর্মী বিদেশ গেছেন। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত মাত্র এক লাখ ৭০ হাজার কর্মী বিদেশ গেছেন। এর কারণ চলতি বছরের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত কোনো কর্মী বিদেশে যেতে পারেনি বললেই চলে। অপরদিকে করোনার কারণে বিভিন্ন দেশের অভিবাসন সেক্টরে টাকা অনিয়মিত হওয়ায় নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কারণে আমাদের কর্মীদের একটি ক্ষুদ্র অংশ দেশে ফিরে এসেছে।

প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্যানুযায়ী, গত ১ এপ্রিল থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ১১ হাজার ১১১ প্রবাসী দেশে ফেরত এসেছেন। তাদের অনেকের কাজের মেয়াদ শেষ বা কাজ না থাকায় দেশে ফেরত এসেছেন। যদিও আশঙ্কা করা হয়েছিল অর্থনৈতিক মন্দা এবং করোনার প্রভাবে প্রধানকর্মী নিয়োগকারী দেশ সমূহের শ্রমবাজার বিপর্যস্ত হবে। ফলে অনেক কর্মী বেকার হয়ে পড়বেন। তবে আশার কথা এখন পর্যন্ত ফেরত আসা কর্মীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠেনি। এ ক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিদেশ মিশন ও দূতাবাস একযোগে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে।

করোনাকালে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, যেসব কর্মী ফেরত এসেছেন বা আসবেন তাদের অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসন এবং পুনকর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। করোনা সঙ্কট মোকাবিলায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ১৩ কোটি টাকা জরুরি ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া বিপদগ্রস্ত কর্মীদের দেশে আনা এবং বিদেশ ফেরত কর্মীদের পুনর্বাসন এবং কর্ম সময়পযোগী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অথবা মারা যাওয়া কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের নিজ জেলা থেকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে সহজ শর্তে মাত্র ৪ শতাংশ সরল সুদে পাঁচ বছর মেয়াদী পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হচ্ছে। বিদেশ ফেরত কর্মীদের ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী আরও ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এছাড়াও বিদেশ ফেরত কর্মীদের সামগ্রিক কল্যাণ ও বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ৪২৫ কোটি টাকার প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

2 + 19 =