জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচির আজ ১৮তম দিন, আমরণ অনশনের ৮ম দিন

0
543

প্রাথমিক শিক্ষা হলো একটি দেশের শিক্ষার মূল ভিত্তি। কিন্তু দুঃজনক হলেও সত্যি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অদৃশ্য জটিলতার কারণে আমরা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ২০১৮ এর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ বঞ্চিত। নিয়োগ বাণিজ্য ও নিয়োগের দীর্ঘসূত্রিতা যার অন্যতম প্রধান কারণ। ২৪ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে আমরা মাত্র ৫৫২৯৫ জন লিখিত পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হই যা মোট অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর মাত্র ২.৩%। এদের মধ্যে ১৮১৪৭ জনকে চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করা হয়েছে যা মোট পরীক্ষার্থীর মাত্র ০.৫৬%। এর মধ্যে থেকেও ৩৫০০ এর অধিক কর্মস্থলে যোগদান করেননি।

মাননীয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন স্যার ২০১৮ সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার পর সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন, “২৮৮৩২টি শূণ্য পদ রয়েছে।” আমরা উচ্চ শিক্ষিত মেধাবী ৩০ হাজার প্যানেল প্রত্যাশী অবিলম্বে নিয়োগের ঘোষণা চাই। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবেই। আমরণ অনশনের ৮ম দিনে নতুন করে আরো ৯ জন সহ এ পর্যন্ত প্রায় ৫৪ জন প্যানেল প্রত্যাশী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ্য ১১ জন ঢাকা মেডিকেল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

শূন্য পদের ভিত্তিতে অপেক্ষমান তালিকা হতে প্যানেল নিয়োগের যৌক্তিকতা:
 ১৬ই জুন ২০১৬, ডিপিও এর দেয়া তথ্য মতে প্রতিদিন ২০০ জন শিক্ষক অবসরে যান।
 ১৮ হাজার সহাকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হতে স্থায়ী ভাবে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়াও ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সেখানে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি দেওয়া হবে। যাতে করে সহাকারী শিক্ষকের শূন্য পদের সংখ্যা আরো বাড়বে।
 বাংলাদেশ প্রাইমারী এডুকেশন অ্যানুয়াল সেক্টর পারফরমেন্স-২০১৯ এর রিপোর্ট অনুযায়ী মাত্র ১ জন শিক্ষক দ্বারা শিক্ষাদান চলছে ৭৪৯টি বিদ্যালয়ে। ২ জন ও ৩ জন শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে যথাক্রমে ১১২৪টি ও ৪০০৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
 রীট জটিলতার কারণে ২০১৪ হতে ২০২০ সাল অর্থাৎ ৬ বছরে মাত্র ১টি নিয়োগ সম্পন্ন করতে পেরেছেন। এই সময়ে সেশনজটের কবলে পড়ে আমরা যারা মূল্যবান বয়স হারিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছি, আমরা কি দোষ করেছি? কেন নিয়মিত বিজ্ঞপ্তি হতে বঞ্চিত হয়েছি? কেন সংবিধানে উল্লেখিত আইনের সাম্যতা পাবো না?
 ইতোমধ্যে ১৮০’র অধিক মাননীয় সংসদ সদস্য, মন্ত্রী আমাদের যৌক্তিক দাবী প্যানেল ২০১৮ সহকারী শিক্ষক নিয়োগদানের জন্য জোড়ালো সুপারিশ করেন।
 দেশে শূন্যপদের ভিত্তিতে প্যানেলে নিয়োগ বিসিএস, ব্যাংক-বীমা, স্বাস্থ্য খাতসহ আরো অনেক সেক্টরে চালু আছে। প্রাথমিকেও আগে প্যানেল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
 করোনাকালীন সময়ে ২০১৭ সালে ভাইবার উত্তীর্ণ অপেক্ষমান তালিকা হতে ৫০৫৪ জন নার্স ও ৩৯ তম বিসিএস হতে ২০০০ জন নন ক্যাডার ডাক্তারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
 মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা দেশরতœ শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন মুজিববর্ষে কেউ বেকার থাকবে না। তিনি ২০১৩ সালে প্রায় ২৬ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একযোগে জাতীয়করণ করেন।
 সম্প্রতি অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের ১২৩৫টি উল্লেখযোগ্য অনিয়ম ও ত্রুটির প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং প্যানেল পদ্ধতি প্রবর্তনের জোরালো সুপারিশ করেন।

সাবেক শিক্ষা সচিব সহ অনেক আইনজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ বলেছেন অপেক্ষমান তালিকা হতে নিয়োগ দিতে আইনী জটিলতা নেই। মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব এম. এ. মান্নান বলেন, “বারবার পরীক্ষা না নিয়ে অপেক্ষমান তালিকা হতে প্যানেলে নিয়োগ দেয়াই উত্তম।” প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আতিক এস বি সাত্তার স্যার বলেছেন আমরা প্যানেলে নিয়োগ প্রত্যাশীরা যোগ্য। তাই আমরা মুজিববর্ষের অঙ্গীকার রক্ষা ও করোনাকালীন প্রাথমিক শিক্ষা সংকট নিরসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট জোরালো আবেদন জানাই। শূন্যপদের ভিত্তিতে অপেক্ষমান তালিকা হতে সার্কেল প্যানেলের মাধ্যমে নিয়োগ দিয়ে ২০১৮ প্যানেল প্রত্যাশীদের বেকারত্ব হতে মুক্তি দিন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

20 + 16 =