সুনামগঞ্জে অসহায় প্রতিবন্ধিদের দেখার কেউ নেই

0
535

হাওরাঞ্চল প্রতিনিধি সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার ক্ষুদ্র একটি গ্রামের নাম পাতারগাঁও। এই গ্রামে রয়েছে অনেক অসহায় প্রতিবন্ধি নারী ও শিশু। তারা সবাই শারীরিক,মানসিক,দৃষ্টি ও বাক প্রতিবন্ধি। কিন্তু অসহায় এই প্রতিবন্ধিদের অনেকের ভাগ্যে আজ পর্যন্ত জোটেনি সরকারের দেওয়া ভাতাসহ অন্য কোন সুযোগ-সুবিধা। তবে স্থানীয় চেয়ারম্যান,মেম্বার ও উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ে গিয়ে বারবার মাথা টুকেছেন পাতারগাঁও গ্রামের অসহার প্রতিবন্ধিদের বাবা-মাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। কিন্তু কেউ তাদের দিকে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়নি বলে জানাগেছে।

সরেজমিন জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নে অবস্থিত প্রতিবন্ধিদের গ্রাম পাতারগাঁয়ে গিয়ে কথা হয় ৪জন অসহায় প্রতিবন্ধি শিশুদের মা ও বাবার সাথে। তারা জানায়-সরকারের প্রতিবন্ধি ভাতাসহ নানান সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলেও কেউ থেমে নেই। জায়গা-জমি ও বাড়িঘর বিক্রি করে অনেক অভিভাবকেরা তাদের প্রতিবন্ধি সন্তানদেরকে সুস্থ্য করার জন্য প্রতিদিন ছুটছেন ডাক্তার ও করিরাজের কাছে। কিন্তু ভাল চিকিৎসকের সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে সুফল পাচ্ছেনা তারা। তাই প্রতিবন্ধিদেরকে নিয়ে মহাবিপদে রয়েছে তাদের মা-বাবাসহ পরিবারের লোকজন।

এব্যাপারে পাতারগাঁও গ্রামের শাহেরা বেগম বলেন- আমার প্রতিবন্ধি মেয়ে জহুরা বেগমের বয়স ৯বছর। প্রায় ৩বছর আগে হাত-পায়ে খিছুনী উঠে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করার পর তার জ্ঞান ফিরে আসে। কিন্তু তার হাত ও পা সোজা করতে পারেনা। ভেবে ছিলাম কিছু দিন গেলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আমার মেয়ে পুরোপুরি সুস্থ্য হয়নি। পরে জায়গা-জমি বিক্রি করে শহরে গিয়ে ভাল ডাক্তার দেখাই। কিছু দিন চিকিৎসা করার পর ডাক্তার জানায় আমার মেয়েকে সুস্থ্য করা সম্ভব না। বর্তমানে সে সোজা হয়ে চলা ফেরা করতে পারে না। ওকে নিয়ে আমাদের খুবই কষ্ঠ।

এই গ্রামের তফুরা বেগম বলেন- তার নাতি সুমন মিয়ার বয়স ৬বছর। সে কথা বলতে পারেনা। জন্মের পর থেকেই তার এই অবস্থা। স্থানীয় ডাক্তার ও কবিরাজের কাছে নিয়ে ঝাড়-ফুক ও চিকিৎসা দিয়েছি কিন্তু ভাল হয়নি। টাকার অভাবে শহরে নিয়ে ভাল ডাক্তার দেখাতে পারছিনা। চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে অনেক বার গিয়েছি। তারা কোন গুরুত্ব দেয়না। আমরা গরীব বলে আমাদের কথা কেউ শুনতে চায়না। তাই অসহায় নাতিকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে।

পাতারগাঁও গ্রামের মিনারা বেগম বলেন- তার ছেলে রফিক মিয়ার বয়স ৩বছর। সে জন্মগত ভাবেই বোবা ও মানসিক ভাবে অসুস্থ্য। তাকে সামলে রাখতে খুবই কষ্ঠ হয়। ডাক্তার দেখিয়ে ছিলাম বলেছে অনেক টাকা লাগবে। কিন্তু আমার কাছেতো টাকা নাই। তাই আমার মানসিক ছেলের সু-চিকিৎসা করতে পারছিনা।

এই গ্রামের দিন মজুর খালেক মিয়া বলেন- তার ছেলে ফয়সাল মিয়ার বয়স ১২বছর। সে বোবা,কানে কম শুনে ও মানসিক সমস্যা আছে। কারো কথা শুনতে চায় না,মানতে চায় না। সবাইকে মারধর করে। কিন্তু টাকার জন্য চিকিৎসা করাতে পারছিনা। সমাজ সেবা অফিসে গিয়ে ছিলাম ভাতার জন্য। বলেছে ভাতা পেতে হলে তাদেরকে টাকা দিতে হবে তাই ফিরে এসেছি। কারো কাছে কোন সহযোগীতা পাই না। আল্লাহ ছাড়া আমার আর কোন উপায় নাই। এব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- এই পাতারগাঁও গ্রামে আরো একাধিক প্রতিবন্ধি নারী ও শিশু

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 × four =