এবার জনতা ব্যাংকের ডলার চুরি এমডি আবদুছ ছালাম আজাদ নিরব কেন

0
551

মো: আবদুল আলীম: ঋন কেলেঙ্কারি ও অনিয়ম দুর্নীতির সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে জনতা ব্যাংক লি:। এবার যুক্তরাষ্ট্রে ৬ লাখ ৩ হাজার ৯৪৭ মার্কিন ডলার চুরি হয়েছে। ঘটনাটা অনেকটা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মতই।  যুক্তরাষ্টের নিউইয়র্কে জনতা ব্যাংকের ‘জনতা এক্সচেঞ্জ কোম্পানি আইএনসি’ নামে একটি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি রয়েছে যার সংক্ষিপ্ত নাম জেইসিআই, ইউএসএ। এখান থেকে এই ডলার চুরি করা হয়েছে। যা বাংলাদেশ মুদ্রায় দাঁড়ায় ৫ কোটি টাকার ওপর। চুরির এই বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। চুরির ডলার উদ্ধার ও এর সাথে যাদের হাত রয়েছে তাদের ব্যাপারে অদ্য পর্যন্ত জনতা ব্যাংক কিছুই করতে পারছে না। ঘটনার পর দশ মাস অতিক্রম হলেও কোন অগ্রগতি নেই। বরং জনতা ব্যাংকের এমডি আবদুছ ছালাম আজাদ ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য অনেক কৌশল অবলম্বন করেন বলে ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে বিষয়টি আর গোপন রাখা সম্ভব হয় নাই। জনতা ব্যাংকের এমডি আবদুছ ছালাম আজাদ গণমাধ্যমের কাছে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য করোনার কারণ দেখিয়েছেন। তিনি বলেন করোনার কারণে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব হচ্ছে। জেইসিআই এর প্রেসিডেন্ট ও নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম।

২০১৯ সালে তিনি অবসরে গেলে জেইসিআই এর সামান্য একজন টেলিফোন অপারেটর সুস্মিতা তাবাসসুমকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাবাসসুম গত জুলাই ২০১৯ থেকে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। তার দায়িত্ব পালনের সময়ই বিশাল এই অর্থ জনতা ব্যাংক থেকে চুরি হয়।

সুস্মিতা তাবাসসুম জনতা ব্যাংকের স্থায়ী কর্মকর্তা নন। ব্যাংকের বাইরে একজন ব্যক্তিকে কেন এক্সচেঞ্জ হাউস পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হলো এমন প্রশ্নের জবাবে জনতার এমডি আবদুছ ছালাম আজাদ গণমাধ্যমকে কোন সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেন নাই।

ব্যাংকের বাইরে থেকে থেকে এত গুরুত্বপূর্ণ পদে দীর্ঘ দিন যাবত বহাল ছিল অথচ জনতা ব্যাংকের এমডি আবদুছ ছালাম আজাদ কোন কার্যকরি ব্যবস্থা নেন নাই যা একটি আর্থিক প্রতিষ্টানের বিশাল অনিয়ম। তিনি এর দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না। সুস্মিতা তাবাসসুম বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।

এদিকে এনন টেক্স এর সাতটি কোম্পানিসহ আরও বেশ কয়েকটি কোম্পানির অনুকুলে ১, ৯৭৩ কোটি টাকা পূণর্গঠন করার ক্ষেত্রে অনিয়মের ব্যপারে বাংলাদেশ ব্যাংক জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে কৈফত তলব করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম লঙ্ঘন করে ঋন পুণ: তপশিল করা হয়।

জনতার এমডিকে সাত দিনের মধ্যে কৈফতের জবাব দিতে বলা হয়। জনতা ব্যাংকের ৫৯১ তম সভায় এনন টেক্স এর সাতটি কোম্পানিকে ঋন পুণ: তপশিল করার অনুমোদন দেওয়া হয়।

ঋন পুণ:তপশিল করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ নীতি অনুযায়ী অনিবার্য কারণে ঋন অনাদায়ী হলে তা পুণ: তপশিল করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এনন টেক্স এর সাতটি কোম্পানিকে প্রদত্ত ঋন অনিয়মিত ও মনি লন্ডারিং এর পর্যায়ে পড়ে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে ওঠে আসে সাতটি কোম্পানি ছাড়াও আরও ১৫ টি কোম্পানির ঋন নিয়ে অনিয়ম রয়েছে। কোন প্রকার ডাউন পেমেন্ট ছাড়া ড্রাগন সোয়েটার বাংলাদেশ লি: এর ২২৯ কোটি টাকার ঋন পুণ: তপশিল করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মানা হয় নাই। আটটি কোম্পানির ঋন ১০ বছরের জন্য পুণ: তপশিল করা হয়।

এতে ব্যাংক নামক আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির  অপূরণীয় ক্ষতি হয়। এত ঋন কেলেঙ্কারি ও অনিয়ম করে কিভাবে আবদুছ ছালাম আজাদকে জনতার এমডি এবং সিইও হিসেবে পূণ: নিয়োগ দেওয়া হলো তা নিয়ে গোটা ব্যাংকিং জগতে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন ঘুড়পাক খাচ্ছে।

জনতা ব্যাংকের অনিয়ম দুর্নীতি এবং এমডি আবদুছ ছালামের পুণ: নিয়োগের যথার্থতা নিয়ে অপরাধ বিচিত্রার তদন্ত অব্যহত আছে। আগামি সংখ্যায় আরও বিস্তারিত থাকছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 × three =