প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা চেষ্টার নেপথ্যে মির্জাগঞ্জ থানার ওসি মহিববুল্লাহ

0
2083

রাশেদুল ইসলাম: পিতৃহারা কন্যা হয়ে, পিতার স্বপ্ন পূরণে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরেছিলেন শেখ হাসিনা। যে বুলেট জাতির পিতাসহ পরিবারের সবাইকে পৃথিবী ছাড়া করেছিলো, সেই বুলেটই শেখ হাসিনার পিছু নেয় দেশের মাটিতে পা রাখার পর থেকেই। ন্যাক্কারজনক প্রতিটি হামলা থেকে কোনোমতে বেঁচে গেছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রাণে বাঁচলেও বারবারই এসব হত্যাকা-ের সময় হতাহতের ঘটনা, কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে আছে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের পাতায়। তারপর হত্যাচেষ্টার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ক্ষমতায় কিংবা ক্ষমতার বাইরে থাকলেও সবসময়ই শেখ হাসিনার পিছু নিয়েছে ঘাতকের বুলেট-বোমা। দেশে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এ পর্যন্ত অন্তত ২১ বার হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যায়ে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছে আরও অন্তত পাঁচ দফা। শেখ হাসিনার ওপর এসব হামলার ঘটনায় অন্তত ৬৬ জন দলীয় নেতা-কর্মী নিহত হওয়ার হিসাব আছে। আর আহতের সংখ্যা কয়েক হাজার। এইচ এম এরশাদ রাষ্ট্রপতি থাকাকালে দুটি, ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। বিএনপি সরকারের আমলে চারটি, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে চারটি, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সরকার আমলে চারটি।

সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একটি ও আওয়ামী লীগের বর্তমান আমলে চারটি হত্যাচেষ্টার কথা জানা যায়। ২০১৫ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে মোট ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয় বলে আওয়ামী লীগের মুখপত্র ‘উত্তরণ’ এ প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়। এরপর তাকে বহনকারী বিমানে দুইবার নাশকতার চেষ্টা হিসেবে ধরলে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয় মোট ২১ বার।

এছাড়াও অনেক হামলা নীরবে সয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। এমনই একটি হামলার বিষয়ে অনুসন্ধান করেছে অপরাধ বিচিত্রা। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সময়টা ২০০১ সাল। ওই বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমতলী-তালতলীর বরগুনা-৩ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পান সাবেক সাংসদ মজিবর রহমান তালুকদার। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে নির্বাচনী জনসভায় স্ট্রোক করে ৩০ আগষ্ট মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। নির্বাচনে দেখা দেয় প্রার্থী শূন্যতা।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আওয়ামীলীগের সর্বোচ্চ হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে সে সময় বরগুনা-৩ আসনে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন বঙ্গবন্ধুর জননেত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নিরঙ্কুশ বিজয় নিশ্চিত করতে ২১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার তালতলী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনী জনসভার আয়োজন করা হয়। সড়ক ব্যবস্থা অনুন্নত থাকায় জনসভার উদ্দেশ্যে নদী পথে স্পীডবোট যোগে রওনা দেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।

বাজারের দিন থাকায় ওই দিন তালতলীর বগী বাজারের অনেক মানুষ পেটের দায়ে যেতে পারেনি জনসভাস্থলে। কিন্তু জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যাকে একনজর দেখতে বগী বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পায়রা নদীর পাড়ে ভিড় জমায় হাজারো উৎসুক মানুষ। সেসময় বরগুনা-৩ আসন থেকে বিএনপি নির্বাচন না করায় সমর্থন জানানো হয় জাতীয় পার্টির প্রার্থী মতিয়ার রহমান তালুকদারকে।

ওই দিন জাতীয় পার্টির নির্বাচনী পথসভা চলছিল সেই বগী বাজারের পায়রা নদীর পাড়েই। জননেত্রী শেখ হাসিনার স্পীডবোটটি যখন বগী বাজারবাসীর চোখের সামনে আসে আবেগে আপ্লুত মানুষরা তখন দূর থেকে গামছা নাড়িয়ে তাদের নেত্রীকে পাড়ে আসার আহবান জানায়। সফরসঙ্গীদের বাঁধা অতিক্রম করে আমজনতার ডাকে সাড়া দেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।

তাঁর নির্দেশে বহনকারী স্পীডবোটটি মাঝ নদী থেকে পূর্ব পাড়ের দিকে চলতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার এই ভালোবাসা দেখে আনন্দে উল্লাস শুরু করে বগীবাজারবাসী। কিন্তু আমজনতার সেই আনন্দে হঠাৎ নেমে আসে অন্ধকারের কালো ছায়া। এমন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলনা কেউই। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা তালতলী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনী জনসভায় নেত্রীর অপেক্ষায়, আর এই সুযোগকে কাজে লাগায় ঘাতকচক্ররা।

জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী স্পীডবোটটি যখন নদীর পাড়ের কাছাকাছি ঠিক তখনই জাতীয় পার্টির নির্বাচনী সমাবেশস্থলের মঞ্চ থেকে ঘোষণা দেয়া হয় প্রতিরোধ গড়ে তোলার। মঞ্চে সঞ্চালক হিসেবে ন্যাক্কারজনক এ ঘোষণা দেন তৎকালীন তালতলী থানা ছাত্রদলের আহবায়ক মো: মহিববুল্লাহ।

মঞ্চ থেকে ঘোষণা আসার সাথে সাথে জাতীয় পার্টির ব্যানারে জামায়াত, বিএনপি ও ইসলামী ঐক্যজোটের নেতাকর্মীরা তান্ডব চালানো শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে লাঙ্গল মার্কা ও উষ্কানিমূলক সেøাগান দিতে থাকে তারা। এরপর পানিতে নেমে জননেত্রী শেখ হাসিনার স্পীডবোট লক্ষ্য করে মহিববুল্লাহর নেতৃত্বে লাঙ্গল হাতে চালানো হয় হামলা।

সেই বিভীষিকাময় স্মৃতি আজো তাড়া করে বেড়ায় ওই অঞ্চলের মানুষদের। হামলার নেপথ্যে কারা ছিল এবং কেমন ছিল সেই ভয়ানক হামলার দৃশ্য, তা জানতে অপরাধ বিচিত্রা খুঁজে বেড়ায় প্রত্যক্ষদর্শীদের। কিন্তু বোবা কান্না অন্তরে থাকলেও মুখ খুলতে রাজি নয় সাধারণ মানুষ। অনুসন্ধানকালে হামলার বিষয়ে এলাকার প্রবীণদের কাছে জানতে চাইলে অনেকের চোখে জল দেখতে পায় প্রতিবেদক।

ক্ষমতায় আওয়ামীলীগ সরকার, কিন্তু তবুও সেই হামলার ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে মানুষের কেন এত ভয়, তা আমাদের নতুন প্রশ্নের মুখোমুখি করে। তাহলে কি এর পেছনের শক্তি খুবই ক্ষমতাধর ! নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজনের কাছ থেকে সেই ক্ষমতাধরের পরিচয় জানা গেল। আর সাথে সাথে রহস্যঘেরা অনুসন্ধানের সমীকরণ মিলে যেতে থাকে। তৎকালীন তালতলী থানা ছাত্রদলের আহবায়ক মো: মহিববুল্লাহ এই হামলার মূল নায়ক।

আর তিনি বর্তমানে মির্জাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই তথ্যের সত্যতা মেলাতে চাই আমরা। দীর্ঘ অপেক্ষা আর চেষ্টার পর অবশেষে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বক্তব্য দিতে রাজি হন। এরমধ্যে একজন প্রত্যক্ষদর্শীর নাম আমিনুল হক। তিনি পুরো ঘটনা খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তিনি জানান, তার শখের একটি ক্যামেরা ছিল। সেই ক্যামেরায় জননেত্রী শেখ হাসিনার ছবি তুলতে নদী পাড়ে ছুটে যান তিনি।

সে সময় মঞ্চে সঞ্চালণার দায়িত্বে থাকা ছাত্রদলের মহিববুল্লাহর মাথায় একটি কাপড় বাঁধা দেখেছিলেন তিনি। তার ভাষায়, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন নদীর পাড়ের কাছে আসে তখন মহিববুল্লাহর নেতৃত্বে উষ্কানিমূলক সেøাগান ধরে তাদের কিছু লোকজন। এরপর তারা মিছিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দিকে এগিয়ে যায়। তখন প্রধানমন্ত্রী বলে, বাবা, তোমরা শান্ত হও লাঙ্গল নয় নৌকা বলো,  প্রধানমন্ত্রীর মুখে এ কথা শোনার সাথে সাথে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে তারা।

জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হামলা করার জন্য পানিতে নেমে পড়ে মহিববুল্লাহ ও তার লোকজন। বোট লক্ষ্য করে লাঙ্গল ও লগি দিয়ে হামলা চালায় তারা। এসময় সোবহান মুন্সী নামে ইসলামী ঐক্যজোট নেতাও লাঙ্গল হাতে হামলা চালায়। আমিনুল হক জানান, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মারতে তারা মরিয়া হয়ে পানিতে নেমেছিল এবং হামলাও চালিয়েছিল।

তবে তাদের হামলা থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বাঁচাতে আবার অনেকেই নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিল সেদিন। তবে শতচেষ্টা করেও মহিববুল্লাহ ও তার সাঙ্গ পাঙ্গরা কোন ক্ষতি করতে পারেনি। দ্রুত গতিতে স্থান ত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী স্পীডবোটটি। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার মতে, মহিববুল্লাহ প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা করেও আজ মির্জাগঞ্জ থানা ওসির দায়িত্ব পালন করছেন কিভাবে সকলের মাঝে ঘুরেফিরে একই প্রশ্ন। তিনি সরকারকে আপন দেখায়। মূলত, তিনি অন্য দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টায় রয়েছেন।

সে দিনের সেই বিভীষিকাময় হামলার দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠতেই এখনো চিৎকার করে কেঁদে উঠেন মো: জিন্নাত সিকদার। কি ঘটেছিল সেদিন-প্রশ্ন করতেই কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, চোখের সামনে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর হামলা হতে দেখেছি। অনেক চেষ্টা করেও অপমান থেকে তাঁকে রক্ষা করতে পারিনি। মহিববুল্লাহদের মোকাবেলা করতে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম সেদিন।

তাদের বলেছিলাম, ‘আমাকে হত্যা করো, তবুও আমার নেত্রীর উপর হামলা করো না।’ কিন্তু তারা শোনেনি। লাঙ্গল দিয়ে হামলা করে। আমি হতাশ হয়ে কাঁদতে থাকি। তখন মমতাময়ী মা জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে স্পীডবোটে তুলে নিয়ে স্বান্ত¡না দেন। তিনি  আরো বলেন, ওইদিন মতিয়র রহমান তালুকদারের সন্ত্রাসী বাহিনী আমার  মমতাময়ী মা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। 

কিন্তু আল্লাহর রহমত ছিল বিধায় জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রানে বেচেঁ যায়। আল্লাহ তাদের বিচার করবেন। আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক তারাকুন্ড ব্যাপারী। ওই সময়ে বগীবাজারে ছিলেন তিনি। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে একনজর দেখতে অন্য সবার মতো তিনিও যান। তিনি বলেন, স্পীড বোটটি কাছাকাছি আসলে হামলাকারীরা লাঙ্গলের সেøøাগান দিতে দিতে জননেত্রী শেখ হাসিনার দিকে লাঙ্গল ছুঁড়ে মারতে থাকে।

সেদিনের সেই হামলা থেকে বেঁচে গিয়ে নির্ধারিত সময়ে তালতলী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জনসভায় যোগ দেন, গণতন্ত্রের মানসকন্যা ও পরিবর্তনের অগ্রদূত জননেত্রী শেখ হাসিনা। তবে হামলার বিষয়ে নেতাকর্মীদের কিছুই বুঝতে দেননি তিনি। সফল ভাবে শেষ করেছিলেন লাখো আমজনতার নির্বাচনী জনসভা। সভা শেষে এলাকায় ফিরে মুজিব আদর্শের সৈনিকরা জানতে পারেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর মহিববুল্লাহর নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে।

ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো বরগুনায়। তাৎক্ষণিকভাবে ওই এলাকায় প্রতিবাদ সভা ও মিছিলের আয়োজন করা হয়। বর্তমান তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি জাকির হোসেন চুন্নু মাষ্টার, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার, ছোটবগি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান বিশ্বাস, সহ সভাপতি জিন্নাত সিকদার, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক,

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সবুজ তালুকদার, বশির উদ্দিনসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ প্রতিবাদ জানাতে অংশ নেন ওই প্রতিবাদ সভায়। সভা থেকে পরদিন হরতাল পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। জনগণের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে পালিত হয় সেই হরতাল কর্মসূচিও। বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর হামলার প্রতিবাদে নানা কর্মসূচি পালন করলেও অন্তরের জ্বালা মেটেনি তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সহসভাপতি জাকির হোসেন চুন্নু মাষ্টারের।

নিজের এলাকায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অপদস্ত করা হয়েছিল, এটা ভাবতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। কান্নার সুরে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের জনসভাস্থলে থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মহিববুল্লাহর নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোট নেতা সোবহান মুন্সীসহ সন্ত্রাসীরা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা করে।

নির্বাচনী জনসভা শেষে এলাকায় ফিরে এ ঘটনা শোনার পর আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি ঠিকই, তবে দোষীদের উচিত জবাব দিতে পারিনি আজও। হামলার নেপথ্যের নায়ক মহিববুল্লাহ মির্জাগঞ্জ থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে কি ভাবে? তালতলী উপজেলা আলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, নেতাকর্মীদের অনুপস্থিতিতে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়। মহিববুল্লাহর নেতৃত্বে হামলা হয়।

আজকে আমার লজ্জা লাগে, যে ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীকে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে সে কিভাবে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকে এই প্রশ্ন রেখে গেলাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি মহোদয়ের কাছে ? তার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি কামনা করছি। হামলা আর হত্যাচেষ্টা করেও দমানো যায়নি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। ঘাতকদের রক্ত চক্ষুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্বাচনে বরগুনা-৩ আসনের জনগণ হাসি ফোটায় জননেত্রী শেখ হাসিনার মুখে। জনগণের ভালোবাসার প্রতিদানে ২০০১ সালের ২৪ নভেম্বর আবারো তালতলীতে জনসভা করেন বঙ্গবন্ধুর কন্যাজননেত্রী শেখ হাসিনা।

ফেরার পথে গণমানুষের অনুরোধে সেই বগী বাজারের ঘাটে পুণরায় ভালোবাসা ছড়াতে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। বগি বাজার নদী পাড়ের যে স্থানে মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর হামলার নির্দেশ দেয়া হয়, সেই জায়গাটি নদীতে বিলীন হয়েছে অনেক আগেই।

তবুও সেই বিভীষিকাময় স্মৃতি এখনো তাড়া করে বেড়াচ্ছে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। মহিববুল্লাহসহ ওই হামলার সাথে জড়িত সকলকে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন তারা। বারবার হামলার পরও বুলেট-বোমা আর ষড়যন্ত্রকারীদের শত বাধা ডিঙ্গিয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে টেনে তুলছেন খাদের কিনার থেকে সমৃদ্ধির পথে। দীপ্ত কন্ঠে সাহস যুগিয়েছেন নেতাকর্মীদের, ভালোবাসার চাদরে আগলে রেখেছেন দেশের জনগনকে।

আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তারাকুন্ড ব্যাপারী। ওই সময়ে বগি বাজারে ছিলেন তিনি। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে একনজর দেখতে অন্য সবার মতো তিনিও যান। তিনি বলেন, স্পীড বোটটি কাছাকাছি আসলে হামলাকারীরা লাঙ্গলের সেøাগান দিতে দিতে জননেত্রী শেখ হাসিনার দিকে লাঙ্গল ছুঁড়ে মারতে থাকে।

এবার সে সময়কার ঘটনার বর্ণনা শুনবো একজন মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো: নূর উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বগী বাজারের পাশ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার যাওয়ার কথা শুনে নদী পাড়ে পৌঁছান তিনি। নূর মোহাম্মদ মুন্সীর নাতি, মোতাহার হাওলাদারের ছেলে মহিববুল্লাহ লাঙ্গল হাতে হামলা চালায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর।

সে সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো: নূর উদ্দিন আহমেদ হামরাকারীদের সাথে বাক-বিতন্ডায় জড়ান। এতে হুমকির শিকারও হন তিনি। স্মৃতিবিজড়িত সেই ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। এই মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা বলে আরও কিছু তথ্য মেলে আমাদের।

তৎকালীন তালতলী থানা ছাত্রদলের আহবায়ক ও বর্তমানে মির্জাগঞ্জ থানার ওসি মহিববুল্লাহর দাদা নূর মোহাম্মদ মুন্সী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন পিচ কমিটির সক্রিয় সদস্য।  রাজাকার দাদার পথ ধরে মহিববুল্লাহও অত্যাচার নির্যাতন চালাতো হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর। তাদের খাল দখল করে জোরপূর্বক মাছ চাষ করতেন তিনি।

পরবর্তীতে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার পুরষ্কারস্বরূপ ২০০৬ সালে তৎকালীন সাংসদ মতিয়র রহমান তালুকদার কুখ্যাত রাজাকার নূর মোহাম্মদ মুন্সীর নাতি মহিববুল্লাহকে উপ-পুলিশ পরিদর্শক পদে চাকরি দেন। এরপর ধীরে ধীরে বিএনপি-জামায়াতপন্থী পুলিশ অফিসারদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ওসি পদে পদোন্নতি পেয়ে যান মহিববুল্লাহ।

“প্রধানমন্ত্রীর উপর হামলার নেপথ্যে নায়ক ওসি মহিববুল্লাহর বহুতল ভবন, গাড়ি, নামে বেনামে অঢেল সম্পত্তি, ও প্রথম স্ত্রীর রহস্যঘেরা মৃত্যুসহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির” অনুসন্ধান করেছে অপরাধ বিচিত্রা। চোখ রাখুন পরবর্তী অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে…

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 × five =