আনোয়ার হোসেন আনু: করোনার প্রথম ঢেউয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে পর্যটন খাত ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কর্ম হারিয়ে বেকার হয়ে পরেছে শতশত শ্রমজীবি মানুষ। শত কোটি টাকা লোকসানের মুখে এ খাতে বিনিয়োগকারীরা। করোনার প্রাদুর্ভাবের প্রথম ঢেউ মোকাবেলার পর গত বছরের ১লা জুলাই কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত উম্মুক্ত করে দেয়া হয়। ৪-৫ মাস ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও পিছনের ঘাটতি পুষিয়ে উঠতে পারেনি বিনিয়োগকারীরা। এরই মধ্যে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ এসে আঘাত হানে। চলতি বছরের ১লা এপ্রিল সরকারী নির্দেশনায় আবার বন্ধ করে দেয়া হয় আবাসিক হোটেল মোটেল। সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের ভ্রমণে জারি করা হয় নিষেধাজ্ঞা। দেয়া হয় লকডাউন।
লকডাউনে আবাসিক হোটেল মোটেলসহ পর্যটনমুখী ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পরেছে হাজারো মানুষ। এসব পরিবারে অভাব অনটন দেখা দিয়েছে চরম ভাবে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পর্যটক শুন্যতায় সৈকতের ছাতা চেয়ার. স্ট্রীট ফুড ভেন্ডর. ফটো গ্রাফার্স.ট্যুর অপারেটরর্সসহ কয়েকশত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কর্ম হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এসব কর্মহীন মানুষগুলো জীবিকার তাগিদে পেশা পরিবর্তনের কথা ভাবছে।
প্রতিবছর মৌসুমে ঈদের সময় পর্যটকদের আগমনে মুখর থাকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। আবাসিক হোটেল মোটেল গুলোতে তিল ধারনের ঠাই থাকে না। জমজমাট থাকতো পর্যটনমুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলো।
এবছর ঈদে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। সৈকতে পর্যটক তো দুরের কথা নেই স্থানীয় কোন মানুষজনও। সমুদ্রের নীল জলরাশি.সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ ছাড়া চারিদিকে সুনসান নিরবতা। জনমানব শুণ্য সৈকত।
সরেজমিনে দেখা গেছে. সৈকতের বালিয়াড়িতে জাকারিয়া.মাসুদ.নুরু.শুক্কুর আলী নামে কয়েকজন ফটোগ্রাফার্সকে ঘোরাঘুরি করতে। পর্যটক শুন্য জনমানবহীন সৈকতে কেন ঘোরাঘুরি করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে এরা জানান.ঘরে খাবার নেই। অর্থ সংকটে ভূগছে তারা। এরই মধ্যে আবার ঈদ এসেছে। পরিবারের জন্য ঈদের কেনাকাটা হয়নি। তাই তারা সৈকতে এসে ঘোরাফেরা করছেন। যদি স্থানীয় কোন দর্শনার্থী পাওয়া যায় তাদের ছবি তুলে কিছু আয় করা যাবে এমন আশায়।
ফটোগ্রাফার্স শুক্কুর আলী জানান করোনার লকডাউনে স্ত্রীর ভরন পোষণ করতে না পারায় বাপের বাড়ি চলে গেছে। তিনি একাই সৈকতের পারে একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। কোন দিন দুই বেলা খেয়ে থাকেন.আবার কোনদিন এক বেলা খেয়েও জীবন যাপন করছে।
সরকারী বা বেসরকারী কোন সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়নি কেউ। তাই তিনি খুবই কষ্টে জীবন যাপন করছেন। ক্যামেরা নিয়ে প্রতিদিন সমুদ্র সৈকতে ঘোরাঘুরি করছে। যদি কারও ছবি তোলা যায় সেই আশায়।
কুয়াকাটা পর্যটনমুখী ব্যবসার সাথে জড়িত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও আবাসিক হোটেল মোটেল এবং খাবার হোটেল শ্রমিকরা কর্ম হারিয়ে সকলেই মানবেতর জীবন যাপন করছে। আবাসিক হোটেলের অল্প সংখ্যক কর্মচারীরা কিছু খাদ্য সহায়তা পাইলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
বেশিরভাগই সরকারী কিংবা বে-সরকারী সাহায্য সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এবারের ঈদে এসব কর্মহীন মানুষগুলোর মনে নেই কোন আনন্দ। উল্টো ঈদ যেন তাদের গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে।
আবাসিক হোটেল সৈকতের মালিক মোঃ জিয়াউর রহমান জানান. তার হোটেলে ১৮জন কর্মচারী রয়েছে। হোটেল বন্ধ থাকলেও গত তিনমাস যাবত এদের বেতন দিয়ে আসছেন। ঈদের পর লকডাউন উঠিয়ে না নিলে কর্মচারীদের চাকরী থেকে বিদায় দিতে হবে। কর্মচারীদের বেতন দিতে গিয়ে কয়েক লাখ টাকা তিনি ধার দেনা করেছেন।
কুয়াকাটা আবাসিক হোটেল মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন. করোনার লকডাউনে সীমিত পরিসরে অন্যান্য ব্যবসা বানিজ্য চললেও আবাসিক হোটেল মোটেল গুলো সম্পুর্ন বন্ধ রয়েছে।
করোনা মহামারিতে তাদের শত কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন লকডাউন খুলে দেয়া না হলে এ খাতে বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে।