ভাকুর্তা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

0
1423

ইমদাদুল হক, প্রতিবেদকঃ  ঢাকার সাভারস্থ ভাকুর্তা ইউনিয়ন।এই ইউনিয়নটির আয়তন ২১.০৬ বর্গ কিলোমিটার। ইউনিয়নের ভাকুর্তা বাজারের হিন্দু ভাকুর্তা এলাকায় ভাকুর্তা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় অবস্থিত। আর এই ইউনিয়নে সেই ২০০৩ সাল থেকে চেয়ারম্যান হিসাবে আছেন আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন। তবে একজন মানুষ টানা এতগুলো বছর চেয়ারম্যান পদে থাকার পরও ইউনিয়নটিতে তেমন কোনো রাস্তাঘাটের উন্নয়ন সহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। বরং এলাকার খাল-বিল দখল হয়ে গিয়ে একধরণের স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের দূর্ভোগ বেড়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন পরিবেশ ধ্বংসকারী অবৈধ কারখানা যেমন টায়ার পোড়ানো কারখানা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে চালু থেকেছে বছরের পর বছর। এই সামগ্রিক বিষয় নিয়ে ভাকুর্তাবাসী একধরনের অসহায় অবস্থার ভিতর দিয়ে দিনাতিপাত করছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সহ সাধারণ মানুষ এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন। আর এক্ষেত্রে তাদের অভিযোগের তীর খোদ তাদের ইউপি চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধেই।

চেয়ারম্যান এর বসবাসের এলাকার সাবেক মেম্বার মোঃ হাবিবুল্লাহ জানান, আমাদের চেয়ারম্যান তিন ‘টার্ম’ ক্ষমতায় থাকার পরও রাস্তাঘাটের কোনো উন্নয়ন করেনি। মঞ্জুরুল আলম রাজীব সাভা উপজেলা চেয়ারম্যান হবার পরে বেশকিছু রাস্তাঘাটের কাজ শুরু হয়েছে।

কিন্তু আনোয়ার হোসেন চেয়ারম্যান হবার পরে এসবের কোনো উন্নয়ন করেনি। সে তার পরিষদের মেম্বারদেরও নিয়মিত ভাতা দিতো না। আর কোনো প্রকল্পের কাজ আসলেও সেগুলোতে মেম্বারদের নাম কাগজেকলমে রাখলেও সব কাজ তার নিজের ভাতিজাকে দিয়ে করায়। এজন্যই তেমন কোনো উন্নয়ন চোখে পড়েনা।

তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, এর আগের টার্মে চেয়ারম্যান সাবেক মেম্বার সালাউদ্দিনকে দিয়ে সালমাষি, নটিরচর, মোগড়াকান্দা সহ ভাকুর্তার বিভিন্ন এলাকায় বৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কথা বলে কারও থেকে ৫০ হাজার, ৬০ হাজার এরকম অংকের টাকা নিয়েছে।

প্রায় ৭/৮ কোটি টাকা এভাবে নিরীহ ভাকুর্তাবাসীর থেকে হাতিয়ে নিয়েছে তারা। কিন্তু দুই তিনদিন গ্যাস চালাবার পরে ওই অবৈধ লাইন উচ্ছেদ করে তিতাস। কিন্তু কারও টাকা আর ফেরত দেয়া হয়নি।

একই অভিযোগ করেন ভাকুর্তা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মোঃ আমানুল্লাহ।তিনি এই প্রতিবেদককে ভিডিও বক্তব্যে জানান,

ঘাটারচর থেকে তিতাসের বৈধ লাইন থেকে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে চেয়ারম্যান হাজী আনোয়ার হোসেন আমাদের এলাকার বাড়ি বাড়ি বৈধ সংযোগ দেবে বলে মানুষ ভেদে ৩০/৪০ হাজার করে টাকা নিয়েছে। আমিও ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম তাকে।  কিন্তু কয়েকদিন চলার পরে লাইন উচ্ছেদ হলে জানতে পারি ওটা অবৌধ সংযোগ ছিলো।

সাভার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি মোঃ খান জাহান আলী বলেন, আমি ভাকুর্তা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে বসবাস করি। আমাদের বর্তমান চেয়ারম্যান এতগুলো বছর চেয়ারম্যান পদে থেকেও উন্নয়নমূলক কোনো কাজ যেমন করেনি, এলাকাবাসীর ভালোর জন্যও কিছু করেনি। এছাড়া তিনি আমার বাসায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে আমার থেকেও ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন।

ওয়াশপুর থেকে এই গ্যাস লাইনটি নিয়ে আমাদের ৮নং ওয়ার্ডে দেয়া হয়। এখনও সেই পাইপ রয়েছে চিহ্ন হিসেবে। চেয়ারম্যান সাহেব তখন বলেছিলেন এটা বৈধ সংযোগ ; কিন্তু তিতাসের অভিযানের পরে আমরা জানতে পারি ওটা অবৈধ সংযোগ ছিলো। আমার সেই টাকা আজও চেয়ারম্যান সাহেব ফেরত দেন নাই।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ভাকুর্তা ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ভিডিও বক্তব্যে জানান, আমি ৩০ বছর ধরে এই আওয়ামী লীগের সাথে আছি। আমাদের চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হলেও কখনো তাকে দলীয় কর্মকান্ডে দেখি না। কোনো মিছিল মিটিংয়ে ও তাকে চোখে পড়ে না।

এছাড়া ভাকুর্তায় বেশকিছু টায়ার পুড়িয়ে জ্বালানি তেল তৈরির অবৈধ কারখানা চেয়ারম্যান এর থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করে আসছে। এব্যাপারে সাবেক মেম্বার মোঃ হাবিবুল্লাহ জানান, এইসব কারখানার জন্য আমাদের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, গবাদি পশু মরে যাচ্ছে। কিন্তু যেখানে খোদ চেয়ারম্যানই লাইসেন্স দিচ্ছে সেখানে আর কে কি করতে পারবে?

এবিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন জানান, মোগড়াকান্দা এলাকায় যে টায়ার পোড়ানোর কারখানা রয়েছে, সেটার মালিক দুই লাখ টাকা দিয়ে পুনরায় লাইসেন্স নবায়ন করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন।

এব্যাপারে ভাকুর্তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন জানান, অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদান করে টাকা নেবার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আর টাকাপয়সা লেনদেন করেছে গ্যাস কন্ট্রাক্টরের লোকজন, এব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

seventeen + sixteen =