ঈমানদারের জন্য সচ্ছলতা আল্লাহর অনেক বড় অনুগ্রহ। অর্থবিত্ত জীবনের শোভা। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা। আর তোমার প্রতিপালকের কাছে পুরস্কার লাভের জন্য স্থায়ী সৎকাজ হলো উৎকৃষ্ট আর আকাঙ্ক্ষা পোষণের ভিত্তিতেও উত্তম।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৪৬)
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান : ঈমানদার আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদের শুকরিয়া আদায় করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তা ব্যয় করে। এই সম্পদ তাদের জান্নাতের পথ সুগম করে দেয়। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘অতএব যে ব্যক্তি (আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য) দান করে এবং (আল্লাহকে) ভয় করে আর যা উত্তম তা সত্য বলে গ্রহণ করে, আমি তার জন্য সহজ পথ সুগম করে দেব।’ (সুরা : লাইল, আয়াত : ৫-৭)। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করে, তার জন্য আল্লাহ তাআলা সব উত্তম কাজ সহজ করে দেন।
আমলদার ধনীরা অগ্রগামী : সচ্ছলতা থাকলে নিয়মিত শারীরিক ফরজ ও নফল ইবাদতের পাশাপাশি আর্থিক ইবাদত করা যায়। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে অগ্রগামী হওয়ার সুযোগ বেড়ে যায়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার আবু জার (রা.) বলেন, “হে আল্লাহর রাসুল, ধনীরা তো সওয়াবে অগ্রগামী হয়ে যাচ্ছে। আমরা যেমন নামাজ আদায় করি, তেমন তারাও নামাজ আদায় করে, আমরা যেমন রোজা রাখি, তারাও তেমন রোজা রাখে। কিন্তু তারা তাদের অতিরিক্ত ধন-সম্পদ দান করে। (দান খয়রাতের জন্য) আমাদের পর্যাপ্ত সম্পদ নেই।
তখন রাসুল (সা.) বলেন, হে আবু জার, আমি কি তোমাকে এমন দুটি বাক্য শিক্ষা দেব না, যা পাঠ করলে তুমি তোমার চেয়ে অগ্রগামীদের সমপর্যায় হতে পারবে এবং তোমার পেছনের লোকেরাও তোমাকে অতিক্রম করতে পারবে না? তবে তার কথা ভিন্ন, যে তোমার মতো আমল করে। তিনি বলেন, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। তিনি বলেন, তুমি প্রত্যেক নামাজের পর ৩৩ বার ‘আল্লাহু আকবার’, ৩৩ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ এবং শেষে একবার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির’ বলবে। কেউ এ দোয়া পড়লে তার গুনাহ সাগরের ফেনারাশি পরিমাণ হলেও তা ক্ষমা হবে।” (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫০৪)
মুসলিম শরিফের বর্ণনায় এসেছে, আবু সালেহ বর্ণনা করেছেন, এরপর গরিব মুহাজিররা পুনরায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আমরা যা করেছি, আমাদের সম্পদশালী ভাইয়েরা তা জেনে ফেলেছে। সুতরাং এখন তারাও এ কাজ করতে শুরু করেছে। এ কথা শুনে রাসুল (সা.) বলেন, এটা তো আল্লাহর মেহেরবানি। যাকে ইচ্ছা তিনি তা দান করেন। (মুসলিম, হাদিস : ১২৩৪)
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন : ধন-সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার জান্নাতে যাওয়ার উপায়। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আত্মশুদ্ধির জন্য তার সম্পদ ব্যয় করে—(এই দান) তার প্রতি কারো অনুগ্রহের প্রতিদান হিসেবে নয়; শুধু তার রবের সন্তুষ্টির প্রত্যাশায়, অচিরেই সে (ইহকালে-পরকালে) সন্তুষ্ট হবে।’ (সুরা : লাইল, আয়াত : ১৭-২১)। মহান আল্লাহ সবাইকে হালাল উপায়ে সম্পদশালী হওয়ার সুযোগ করে দিন এবং সম্পদের সঠিক ব্যবহার করার তাওফিক দান করুন।