সূরা কাহফ ও বিজ্ঞান

0
698

(আজ জুমুআ বার, সূরা কাহফ পড়ছেন তো?)

সূরা কাহফ নাযিল হয় মক্কার মুশরিকরা যখন নাযার ইবনে হারিস ও উকবা ইবনে মুঈতকে মদীনার ইহুদী আলেমদের নিকট প্রেরন করে রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সত্যতা জানার জন্যে। মদীনার ইহুদী আলেমদের করা প্রশ্নগুলার মাঝে একটি প্রশ্ন ছিল – “পূর্ব যুগে যেসব যুবকেরা বেড়িয়ে গিয়েছিল তাদের ঘটনা বর্ণনা করুন”

মহান আল্লাহ ইহুদীদের জ্ঞানকে চ্যালেঞ্জ করে ঘটনাটি এমন ভাবে বর্ননা করেন, যতটা না মদীনার ইহুদী আলেমরা জানতো।

ঘটনাটি একই সাথে বিস্ময়কর ও ইন্টারেস্টিং। গুহাবাসী যুবকেরা গুহায় কিভাবে ঘুমিয়ে ছিল তা বর্ননা করতে গিয়ে আল্লাহ বলেন, “ তুমি মনে করবে তারা জাগ্রত, অথচ তারা নিদ্রিত। আমি তাদের প্বার্শ পরিবর্তন করাই ডান ও বাম দিকে।” (সূরা কাহাফ :১৮:১৮)

নিদ্রিত যুবকদের মহান আল্লাহর প্বার্শ পরিবর্তন করানোর প্রয়োজন কী? তাফসীর ইবনে কাসির- এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছে  “মাটি যেনো খেয়ে না ফেলে এ জন্য তাদের প্বার্শ পরিবর্তন করাতে থাকে” (তবারী ১৭/৬২০)

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান আয়াতটির ব্যাখ্যা কিভাবে করে আজ আমি সেটাই তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ।

আপনি যখন অনেক্ষন ধরে, একইভাবে বসে থাকবেন অথবা শুয়ে থাকবেন, তা আপনার পায়ের ডীপ ভেইন থ্রম্বোসিস (রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাধার) সম্ভবনা বহুগুণ বাড়িয়ে দিবে। এই ব্লাড ক্লট ( জমাট বাঁধা রক্ত) রক্তনালির মাধ্যমে ফুসফুসে গিয়ে পালমোনারি এম্বোলিজম করে, কখনো কখনো বা মস্তিষ্কে গিয়ে রক্তনালি বন্ধ করে দিয়ে ইসকেমিক স্ট্রোক (স্ট্রোকের একটি প্রকার) করে দেয়। যা আপনাকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিবে।

এমন সাধারণত হয় কোন সার্জারীর পর রুগীকে যখন দীর্ঘ বিশ্রাম দেওয়া হয়, দীর্ঘক্ষন বিমান ভ্রমন করা, প্যারালাইসিস কিংবা গর্ভবতী “মা”দের ক্ষেত্রে।

এসব ক্ষেত্রে ডাক্তারদের পরামর্শ হল, কিছুক্ষন পর পর রোগীকে প্বার্শ পরিবর্তন করে দিতে। কাউকে বিশেষ বিছানায় ঘুমাতে বলে, রাতে ঘুমানোর সময় “পা” কয়েক ইঞ্চি উপরের দিকে রেখে ঘুমাতে বলে। যাতে করে তাদের ডীপ ভেইন থ্রম্বোসিস হয়ে কোন সমস্যা না হয়।

গুহাবাসী যুবকেরা গুহায় কত বছর ঘুমিয়েছিল? কুরআন হতে আমরা জানি “ তারা তাদের গুহায় ছিল তিনশো বছর আরো নয় বছর” (সূরা কাহাফ:১৮:২৫) একবার চিন্তা করুন তো, মহান আল্লাহ যদি তাদের প্বার্শ পরিবর্তন করে না দিতেন? তাহলে যুবকেরা পালমোনারি এম্বোলিজম, স্ট্রোক হয়ে মৃত্যু বরন করতেন না?

 পূর্বের আলেমরা এই আয়াতটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হয়তো কিছুটা হিমসিম খেতেন। কারন আয়াতের পিছনের মজার চিকিৎসা বিজ্ঞানটি তাদের জানা ছিল না।

সুবহানাল্লাহ, “অতপর আমরা আমাদের কোন নিয়ামত কে অস্বীকার করবো?”

“তোমাদের পালনকর্তা  তোমাদের জন্যে দয়ার বিস্তার করবেন” (সূরা কাহাফ: ১৮: ১৬) হে প্রভু আমাদের সেই দয়ায় আচ্ছন্ন করে রাখুন, যেমনটা করেছেন গুহাবাসী যুবকদের। 

~ মাঝহারুল ইসলাম

যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ পড়বে, তার (ঈমানের) নূর এই জুমাহ হতে আগামী জুমাহ পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। (মিশকাত ২১৭৫)।

যে ব্যক্তি সূরা আল কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে তাকে দাজ্জালের অনিষ্ট হতে নিরাপদ রাখা হবে। (মুসলিম)(মিশকাত)।

‘যে ব্যক্তি উহার শেষ দশটি আয়াত পাঠ করবে, তার জীবদ্দশায় দাজ্জাল বের হলেও সে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (সিলসিলায়ে সহীহা -২৬৫১)।

জুমার দিনে সূরা কাহফ পাঠ করলে কিয়ামতের দিন তার পায়ের নীচ থেকে আকাশের মেঘমালা পর্যন্ত নূর আলোকিত হবে এবং দুই জুমার মধ্যবর্তী গুনাহ মাফ হবে। (আত তারগীব ওয়াল তারহীব- ১/২৯৮)

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nine − 9 =