মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেখুন মৎস্য ও প্রানী সম্পদ মন্ত্রনালয়ের তিন সচিবের কান্ড

0
3814

দুদকের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

স্টাফ রিপোর্টার: মৎস্য ও প্রনী সম্পদ মন্ত্রনালয়ে দুর্নীতি অনিয়ম যেন ঝেকে বসেছে। সচিব আসে সচিব যায়, তেমনি দুর্নীতিও অবলীলায় চলে। কেউ দুর্নীতি প্রতিরোধে কোন ভুমিকা রাখছে না। এক এক কওে তিন সচিব আসল আর গেল দুর্নীতি রইলো বহাল তবিয়তে। সব সচিবই যেন দুর্নীতি বান্ধব। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারাই বার বার আস্কারা পেয়ে প্রজেক্ট এর দায়িত্ব পাচ্ছে। যেন দুর্নীতি তাদেও গা সয়ে গেছে। এ নিয়ে যেন কারোর মাথা ব্যাথার কারন নেই। পর পর তিন সচিবের কর্মকান্ড আর দুর্নীতির বিষয় বস্তু নিয়ে এবারের প্রতিবেদন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। কারন মাননীয় মন্ত্রীও এ বিষয়ে কোন খোজ খবর রাখেন না। অপরাধ বিচিত্রা মৎস্য ও প্রানী সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ কওে যাচ্ছে।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন সচিব রইছুল আলম মন্ডল মো: আলীমুজ্জামান চৌধুরী কে প্রকল্প পরিচালক পদে নিয়োগ দেন। প্রকল্পের ডিপিপিতে ৪র্থ গ্রেডের মৎস্য চাষ এবং স¤প্রসারণের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মকর্তার উল্লেখ থাকলেও উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে ষষ্ঠ গ্রেডের আলীমুজ্জামানকে প্রকল্প পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়, তিনি একজন প্রকৌশলী এবং ইতিপূর্বে তিনি ২ (দুই) বার সাময়িক বরখাস্ত হন ৭ (সাত) বছরের জন্য। 

বর্তমান সচিব রওনক মাহমুদ প্রকল্পের ২য় পর্যায়ে তাকে আবার প্রকল্প পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেন। উল্লেখ্য, ২য় পর্যায়ে একনেকে প্রকল্প অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন “এই প্রকল্পে পাড় কেটে পুকুরের বিল দেওয়া হয়।”

তারপরেও তাকেই আবার প্রকল্প পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। উল্লেখ্য যে, দুর্নীতি দমন কমিশন হতে পিডি আলীমুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করতে মন্ত্রণালয়ে দিলে তদন্তটি করেন মৎস্য অধিদপ্তরের ৩ (তিন) সদস্য বিশিষ্ট কমিটি যার আহবায়ক ছিলেন খ. মাহবুবুল হক। তিনি একপক্ষ অবলম্বন করে অর্থাৎ প্রকল্প পরিচালকের স্বপক্ষে বক্তব্য ও প্রমাণাদি দিয়ে তাকে নির্দোষ প্রমাণ করেন। অথচ সচিব এই এক পক্ষীয় প্রতিবেদন দেখেও প্রকল্প পরিচালককে অব্যাহতি দেন।

প্রকল্প পরিচালকের পদোন্নতির সময় দুর্নীতি দমন কমিশন হতে মতামত চাওয়া হলে তৎকালীন সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত সনদপত্র দেন যে, প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নাই কিংবা কোন অভিযোগ তদন্তাধীন নাই। অথচ বগুড়া সমন্বিত জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক জানান যে, এখনও প্রকল্প পরিচালক আলীমুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে।

এভাবে ৩ (তিন) জন সচিব প্রকল্প পরিচালকের দুর্নীতিকে মতদ দিচ্ছে।

মৎস্য অধিদপ্তররের উধ্বর্তন কর্মকতারা কেউ কারোর চাইতে অনিয়ম-দুর্নীতিতে পিছিয়ে নেই। একজনের দুর্নীতি প্রকাশ হতে না হতেই আরেকজনের দুর্নীতির খবর সামনে এসে হাজির। ভুয়া প্রকল্প সাজিয়ে বা প্রকল্পের না করেই শতশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের পরিচালক মো: আলিমুজ্জামন চৌধুরী। দুর্নীতির দায়ে একাধিক বার বহিস্কার হওয়া এই কর্মকর্তা এখনো রয়েছে বহাল তবিয়তে। সব পক্ষকে ম্যানেজ করেই চলছে এই কর্মকর্তার দুর্নীতির পাগলা ঘোড়া। একারনে নাকি দুর্নীতি দমন কমিশনও তার কিছই করতে পারে না বলে জানায় সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র। বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির ঘুষ গ্রহনের একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এই কারনে মৎস্য অধিদপ্তরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

সুত্র জানায়, চলতি অর্থ বছরে পুন:খনন কাজের ১০০ কোটি টাকার মধ্যে ২০ কোটি টাকা লুটপাটের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে এবং পানি সেচ, গাছ লাগানো, পোনা, প্রদর্শনী ইত্যাদি কাজের থেকে অন্তত ৫০ কোটি টাকা সিন্ডিকেট করে হাতিয়ে নিয়েছে। এবছর কাজের শুরুতে মেশিন দ্বারা মাটি কাটা অনুমোদন হয়েছে মর্মে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে এলসিএসদের জানানো হয় মেশিন দ্বারা মাটি কাটা যাবে। ফলে সারা দেশে লেবার দ্বারা কাজ করাতে ব্যর্থ হয়ে ভুয়া মাষ্টাররোল, ভুয়া টিপ ছাপ, ভুয়া স্বাক্ষর দিয়ে উক্ত প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা ভুয়া বিলের মাধ্যমে সারা দেশ ব্যাপি উত্তোলন করেন। ১৬ এপ্রিল-২০১৯ তারিখে সুনামগঞ্জ জেলায় বরাদ্দ প্রদান করা হয়। অথচ ঐ জেলায় কোন প্রকল্পের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কিন্তু পিডি আলিমুজ্জামান চৌধুরী ও উক্ত জেলার ইঞ্জিনিয়ার যোগ সাজসে উক্ত ভুয়া প্রকল্পের কোটি টাকা উত্তোলন করেন। প্রকল্প অনুমোদনের সময় প্রকল্পে যে বরাদ্দ অনুমোদন করা হয় মাঠ পর্যায়ে কাজের সময় তারচেয়ে বেশী বরাদ্দ কমিশনের বিনিময়ে প্রদান করেন। ওয়েব সাইটে বরাদ্দ না দিয়ে সরাসরি ২০% টাকার বিনিময়ে ঠিকাদারদের হাতে হাতে বরাদ্দ প্রদান করেন। জেলা মৎস্য দপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলীগণ স্কীম তৈরি করতে প্রকল্পে থেকে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে থাকেন এবং বিভাগীয় প্রকৌশলীগণ ১ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রতি স্কীমে স্বাক্ষর করেন। বিনা অনুমোদনে এসি ও মাল্টিমিডিয়া ক্রয় করেন। তবে বাস্তবে এসি ও মাল্টিমিডিয়ার কোন অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায়নি।

সুত্র জানায়, বগুড়া জেলায় ২০১৮/১৯ অর্থ বছরে ৪১টি স্কীম বাস্তবায়নের জন্য গ্রহন করা হয়। স্কীম বাস্তবায়নের জন্য ১২ কোটি ৩০ লাখ বরাদ্দ প্রদান করা হয়। স্কীম তৈরির জন্য জেলা ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রউফ প্রতি স্কীম হতে ৫ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহন করেন। বিভাগীয় প্রকৌশলী জাহিদ প্রতি স্কীমে স্বাক্ষরের জন্য ১ হাজার টাকা করে গ্রহন করেন। প্রকল্প চলাকালীন আলিমুজ্জামানের পরিদর্শনের জন্য নানা অজুহাতে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের পরিচালক মো: আলিমুজ্জামন চৌধুরী একজন নন-ক্যাডার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্তে¡ও মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ নিয়েছেন। প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী তিনি এই প্রকল্পের পরিচালক হতে পারেন না।

এই দুর্র্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে সহকারী প্রকৌশলী থাকালীন সিলেটে বদলী করা হলেও তিনি বদলী আদেশ অমান্য করে অত্র কর্মস্থলে অদ্যবধি বহাল তবিয়েত আছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে সরকারী আদেশ অমান্যের অভিযোগ সহ অন্যান্য অভিযোগ তদন্তের সার্থে ২৮ ফেব্রæয়ারী-২০১১ সালে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সচিব উজ্জ্বল বিকাশ দত্ত ২৮ ফেব্রæয়ারী-২০১১ তারিখে মপম/ম-১/অভিযোগ-৩/২০১০/৯২ নং স্মারকের মাধ্যমে এক প্রজ্ঞাপন জারি করেন। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, মো: আলিমুজ্জামান চৌধুরী, সহকারী প্রকৌশলী, মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য ভবন, ঢাকা কে মৎস্য চাষ প্রকৌশলী হিসেবে বিভাগীয় উপ-পরিচালকের দপ্তর, সিলেট বিভাগ, সিলেটে বদলী করা হয়। কিন্তু তিনি বদলীর আদেশ অমান্য কওে কর্মস্থলে অদ্যবধি যোগদান করেনি, যা শৃঙ্খলার গুরুতর লঙ্ঘন। এই পেক্ষিতে মহাপরিচালক তার নিকট কৈয়িফত তলব করেন এবং তিনি ১৩/০২/১১ তারিখে কৈয়িফতের জবাব দাখিল করেন। তার জবাব সন্তোষজনক নয় মর্মে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মহাপরিচালক, মৎস অধিদপ্তর অনুরোধ জানিয়েছেন।

০২। বর্নিত প্রেক্ষিতে দেখা যায় যে, তার আচরন সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল)  বিধিমালা-১৯৮৫ এর ৩ (এ) (৪) এ বর্নিত ‘অদক্ষতা’ এবং ৩ (বি) এ বর্নিত ‘অসদাচরণ’ এর সামিল। মো: আলিমুজ্জামান চৌধুরী, প্রাক্তন সহকারী প্রকৌশলী, মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য ভবন, ঢাকা এর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। এছাড়াও মো: আলিমুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে নানাবিদ গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, যা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তাকে স্বপদে রেখে নিরপেক্ষ তদন্ত করা সম্ভব নয়। সুতরাং তাকে একই বিধিমালার বিধি-১১ মোতাবেক সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

০৩। এমতাবস্থায়, সিলেটে বদলীর সরকারী আদেশ অমান্যের অভিযোগে এবং তার বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগ সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল)  বিধিমালা-১৯৮৫ এর বিধি-১১ অনুযায়ী মো: আলিমুজ্জামান চৌধুরী, সহকারী প্রকৌশলী, মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য ভবন, ঢাকা (মৎস্য চাষ প্রকৌশলী বিভাগীয় উপ-পরিচালকের দপ্তর, সিলেট বিভাগ, সিলেট হিসেবে বদলীর আদেশাধীন) কে অদ্য ২৮/০২/২০১১ তারিখ হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।  এব্যাপারে অপরাধ বিচিত্রার অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। চলবে……  

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

twelve − 12 =