জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম এর উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১১টায় টেকসই উন্নয়নে কন্যাশিশুর নিরাপত্তা ও জেন্ডার সমতা বিষয়ক একটি অনলাইন আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়াম্যান জনাব নাছিমা বেগম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজের শিক্ষক ড. সোমা দে; জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরামের সহসভাপতি জনাব শাহীন আক্তার ডলি; অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক জনাব ওয়াহিদা বানু; দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম স¤পাদক জনাব সোহরাব হাসান; দৈনিক ইত্তেফাক স¤পাদক জনাব তাসমিমা হোসেন; সিনিয়র সাংবাদিক জনাব অজয় দাস; বাংলাট্রিবিউনের চিপ রিপোর্টার জনাব উদিসা ইসলাম; ইউনিসেফ বাংলাদেশের চাইল্ড প্রটেকশন ¯েপশালিস্ট জনাব শাবনাজ জাহেরীন; ইউএনডিপির জেন্ডার এক্সপার্ট জনাব বিথিকা হাসান; এটিএন বাংলার সিনিয়র ভিডিও এডিটর জনাব রোকসানা বানু; নাগরিক উদ্যোগের জনাব নাদিরা পারভিন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, গ্লোবাল ভাইসপ্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর,দি হাঙ্গার প্রজেক্ট, সভাপতি জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরাম। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন জনাব নাছিমা আক্তার জলি, সম্পাদক, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম।
নাছিমা বেগম বলেন, মানবাধিকার অর্থ শুধু গুম, খুন এসব থেকে রক্ষার অধিকারই নয়, বাসস্থানের অধিকার, শিক্ষার অধিকার, নারী ও শিশুদের অধিকারও মানবাধিকার। আমরা ভেবেছিলাম করোনাকালে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি নির্যাতন কমবে, কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে নির্যাতন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। একই জায়গাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনুরোধ করছি। মানবাধিকার কমিশন এটা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। প্রথমবারের মতো ন্যাশনাল ইনকোয়ারি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব না, তাই আমি সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
নাছিমা আক্তার জলি Ÿলেন, আজকের কন্যাশিশুরা আগামী দিনের বিশ্বকে নেতৃত্ব দিবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন করতে হলে কন্যাশিশুদের শিক্ষা, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আজকের আয়োজনে আমরা টেকসই উন্নয়নের কথা বলেছি। বর্তমানে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রগতি দেখতে পাই, কিন্তু পুরুষদের সাথে যদি তুলনা করি তাহলে নারীরা এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। নারী ও কন্যাশিশুদের মর্যাদা ও ক্ষমতায়নের প্রশ্নে আমাদের এখনও অনেক দূর যেতে হবে। আমরা দেখতে পেয়েছি করোনাকালীন সময়ে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি বিভিন্ন নির্যাতনের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে।
আমরা ১৩৫ জন কর্মজীবী নারীদের ওপর গবেষণা করেছি সেই গবেষণাতে দেখা গেছে ১৩৫ জনই কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আমরা ২০২১ সালে জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত কন্যাশিশুদের প্রতি নির্যাতনের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখতে পেয়েছি, এই সময়কালে ৮১৩ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, ১৫৩ জন আÍহত্যা করেছে। আমরা এমন চিত্র আর দেখতে চাই না।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন ছিল দেশের সকল জনগোষ্ঠীর আÍমর্যাদাশীল জীবন গড়ে তোলা। কিন্তু অর্ধেক জনগোষ্ঠী অর্থাৎ নারী ও কন্যাশিশুদের জন্য আÍমর্যাদাশীল জীবন তৈরি করতে না পারলে আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ হবে না। কন্যাশিশুদের অধিকার হরণের একটি বড় ক্ষেত্রে হচ্ছে বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহের ফলে শুধু কন্যাশিশুর ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সর্বশক্তি নিয়োগের
অজয় দাশ গুপ্ত বলেন, বর্তনামে কন্যাশিশুদের জন্য দুইটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ কর্মসংস্থান ও সহিংসতা। সহিংসতা বন্ধে রাজনৈতিক কর্মী, শিক্ষক ও স্থানীয় সরকার তিনটা মিলিয়ে যে ভ’মিকা দেয়া দরকার ছিল দুঃখজনকভাবে সেটি আমরা দেখতে পাচ্ছি না। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেও এই সহিংসতা বন্ধ করা যাচ্ছে না।
উদিসা ইসলাম বলেন,আমরা মূল জায়গায় কাজ করতে পারছি না। নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর নির্যাতিতকে পুনর্বাসিত করার কাজ নেই বললেই চলে। সেটি করতে পারলে নির্যাতিত্রা সাহস পাবে যে তাদের পাশে কেউ আছে।
সোহরাব হাসান বলেন, গত ৫০ বছরে আমাদের অনেক অর্জন যেমন আছে ব্যর্থতাও কম নয়। নারীর প্রতি সহিংসতা ব্যাপকতা পেয়েছে। নারীর প্রতি রাষ্ট্রের, সমাজের, ধর্মের, পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি কী এগুলো কিন্তু আলোচনায় আসা উচিত এবং কাজটি শুরু করতে হবে তৃণমূল থেকে।
তাসমিমা হোসেন বলেন, আমরা অনেক ক্ষেত্রে যেমন এগিয়ে গিয়েছি তেমনি অনেক নেগেটিভ ফ্যাক্টর আমাদেরকে পিছন দিকে টেনে ধরেছে।
নাদিরা পারভিন বলেন, বর্তমানে ডিজিটাল ভায়োলন্সের সংখ্যা বেড়ে গেছে। কন্যাশিশুদের মধ্যে এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো গেলে কিছুটা হলেও প্রতিরোধ করা যাবে বলে আমার মনে হয়।
ওয়াহিদা বানু বলেন, বাল্যবিবাহের দৌরাÍ্য বাড়ার পিছনে কারণগুলো হলো যৌতুক, সামাজিক নিরাপত্তা না থাকা ও অভিভাবকদের শিক্ষার প্রতিদান দেখতে না পাওয়া। কিশোর কিশোরীদের ভলিটান্টিয়ারের মাধ্যমে সচেতন করে তুলতে হবে। পুরুষ সদস্যদেরকে রোল মডেল হতে হবে। মেয়েদের ভিতরে যে অসীম শক্তি আছে সেটি জাগিয়ে তুলতে হবে।