লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ বাজারে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ

0
362

এস এম আওলাদ হোসেন : লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বৃহত্তম বাণিজ্যিক কেন্দ্র চন্দ্রগঞ্জ বাজারের ইজারাদারের বিরুদ্ধে সরকার নির্ধারিত হার থেকে কয়েক গুন বেশী টোল আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ দিয়ে প্রতিকার চেয়েছেন। গত ১৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের বরাবরে বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রদত্ত অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, চন্দ্রগঞ্জ বাজারের ইজারাদার সরকারি ইজারার শর্ত লংঘন করে সরকার নির্ধারিত হার থেকে ১০ গুন বা তার  বেশী হারে ইজারার টোল প্রদানে ব্যবসায়িদের বাধ্য করছে। টোল আদায়কারিদের দাবীকৃত টোল প্রদানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা রাজি না হলে তারা শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত ও তাদের মালামাল তছনছ করা হয়ে থাকে বলে অভিযোগে বলা হয়। ইজারার শর্ত মোতাবেক বাজারের প্রকাশ্য স্থানে সরকার নির্ধারিত টোল হার সম্বলিত সাইনবোর্ড ঝুলানোর কথা থাকলেও এই বাজারের কোথাও কোন সাইনবোর্ড লাগানো হয়নি।

সরকার নির্ধারিত হার গোপন করে ইজারাদার  তার ইচ্ছামতো টোল আদায় করে থাকে। অপর দিকে ইজারার শর্ত মোতাবেক কোন ভাবে সাব- ইজারা না দেওয়ার কথা থাকলেও এখানে প্রায় সব গুলো গন্ডি সাব-ইজারা দেওয়া। এ ছাড়া যেখানে সরকার নির্ধারিত টোল হার ৫০-১০০ টাকা সেখানে দোকানদারদের থেকে আদায় করা হয় ৫০০-১,০০০ টাকা পর্যন্ত।

ইজারার শর্ত মোতাবেক টোল আদায় করার সময় টোলের হার উল্লেখ করা রশিদ প্রদানের বিধান থাকলেও এই বাজারের টোল আদায়ে ইজারাদার কোন রশিদ প্রদান করেন না। অভিযোগে ব্যবসায়ীরা আরো জানান, ইজারাদারের চাহিদা মোতাবেক টোল প্রদান ও অতিরিক্ত টোল আদায় করার প্রতিবাদ করলে ইজারাদার তার লালিত ক্যাডার বাহিনীদের দিয়ে ব্যবসায়িদের মারধর করে থাকেন।

অভিযোগ পত্রে এই রকম ৪টি বাহিনীর নাম উল্যেখ করা হয়েছে। এ দিকে বাজারের ময়লা আবর্জনা অপসারনের জন্য ইজারাদার নিজ খরচায় মালি নিয়োগ করার কথা থাকলেও, এ বাজারে মালির বেতন বাবদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মালিরা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে থাকেন।

চন্দ্রগঞ্জ বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে ১০ নং চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি, চন্দ্রগঞ্জ বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি  মোঃ নুরুল আমিন ব্যাবসায়ীদের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত টোল প্রদান না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। বিষয়টি আমি মৌখিক ভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। চন্দ্রগঞ্জ বাজারে এখন ইজারার নামে প্রকাশ্য চাঁদবাজি চলছে বলে অবহিত করে এই জনপ্রতিনিধি জানান, অতিরিক্ত টোল আদায়ের কারনে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এর অবসান হওয়া আবশ্যক।

এ ব্যাপারে শনিবার রাতে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে বাজারের ইজারাদার জাহাঙ্গীর আলম  অভিযোগের বিষয়টি পাশকাটিয়ে গিয়ে এ সাংবাদিককে নানা ভাবে হুমকী ধমকী ও অশ্লীল আচরণ করেন। নিজেকে থানা শ্রমিকলীগের সভাপতি ও বাজার কমিটির সদস্য পরিচয় দিয়ে এ সাংবাদিককে পত্রিকার কার্ড দেখাতে বলেন।

এ দিকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ পত্রে  বাজারের ব্যবসায়ীদের উপর নির্যাতন ও বিভিন্ন বাহিনীর নেতৃত্বদানের অভিযোগ করা চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক কাজী মামুনুর রশিদ বাবলুর নিকট চন্দ্রগঞ্জ থানা ভবনের অভ্যন্তরে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ সাংবাদিককে হাজিরপাড়া বাজার ও মান্দারী বাজার নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, জেলা প্রশাসকের নিকট কে অভিযোগ করেছেন তাকে আগে সনাক্ত করে পরবর্তীতে তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করবেন।

এ দিকে বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নামে জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগের বিষয়ে চন্দ্রগঞ্জ বাজার কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলী করিম ( আলী করিম মেম্বারের) কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চন্দ্রগঞ্জ বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল কুদ্দুছ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অভিযোগের বিষয়ে কোন কিছু জানেন না এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কেউ তাকে বিষয়টি জানাননি বলে দাবী করেন।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে মাওলানা আব্দুল কুদ্দুছ জানান, বাজারে টোল আদায়ের কোন সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে কিনা এবং অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে কিনা এ  বিষয়েও তার কিছু জানা নেই।

এ দিকে জেলা প্রশাসকের নিকট দায়েরকৃত অভিযোগের বিষয়ে বাজারের কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায়ের ফলে তারা পণ্যের দাম  অতিরিক্ত আদায় করতে হচ্ছে। এতে বাজারে দিনদিন ক্রেতা কমে যাচ্ছে, চন্দ্রগঞ্জ বাজারে মানুষ না এসে আশে পাশের বাজারে চলে যাচ্ছে। তাদের বেচা  বিক্রি দিনদিন কমে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসক মহোদয় তাদের এই হয়রানির হাত থেকে রক্ষা করবেন বলে তারা দৃষ্টি আকর্ষণ

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

12 − four =