দিনে নেতা রাতে চালায় জুয়া খায় ফেন্সিডিল আলমগীর

0
759

মোহাম্মদ জুবাইর: মহাধুমধামে চলছে সর্বনাশা জুয়া; পুলিশের অভিযানে মিলছেনা সুফল!দফায় দফায় অভিযান চললেও বন্ধ হয় না জুয়া বন্দর নগরীতে মাদকের সাথে তালমিলিয়ে চলছে নিষিদ্ধ ছোট-বড় জুয়ার ঘর। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বিভিন্ন থানায় আইন শৃঙ্খলাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত অভিযানে ছোটছোট জুয়া খেলা বন্ধ হলেও নগরীর বিভিন্ন থানায় বহাল তবিয়তে চলছে ক্ষমতাধরদের জুয়া। তারমধ্যে নগরীর হালিশহর থানাধীন ২৭নং ওয়ার্ড ছোটপুল ইসলামিয়া ব্রিফিল্ড এলাকায় আলমগীরের জুয়ার বোর্ড এখন ‘টপ অব দ্যা টক’। যা ভয়ানক মাদকের চেয়েও শক্তিশালী রুপ নিয়েছে। অপরদিকে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে জনমনে। 

জানা গেছে, সারাদিনের উপার্জিত টাকা খেলায় খুইয়ে  ওই এলাকায় বসবাসকারীদের অনেকের সংসারে বেড়েছে কলহ। ভয়ালগ্রাসী এ খেলা বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দফায় দফায় অভিযান চালানো হলেও খেলা বরাবরেই চলমান রয়েছে; অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। অপরদিকে এলাকাবাসিসহ ভুক্তভোগীরা মুখ খুললেও নিজেদের নাম প্রকাশে করছে আপত্তি। তারা মনে করছেন, নাম প্রকাশ হলে তাদেরকে পড়তে হতে পারে আলমগীরের রোষানলে ।

এলাকাবাসি ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ছোটপুলে পৈতৃক সম্পত্তি বুইল্লার কলোনিতে কয়েকটি দলে বিভক্ত  হয়ে চলে জুয়া। দিনে খেলোয়াড়দের তেমন আনাগোনা না থাকলে সন্ধ্যার পর খেলা জমে ওঠে। এই আসরে যাওয়া আসার দুটি পথ রয়েছে। পুরো খেলার বোর্ডটি নিয়ন্ত্রণ করে আলমগীরের বিশস্ত কর্মচারি তাজু।

একাধিক সূত্র জানায়, আলমগীর খুবই হিংস্র। সব সময় নেশার ওপর থাকে। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা বিভিন্ন থানায় রয়েছে। আলমগীরের বিশ্বস্ত তাজু নামের একজন সব কিছু দেখভাল করায় তাকে কোনো বিষয়ে টেনশন নিতে হয় না। এক কথায় বলা চলে, আলমগীর জুয়ার ঘরের মালিক হলেও হিসাব-নিকাশ থেকে শুরু করে সবকিছুর মূলকাণ্ডারী তাজু। যিনি (তাজু) থাকেন সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাহিরে।

বছরখানেক আগে ঢাকাসহ সারাদেশে ক্যাসিনো অভিযান পরিচালনার পর চট্টগ্রামে হালিশহরস্থ আবাহনী ক্লাবে জমজমাট ক্যাসিনো খেলা বন্ধ হয়ে যায়। যা এখন পর্যন্ত বন্ধ আছে। কিন্তু থেমে নেই খেলা পরিচালনাকারীরা। বিভিন্ন কৌশলে বিভিন্ন এলাকায় এ খেলাকে ব্যাঙের ছাতার মত বিস্তার ঘটিয়েছে। চকবাজার, বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন থানা এলাকায় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযানে জুয়ার টাকাসহ তাসের ফিট নিয়ে অনেকে গ্রেফতার হয়েছিলেন। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে ছোটবড় জুয়ার ঘর বন্ধ হলেও দিবানিশি বহাল তবওয়্যতে চলছে ক্ষমতাধরদের বোর্ড।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ছোটপুল পাঁচতলা বাজারের পাশদিয়ে সেমি পাকা ও বেড়া দিয়ে গড়ে ওঠেছে বুইল্লার কলোনি। সেখানে নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস এবং ঘনবসতি। এর মধ্যে জুয়ার সাম্রাজ্য গড়ে তুলছে আলমগীর হোসেন প্রকাশ জুয়াড়ি ডাইল আলমগীর। বাজারে প্রবেশের মুখে একদল কিশোরের বলয়। বাহিরের খবরা-খবর তারা দ্রুত ভেতরে পৌঁছে দেয়। তারা দৈনিক দুইশ থেকে তিনশ টাকা পায়। শুধু তাই নয়, কাঁচা রাস্তা দিয়ে খেলা ঘর পর্যন্ত পৌঁছাতে চোখে পড়বে কয়েকভাগে বিভক্ত কিশোরের জটলা। খেলাঘরের প্রধান ফটকে লোহার গেটের সামনে দুজন পাহারাদার। খেলোয়াড় ছাড়া অপরিচিত কিংবা সন্দেহজনক কাউকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেয় না বলয়টি। যদিও প্রবেশ করতে চায় তাহলে মুখোমুখি হতে হয় বিভিন্ন প্রশ্নের। হিতে বিপরীত হলে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে অতীতে। 

ছোটপুল সমাজ কল্যাণ কমিটির বরাতে স্থানীয়রা জানায়, কমিটি অভিযোগ পেয়ে দফায় দফায় আলোচনা করেও বন্ধ করতে পারেনি এ জুয়া। বর্তমানে এটি এলাকায় বিষফোঁড়া।

সূত্র জানায়, সপ্তাহ কদিন আগেও জুয়ার বোর্ডে অভিযান চালিয়ে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এর আগেও দফায় দফায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হয়। দুই তিন দিন বন্ধ থাকার পর ফের খেলা জমে ওঠে।

জুয়া খেলা পরিচালনাকারীদের ভাষ্যমতে, হালিশহর থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে দিবানিশি এই খেলা চলে। যদিও সাবেক ওসি রফিক থাকাকালীন সময় দুই বছর খেলা বন্ধ ছিল।

পরিচয় গোপন রেখে জুয়াড়ি জসিম আলাপচারিতায় বলেন, থানা পুলিশ কন্ট্রাক্ট থাকাতে আলমগীর ভাইয়ের জুয়ার বোর্ডে খেলোয়াড়দের খেলতে (পুলিশি) কোনো ভয় থাকে না। কড়া নিরাপত্তাজনিত কারণে খেলোয়াড় ছাড়া বাহিরের কোনো সাধারণ লোক ভিতরে ঢুকতে পারে না। প্রতিদিন এখানে ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকার খেলা চলে। তবে হালিশহর থানায় সাবেক ওসি রফিকুল ইসলাম দায়িত্বপালনকালীন সময়ে প্রায় দুই বছর খেলা বন্ধ ছিল।

এ বিষয়ে আলমগীরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

জুয়া বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সফল নাকি ব্যার্থ জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার ( অপরাধ ও ক্রাইম বলেন, এই বিষয়টি আমার নলেজে নাই, অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।জুয়া খেলা স্থায়ী বন্ধে কোনো পদক্ষেপ আছে কিনা জানতে চাইলে হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, এই জুয়াটির বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ আছে। আমরা দফায় দফায় অভিযান পরিচালনা করছি কিন্তু পুলিশের অভিযানের পরেও তারা আবার পুনরায় খেলাটি চালু করে। এটি স্থায়ীভাবে বন্ধে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × 3 =