গোটা বিশে^ মুসলিমদের জন্য ইবাদত ও রহমতের মাস পবিত্র রমযান। মহান আল্লাহ’র নৈকট্য লাভের জন্য রমযানের ইবাদতের জুরি নেই। তাই ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা এই মাসকে সাগত জানায়। ৩০ দিন কঠোর সিয়াম সাধনের মাধ্যমে নিজেকে পাপমুক্ত করার জন্য এ মাসে যে সুযোগ তা বছরের অন্য মাসে সম্ভব নয় বলে মুসলিমরা বিশ^াস করেন। অথচ আমাদের দেশে প্রতি বছর রমযান মাসে মানুষের দুর্ভোগ না কমে বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। এর কারণ অনেক। রমযান আসার কয়েকদিন আগ থেকে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অবৈধ মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করে। এই অভাব সৃষ্টি করার পেছনে উপাদানটি কাজ করছে তা হচ্ছে অবৈধ উপায় টাকা বানানো। ইসলাম এভাবে অবৈধ উপায়ে টাকা বানাতে নিষেধ করেছে। চাল, চিনি, ছোলা তেল থেকে শুরু করে তরিতরকারির বাজারে শুরু হয় অস্থিরতা। প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের দাম প্রায় দ্বিগুন হয়ে যায়।
মধ্যবিত্য ও নিন্ম মধ্যবিত্যদের জন্য রমযান বয়ে আনে চরম দুর্ভোগ। এই কারণে প্রতি রমযানের শুরুর আগ থেকে মধ্যবিত্য শ্রেণীর মধ্যে দেখা যায় চরম উৎকণ্ঠা। দ্রব্যমূল্য সামাল দিয়ে মাস পার করতে পারছে না।
এই অবস্থায় আবার সামনে ঈদ। পরিবারের সদস্যদের কেনাকাটার জন্য বড় একটি বাজেট রাখা মধ্যবিত্যদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে এক মাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই রাজনৈতিক নেতা।
তারা রমযান মাসে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভোক্তাদেরকে জিম্মি করে। বিশে^র অসুমলিম দেশগুলোতে রমযান মাসে অনেক দ্রব্যের মূল্য অর্ধেকে নামিয়ে আনে। অসুমলিম হয়েও ইমলামকে তারা কত সম্মান দেখাছে।
অথচ আমাদের বাংলাদেশে ইসলাম ও ধর্ম নিয়ে যারা বড় বড় কথা বলে তারা মানছে না ইসলামের নিয়ম। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতির কোন প্রতিবাদ কেউ করছে না।
এদিকে রামযানের শেষে ঈদুল ফিতর। ঈদকে টার্গেট করে অফিস আদালতে ঘুষ ও দুর্নীতির পরিমাণ আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পায়। দুর পাল্লার বাসগুলোতে ভাড়া দ্বিগুণ বেড়ে যায়। ট্রেনে টিকেট সংগ্রহ করতে গেলে কাউন্টার থেকে বলা হয় টিকেট নাই।
টিকেট কাউন্টারের একটু দুরেই কালোবাজারে চড়া মূল্য ট্রেনের টিকেট বিক্রি হয়। টিকেট কাউন্টারের অসাধু কর্মচারীরা কালোবাজারীদের কাছে বেশি মূল্যে টিকেট বিক্রি করে। এর ফলে যাত্রীরা জিম্মি হয় প্রতি রমযানের ঈদের আগে।
স্টিমারগুলোতে কেবিন ভাড়া তিনগুন বেড়ে যায়। জাহাজের ডেকের ভাড়াও সমানুপাতিক হারে বেড়ে যায়। যাত্রী নির্যাতন ও জুলুম করার মত সুবর্ণ সুযোগ রমযান ছাড়া অন্য মাসে সম্ভব নয়।
পরিবার নিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পদে পদে বিরম্বনার শিকার হতে হয়। মহাসড়কে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজরা পথে পথে যানবাহন থেকে মোটা অংকের চাঁদা তোলে।
এসব চাঁদা নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয় মর্মে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এভাবে প্রতি রমযানে আমাদের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। এর কারণ ইসলাম যে ত্যাগ ও শৃঙ্খলতার শিক্ষা দিয়েছে তা থেকে আমরা দূরে সরে এসেছি।