সুরা ওয়াকিয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত

0
533

সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সুরা ওয়াকিয়া তিলাওয়াত করবে, তাকে কখনো দরিদ্রতা স্পর্শ করবে না।’’ ইবনু মাস‘উদ (রা.) প্রত্যেক রাতে তাঁর মেয়েদের এই সুরা তিলাওয়াত করার আদেশ করতেন। নিম্নে এই নিয়ে একটি ছোটো ঘটনা দেয়া হলো, [ইমাম বাইহাকি, শু‘আবুল ঈমান: ২৪৯৮; হাদিসটির সনদ দুর্বল] বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) জীবনের শেষ বয়সে অসুখে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত ছিলেন। তখন সে সময়ের আমিরুল মুমিনিন হজরত ওসমান (রা.) তাঁকে দেখতে যান। তাদের মুখোমুখি কথাবার্তা ছিল এমন- জনাব, আপনার অসুখটা মূলত কী? অসুস্থ সাহাবির জবাব- জীবনে অনেক পাপ করেছি; অসুখ এটাই। প্রশ্ন, আপনার চাহিদা, বাসনা বা শখ কী? চটপট জবাব, শুধুই আল্লাহর রহমত। ফের প্রশ্ন, আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে চাই, আপনার মত কী? দৃঢ়তার সঙ্গে জবাব দিলেন, কোনো প্রয়োজন নেই। ওসমান (রা.) অনুরোধের সুরে বললেন, কিছু উপহার গ্রহণ করুন। ইনতেকালের পর এই উপহার আপনার কন্যাদের কাজে লাগবে। এবার আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আপনি চিন্তা করছেন, আমার মেয়েরা দরিদ্র হয়ে যাবে। তারা খেয়ে না খেয়ে, উপবাসে অভাবে জ্বলবে। আমি এমন আশঙ্কা করি না। সব মেয়েকে জোর নির্দেশ দিয়ে রেখেছি, অবশ্যই তোমরা প্রতি রাতে সুরা ওয়াকিয়া তেলাওয়াত করবে। তিনি বলেন, প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-কে বলতে শুনেছি, প্রতি রাতে কোনো ব্যক্তি সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করলে সে কখনো খাদ্যসংকটের মুখোমুখি হবে না। (সূত্র : তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন/ মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ), বায়হাকি /ঈমান অধ্যায়, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা-৪৯১) একটি বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করবে ও শিখবে, সে গাফেলদের কাতারে লিপিবদ্ধ হবে না এবং সে ও তার পরিবার কখনও অভাবগ্রস্ত হবে না।’ [শায়খ আলবানি, সিলসিলা দ্ব‘ঈফাহ: ২৯১; বর্ণনাটি দুর্বল] সুরা ওয়াকিয়া পড়ার মাধ্যমে সম্পদশালী হওয়া যায়। এজন্য অনেকে একে ‘সুরাতুল গিনা’ বা ধনাঢ্যতার সুরা বলে থাকেন। একটি বর্ণনায় এসেছে, ‘‘তোমরা তোমাদের নারীদের সুরা ওয়াকিয়া শিক্ষা দাও। কেননা, এটি ধনাঢ্যতার সুরা।’’ [শায়খ আলবানি, দ্ব‘ঈফুল জামি’: ৩৭৩০; বর্ণনাটি দুর্বল] সুরা ওয়াকিয়ার ব্যাপারে একটি হাদিস প্রমাণিত, সেটি হলো, সুরা ওয়াকিয়া এবং আরও কিছু সুরার প্রভাবে নবিজির দেহ মোবারকে বার্ধক্য এসে গিয়েছিলো। এ ব্যাপারে অন্য একটি পর্বে আলোচনা থাকবে। এই সুরার ফজিলতে বর্ণিত বাকি হাদিসগুলোর সনদ দুর্বল। বিশেষত ফজিলত ও আমলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদিসের উপর আমল করা বৈধ; যদি সেটি মারাত্মক পর্যায়ের দুর্বল না হয় বা অন্য কোনো সহিহ হাদিসের বিরোধী না হয়। অতএব, কেউ চাইলে নবিজি থেকে প্রমাণিত মনে না করে এই হাদিসগুলোর উপর আমল করতে পারেন। দুর্বল হাদিসের ব্যাপারে আমাদের বিশ্বাস হবে এমন যে, ‘‘এগুলো নবিজির কথা বা কাজ হিসেবে প্রমাণিত নয়, তাই এগুলোকে নবিজির কথা বা কাজ হিসেবে বিশ্বাস করি না। তবে, এগুলো নবিজির কথা বা কাজ হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রাখে।’’ ধরুন, একটি হাদিস আসলেই সত্য, কিন্তু মুহাদ্দিসগণ সেটিকে অনেক সময় ‘দুর্বল’ বলতে বাধ্য হন। কারণ, যে বর্ণনাসূত্রে তাঁদের কাছে এই হাদিসটি এসেছে, সেটি নির্ভরযোগ্য নয়। বর্ণনাসূত্রে হয়তো এমন কোনো বর্ণনাকারী আছেন, যিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করতেন বলে প্রমাণ আছে, অথবা তার ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না যে, তিনি ব্যক্তি হিসেবে কতটুকু গ্রহণযোগ্য ছিলেন কিংবা তার অন্য কোনো ত্রুটি আছে। হাদিস তো আমাদের কাছে আইন, বিধান। সুতরাং এর বিশুদ্ধতার প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। সামান্য সন্দেহ হলেও মুহাদ্দিসগণ স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন। হাদিসের বিশুদ্ধতা নিরূপণে তাঁরা কখনও আবেগ দ্বারা তাড়িত হতেন না, ফলে হাদিস হিসেবে প্রচলিত অনেক সুন্দর ও চাকচিক্যময় কথাকেও তাঁরা উসুলে হাদিস (হাদিসের নীতিমালা) অনুসারে দুর্বল সাব্যস্ত করেছেন। আল্লাহ চাইলে ভবিষ্যতে কখনও ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে, হাদিসের চেইন বা সনদের বিষয়ে বুঝানোর চেষ্টা করবো। সুরা ওয়াকিয়ার আমল করে অনেকে সাফল্য পেয়েছেন। কারণ কুরআনকে আল্লাহ শিফা (আরোগ্য) এবং রহমত বলেছেন। বস্তুত, আল্লাহই মানুষকে প্রাচুর্য দেন এবং আল্লাহই দারিদ্রের পরীক্ষায় নিপতিত করেন। মুমিন সর্বাবস্থায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে, সবর ইখতিয়ার করে এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তকে সম্মান জানায়। আরেকটি বিষয় হলো, দারিদ্র ও ঋণ থেকে মুক্তির জন্য সুরা ওয়াকিয়ার পাশাপাশি অন্যান্য সহিহ বর্ণনায় উল্লেখিত আমলগুলোও করা উচিত। আল্লাহ্ তাওফিক দিলে সেসব সহিহ বর্ণনার আমলগুলো নিয়ে কোনোদিন লিখবো, ইনশাআল্লাহ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

seventeen − 10 =