নিজস্ব প্রতিবেদক : বছরের পর বছর ধরে চাকরি না করেও বেতন এবং টিএ বিল নিচ্ছেন রেলের একজন কর্মচারী। বেতন এবং টিএ বিল থেকে ভাগ দিচ্ছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। যে কারণে কর্তৃপক্ষের চোখ বন্ধ। বাংলাদেশ রেলওয়ে কুমিল্লা পাম্প হাউজের মোঃ সফি মিয়া (FASBA-2) দীর্ঘ ছয় সাত বছর ধরে কাজ না করেই তিনি বেতন ও টিএ বিল নিচ্ছেন। কুমিল্লা স্টেশনের পাম্প হাউজে সফি মিয়ার এই দায়িত্ব পালন করছে জয়নাল নামে বয়স্ক এক বহিরাগত লোক । তাকেও প্রতিমাসে লামসাম কিছু দিচ্ছেন সফি মিয়া। সফির অবর্তমানে ডিউটি করছেন জয়নাল আবেদীন । তিনি রেলের কর্মচারী নয়। কুমিল্লায় স্থানীয়ভাবে বসবাসের সুবাদে পাম্প অপারেটরের কাজ করছেন জয়নাল। থাকেন রেলের বাসা দখল করে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জয়নাল বলেন , লাকসামের বিদ্যুৎ লাইন ম্যান সুফিয়ান , ফোরম্যান কিশোর বাবুর নির্দেশে আমি এই পাম্পের দেখাশুনা করছি আজ প্রায় ৬-৭ বছর। এই পাম্পের মুলত দায়িত্ব সফি মিয়ার। সে আজ ৬-৭ বছর চাকুরী করে না, সে আসেও না। সফি তার দেশের বাড়িতে তান্ত্রিক, জাদুটোনা ব্যবসা করে।
সফিকে ফোন করলে বলে আমি সামনে মাসে আসছি এই কথা বলেই মাসকে মাস পার করে দেয়। রেলের অফিসাররা তাকে কিছুই বলে না। হঠাৎ আসলেও অফিসারদের সামনে কি একটা মন্র পরে সফি, তারা তখন অন্যরকম হয়ে যায়। সফি প্রতিমাসে লাইনম্যান সুফিয়ানের কাছে টাকা পাঠায় বিকাশে। এই টাকা সুফিয়ান, ফোরম্যান, অফিসের কেরানী মিলে টাকা ভাগ করে খায়। সদ্য কুমিল্লা পাম্পে যোগদানকারী খালাসী সুকুল চন্দ্র ত্রিপুরা বলেন – আমি গত সেপ্টমবার মাসের ১৪ তারিখ কুমিল্লা কাজে জয়েন্ট করি। এখানে আসার আগে চাঁদপুর চাকরি করেছি। আমি মাত্র দুই-তিনদিন ডিউটি করেছি পাম্পে । আমি এখন পাওয়ার হাউজে ডিউটি করছি। আমি সফি মিয়ার নাম শুনেছি কিন্তু তাকে এখন পর্যন্ত চোখে দেখিনি।
তাকে আমিও চিনিনা। আমি সকালে ডিউটিতে আসি বিকেলে চলে যাই। পাম্প দেখাশুনা করেন স্থানীয় এক মুরুব্বী জয়নাল মিয়া। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সফি মিয়া একজন তান্ত্রিক কবিরাজ। দিনভর জাদুটনা করেই তার দিন কাটে। তিনি চাকরি না করে দেশের বাড়িতে কিশোরগঞ্জ এলাকায় তান্ত্রীক কাজে ব্যস্ত থাকেন। এভাবে সাত বছর ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত সফি। কিন্তু কর্মস্থলে না থাকলেও তার নামে হচ্ছে হাজিরা, টিএ, বিল। যদিও তার টিএ, বিলে নামের স্বাক্ষর করে দেন অফিসের কর্মচারীরা। এজন্য বেতন ও টি এ বিলের একটা অংশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে দিয়ে তিনি এই চাকরি টিকিয়ে রেখেছেন। কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকলেও প্রতিমাসে অন্তত ১০ দিন সফি মিয়ার নামে টিএ বিল করা হয়। প্রতিদিন ৪৯০ টাকা হারে ১০ দিনে ৪ হাজার ৯০০ টাকা টিএ বিল হয় সফি মিয়ার নামে। সফি মিয়ার বেতন থেকে ১৫ হাজার এবং টিএ বিলের একটা অংশ প্রতি মাসে দিতে হয় তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কিশোর চন্দ্র দেব বর্মা, লাইনম্যান সুফিয়ানুর রহমান ও মিটার রিডার সৈয়দ মোহাম্মদ আশফাককে। এদেরকে খুশি রাখার কারণে সফি মিয়া দীর্ঘ ছয় সাত বছর কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকলেও তার বেতন টিএ বিল সহ কর্মস্থলের সবকিছুই ঠিক আছে।
সফি মিয়াকে আরও নিরাপদে রাখতে সম্প্রতি কিশোর চন্দ্র তার বড় ভাই ইলেকট্রিক খালাসী পদে কর্মরত সুকুল চন্দ্র ত্রিপুরাকে কুমিল্লা পাম্প হাউজে বদলি করেছেন। সুকুল চাঁদপুরে কর্মরত ছিল। ১৩ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর থেকে বদলি হয়ে লাকসামে আসলে ১৪ সেপ্টেম্বর তাকে কুমিল্লা পাম্প হাউজে পদায়ন করা হয়। কাগজপত্রে কুমিল্লা পাম্প হাউজে দুইজন স্টাফ থাকলেও বাস্তবে সুকুল একজন। সুকুল রেস্টে গেলে ওই বয়স্ক বহিরাগত জয়নাল সফি মিয়ার দায়িত্ব পালন করে। লাকসামের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) কিশোর চন্দ্র দেববর্মা ১১ অক্টোবর বলেন, সফি মিয়া নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিত থাকে। আবার ১২ অক্টোবর রাতে বলেন, আপনার কাছে শুনে আমি সফিকে খবর দিয়েছি এবং সে ১২ অক্টোবর এসেছে তাকে আমি শাসন করেছি। বিদ্যুৎ লাইনম্যান সুফিয়ানুর রহমান বলেন, সফি মিয়া থেকে আমরা কোন টাকা পয়সা খাইনা। সফি মিয়া বলেন, আমিতো কর্মস্থলে থাকি এবং কাজ করি।