সরকার নির্ধারিত মূল্য কার্যকর হচ্ছে না কেন?

0
358

অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি রোধে তিন নিত্যপণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। মানুষ আশা করেছিল, এসব পণ্য সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি হবে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত না হওয়া দু:খজনক। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর দৈনিক পণ্যমূল্য তালিকা প্রকাশ করলেও এক্ষেত্রে একটির সঙ্গে আরেকটির মিল থাকে না। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বাজারের মূল ফটকে তালিকা টাঙানোর বিধান থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা অনুপস্থিত। কোনো কোনো বাজারে তা চোখে পড়লেও এর অবস্থা এতটাই জরাজীর্ণ যে, তা ক্রেতার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। বস্তুত বর্তমানে বেশির ভাগ বিক্রেতা মূল্যতালিকার তোয়াক্কা করেন না; ক্রেতার কাছ থেকে ইচ্ছামতো অতিরিক্ত দাম আদায় করা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এসব যাদের দেখার কথা, তারা কী করছেন? বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের বহু সংস্থা থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ড একেবারেই দৃশ্যমান নয়। সম্প্রতি বিভিন্ন এলাকায় এসব সংস্থার কর্মকান্ড কিছুটা দৃশ্যমান হলেও বৃহৎ পরিসরে ভোক্তারা এসব সংস্থার কর্মকাণ্ডের সুফল পাচ্ছেন না। খুচরা বিক্রেতারা বলেছেন, অভিযানের আতঙ্ক ও লোকসানের ভয়ে তারা নতুন করে দোকানে আলু ও পেঁয়াজ তুলতে চাইছেন না। পাইকারি বাজারেও আলু ও দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমছে। এ তিন পণ্যের বাইরে অতীতে আরও কয়েকটি পণ্যের দাম সরকার বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু সেসব পণ্যও সরকার নির্ধারিত দামে পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি রাজধানীর কয়েকটি পাইকারি বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুচরা বিক্রেতারা এখনো পাইকারি বাজার থেকে কম দামে আলু, পেঁয়াজ ও ডিম কিনতে পারছেন না। জানা যায়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বাজারে অভিযানে গেলে তখন দাম কিছুটা কমে। তবে সেটা হয় ক্ষণস্থায়ী।

রাজধানীর পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, তারা লোকসানের আশঙ্কায় পণ্য কম কিনছেন। রাজধানীতে আলুর বড় চালান আসে মুন্সীগঞ্জ থেকে। কিন্তু সেখান থেকে গত কয়েকদিন সীমিত পরিমাণে আলু এসেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, হিমাগার থেকে আলু বাজারে ছাড়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাপ আছে।

আবার হিমাগার থেকে ছাড়া আলুর দাম নিয়েও চলছে লুকোচুরি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না আলু, চিনি ও দেশি পেঁয়াজ। বাজারে এসব পণ্যের সরবরাহেও ঘাটতি রয়েছে। অতীতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সরকার নির্ধারিত দামে ভোজ্যতেল ও চিনি বিক্রি হয়নি।

গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে আখের চিনি ক্রয়ে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। ক্রেতার আগ্রহ বৃদ্ধির কারণেই আখের চিনি নিয়ে নানা রকম কারসাজি হয়েছে। এমনকি বেশি দামেও এ পণ্যটি পাওয়া যায়নি। ব্যবসায়ীরা যখন কারসাজি করে আখের চিনির কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে, তখন বহু ক্রেতা বাধ্য হয়ে বেশি দামে ব্রাউন সুগার ক্রয় করেছে।

বাজারে এখন আখের চিনির সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও চিনি ক্রেতাদের অনেকে এখনো বিদেশি ব্রাউন সুগার ক্রয় করছেন। ভোক্তারা এমন নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি রোধে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

15 − 8 =