সিন্ডিকেট থামাও,জীবন বাঁচাও

0
448

মীর সালাহউদ্দীন: সিন্ডিকেট থামাও,জীবন বাঁচাও

শিরোনামে প্রতিবাদী মানববন্ধনে ভোক্তাদের অধিকার সুরক্ষায় পৃথক ভোক্তা অধিকার মন্ত্রণালয়ের দাবি।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভোক্তাদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় থাকলেও বাংলাদেশে ভোক্তাদের জন্য পৃথক কোন মন্ত্রনালয় নেই।ভোক্তার অধিকার নিয়ে ক্যাব দীর্ঘদিন ধরে সভা,সেমিনার, মানববন্ধনসহ নানা ভাবে দাবি করে আসলেও বর্তমান সরকারের আমলেই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন আইন ২০০৯, ভোক্তা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা, নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হয়। নিত্যপণ্যের বাজারে চলমান সিন্ডিকেট ও অস্থিরতা ঠেকাতে ভোক্তাদের জন্য সমন্বিত ভাবে বিএসটিআই, ভোক্তা অধিদপ্তর ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সকলকে নিয়ে ওয়ান স্টপ সেবা প্রদানে পৃথক ভোক্তা অধিকার মন্ত্রণালয়ের বিকল্প নাই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান ভূমিকা ও কাজ হলো ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষা দেয়া।

দেশে শিল্প বানিজ্য, আমদানি-রপ্তানির যারা চালিকা শক্তি, তাদের প্রতি অধিকতর সহানুভূতিশীল থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য স্বাভাবিক বিষয়। দেশে ন্যায্য ব্যবসার চর্চা থাকলে হয়তো ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ব্যবসা-বানিজ্যের অন্যতম অংশীজন ভোক্তাদের বিষয়টি বিবেচনায় থাকতো। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এই দায়িত্ব পালন করে সব পরিস্থিতিতে ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। যদি পৃথক মন্ত্রণালয় হয় তাহলে ১৮ কোটি ভোক্তার সমস্যাগুলি আরও দ্রুত সরকারের নীতি নির্ধারকদের দৃষ্ঠিগোছর করাা সম্ভব হবে। ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের মাঝে বিদ্যমান বৈষম্যও কিছুটা হ্রাস পাবে এবং সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।

১১ নভেম্বর ২০২৩ইং চট্টগ্রাম সিটিকরপোরেশন বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার সম্মুখে পুলিশবক্স চত্ত্বরে  “সিন্ডিকেট থামাও,জীবন বাঁচাও” ও পৃথক ভোক্তা অধিকার মন্ত্রনালয়ের দাবিতে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদী মানববন্ধনে উপরোক্ত দাবি জানানো হয়। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম মহানগর ও বিভাগ এবং ক্যাব যুব গ্রুপের আয়োজনে আয়োজিত প্রতিবাদী মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন,চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম নাসিরুল হক, ন্যাপ কেন্দ্রিয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মিটুল দাস গুপ্ত, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরেরর যুগ্ন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, ক্যাব সদরঘাট থানা সভাপতি শাহীন চৌধুরী, ক্যাব চান্দগাঁও থানা সভাপতি মোহাম্মদ জানে আলম, সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আবু ইউনুচ, সাধারন সম্পাদক ইসমাইল ফারুকী, ক্যাব বায়েজিদ থানা সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এবিএম হুমায়ুন কবির, ক্যাব ৬নং পুর্ব ষোল শহর ওয়ার্ড সভাপতি অধ্যক্ষ মনিরুজ্জমান, নারী নেত্রী রুহি দাস, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমান, সদস্য খালেদ সাইফুল্লাহ, মহারাজ চৌধুরী ও ওমর করিম প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ভোক্তারা দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক গোষ্ঠি হলেও তাদের স্বার্থ ও অধিকার সুরক্ষায় কোন পৃথক মন্ত্রণালয় নাই। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি ক্ষুদ্র অধিদপ্তরের মাধ্যমে কিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও এটিও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগন্য। আর ভোক্তাদের অধিকার ও সুবিধা প্রদানের জন্য সবকিছুর ভার দেয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের ওপর। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষনের দায়িত্বে নিয়োজিত বানিজ্য মন্ত্রণালয় ভোক্তা স্বার্থের বিষয়টি দেখভাল করার কারনে ভোক্তা স্বার্থ বারবার উপেক্ষিত ও ভুলন্টিত হচ্ছে। বিষয়গুলি অনেকটাই বিড়ালকে মাছ পাহারা দেবার মতো। ফলে ব্যবসায়ীরা মুক্ত বাজার অর্থনীতির নামে একবার পেঁয়াজ, একবার চাল, একবার মসলা, একবার সয়াবিন এভাবে পুরো বছর জুড়ে নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরী করে জনগনের পকেট কাটছে। দেশের ভোক্তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বার্ষিক চাহিদা নিরুপণ, উৎপাদন, যোগান, বাজারজাত করণে প্রতিবন্ধকতা নিয়ে অনুসন্ধান, ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে চিন্তা করার সময় বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের থাকে না।

বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভারতীয় নীতিনির্ধারকেরা রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা লগ্নে ১৯৪৭ সালেই ভোক্তা বিষয়ক পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয় গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ভারত শুরুতেই অন্তত কাঠামোগত দিক থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিল। তার কারনে ভারতে মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সব সময় সম্ভব হচ্ছে। তাই দ্রুত পৃথক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে ভোক্তাদের প্রতি দীর্ঘদিনের অবহেলার পরিসমাপ্তির দাবি জানান।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 − three =