অমানবিক জীবন থেকে মুক্তি পেতে চায় চাকুরীচ্যুত আনসার সদস্যরা

0
98

মোল্লা নাসির উদ্দীনঃ অমানবিক জীবন থেকে মুক্তি পেতে চায় চাকুরীচ্যুত আনসার সদস্যরা। সরকার যথাযথ যাচাই–বাছাইয়ের মাধ্যমে আনসার বিদ্রোহের কারনে দোষী সাব্যস্ত না হলে নির্দোষ চাকুরী হারানো রিট আবেদনকারীদের ব্যাটালিয়ন আনসারে ফেরানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে বলে এক রায়ে অবজারবেশন দিয়েছে আপিল বিভাগ।রায়টি প্রকাশ হয়েছে ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২।

১৯৯৪ সালে সংঘটিত  আনসার বিদ্রোহের পর চাকরি হারানো দুই হাজারের অধিক সংখ্যক আনসার সদস্যের মধ্যে যাঁদের বয়স ও শারীরিক সক্ষমতা রয়েছে, তাঁদের পুণর্বহাল করতে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমন পর্যবেক্ষণই দেয়া হয়েছ।

সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রদত্ত পূর্ণাঙ্গ রায়ে  বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে।

আইনজীবীদের প্রদত্ত তথ্যমতে, আনসারদের  বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে ১৯৯৪ সালে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। পরে তা বিদ্রোহে রূপ ধারন করে। এ ঘটনায় ২ হাজার ৪৯৬ জন আনসারকে গ্রেপ্তার করা হয়।বিদ্রোহের ঘটনায় মামলার পর বিভিন্ন সময় তাঁরা খালাস পান।

এর মধ্যে কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়।এতে ২ হাজার ৪৯৬ জন আনসার সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরি হারানো প্রায় ২ হাজার সদস্যের করা পৃথক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে হাইকোর্টও শর্তসাপেক্ষে তাঁদের পুনর্বহালের নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন।

হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আনসার-ভিডিপির মহাপরিচালক ও রাষ্ট্রপক্ষের করা পৃথক আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে গত বছরের ২ আগস্ট ২০২২ ইং রায় ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ।

আপীল বিভাগের অপর দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম।রায়টি লিখেছেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আনসার-ভিডিপির মহাপরিচালকের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন কামাল উল আলম ও কামরুল হক সিদ্দিকী এবং রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানীতে আইনজীবী ছিলেন মো. সালাহ উদ্দীন দোলন, মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও অনীক আর হক।
চাকরি হারানো নিয়ে যে কারনগুলো উল্লেখ করা হয়েছে-

রায়ে বলা হয়েছে, পুলিশের সহায়ক শক্তি হিসেবে আনসাররা কাজ করে থাকে, তারা প্রশিক্ষিত ও অস্ত্র পরিচালানায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। চেইন অব কমান্ড ভেঙে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করাকে ‘বিদ্রোহ’ বলা হয়, যা পুলিশের সহায়ক ফোর্সের জন্য সর্বোচ্চ অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।

আইনানুগভাবে এ জন্য কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ১৯৯৪ সালের সংঘটিত “আনসার বিদ্রোহের” পর দেশে জরুরি অবস্থা বিদ্যমান ছিল।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তারা ‘বিদ্রোহে’ জড়িত ব্যক্তিদের ঘটনাস্থল থেকেই চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করেছেন। মামলার এজাহারে তা উল্লেখ করা হয়।

এদিকে বিশৃঙ্খল এই পরিস্থিতিতে কিছু নিরপরাধ আনসারকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহের’ অপরাধে জড়িত দেখানো হতে পারে, যা সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে বের করা সম্ভব বলে সুপ্রিম কোর্ট  প্রদত্ত এ রায়ে অবজারবেশন দিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ২৫ বছরের দীর্ঘ ব্যবধানের পর যাচাই-বাছাই ছাড়া পাইকারি ভিত্তিতে তাদের পুনর্বহাল করাও সমীচীন হবে না। যথাযথ যাচাই–বাছাইয়ের পর ‘বিদ্রোহের’ অপরাধে দোষী না হলে নিরপরাধ চাকুরীচ্যুত সদস্যদের আনসার ব্যাটালিয়নে ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে।

রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি হাতে পেয়ে রিট আবেদনকারীদের অন্যতম আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দীন দোলন মতামত দেন, হাইকোর্টের রায় বাতিল হলেও যাচাই–বাছাই করে রিট আবেদনকারী নির্দোষ সদস্যদের  ব্যাটালিয়ন আনসারে ফেরত নিতে বা পুনর্বহাল করতে সরকারের কোনো বাধা নেই।

রায়ের পর্যবেক্ষণ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী জানিয়েছেন, চাকুরীচ্যুত রিট আবেদনকারীদেরকে (বিদ্রোহের পর চাকরি হারানো) সন্দেহভাজন ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করার মতো কোন গ্রাউন্ড নেই। মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকা তাদের নাগরিক অধিকার।

বিশেষত ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হতে তাদের বঞ্চিত করতে ‘আনসার হতে বিদায়’ কারণ হিসেবে বৈষম্য ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ইং ১৯৯৪ সালের চাকুরীচ্যুত ব্যাটালিয়ন আনসাররা  মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ, সিভিল আপিল নং-১৭৫-১৭৭/২০১৮, সি.পি.এ নং-৩৬৩, ৩৬৪ এবং ৬৫৪/২০১৯ এর ০২/০৮/২০২২ ইং তারিখের রায় আলোকে তাদের অসহনীয়

অমানবিক জীবন থেকে মুক্তি চেয়ে  ও অসহায় সন্তানদের নিয়ে সামাজিকভাবে বেচে থাকার অধিকার পেতে  চাকুরিতে পুনঃবহালের জন্য মানবদরদী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে একটি স্মারকলিপিও পেশ করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

13 − 9 =