নদী খননের মাটি বিক্রি করছেন প্রভাবশালীরা

0
50

নাটোরের বড়াইগ্রামে সরকারিভাবে খনন করা নদীর মাটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রভাবশালী
চক্র। গত দুই সপ্তাহ ধরে বড়াল নদীর নটাবাড়িয়া অংশে প্রকাশ্যে শত শত ট্রাক্টর মাটি বিক্রি হলেও রহস্যজনক কারণে
নীরব ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন। এভাবে নদীর মাটি বিক্রি করে অর্থহাতিয়ে নেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভের
সৃষ্টি হয়েছে। তবে মাটি বিক্রেতাদের দাবি, জেলা-উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েই তারা এ কর্মযজ্ঞ
চালাচ্ছেন।
জানা যায়, ২০২১ সালে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বড়াল নদী খনন করা হয়। সে সময় নদীর দুই পাড়সহ
পার্শ্ববর্তী ব্য ক্তি মালিকানা জমি মিলিয়ে প্রা য় ২০ ফুট প্রস্থ ও ১০ ফুট উঁচুকরে খননের মাটিগুলো রাখা হয়। এরপর জমির
মালিকরা উঁচুমাটির ওপরে কলা বাগানসহ বিভিন্ন গাছপালা রোপণ করেন। নিয়মানুযায়ী এসব মাটি কোনো ব্যক্তি বিক্রির
সুযোগ না থাকলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা দুলাল হোসেন, বসন্ত মণ্ডল, আশরাফুল ইসলামসহ অন্যরা এসব মাটি
গাড়িপ্রতি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা দামে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত দুটি
এক্সক্যাভেটর (ভেকু মেশিন) দিয়ে এসব মাটি কেটে প্রায় ২০টি ট্রাক্টরে করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি রাতে
কমপক্ষে ২০০-২২৫ গাড়ি মাটি উপজেলা র বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। এভাবে মাটি বিক্রি করে চক্রটি এক দিনে
প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। একই সঙ্গে মাটিবোঝাই শত শত ট্রাক্টর চলাচলে রাস্তাঘাটও নষ্ট হচ্ছে।
সারা রাত ভেকু ও ট্রাক্টর চলাচলের শব্দে স্থানীয়দের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
অন্যদিকে, মাটি কাটার আগে তারা স্থানীয় কৃষকদের রোপণ করা ফল বাগান, কলাগাছসহ অন্যান্য গাছপালা নির্বিচারে
কেটে ফেলায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিন দেখা যায়, নদীর পাড়ে সন্ধ্যা নামার অপেক্ষায় দুটি এক্সক্যাভেটর দাঁড় করানো। অন্ধকার
নেমে এলেই তারা মাটি কাটা শুরু করবেন। ইতিমধ্যে মাটিখেকোরা বড়াল নদীর ব্রিজ থেকে জোয়াড়ী বাজারের দিকে
প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকার মাটি কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন।
এ সময় সেখানে মাটি বিক্রির দায়িত্বে থাকা আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে জানিয়েই আমরা মাটি
বিক্রি করছি। তবে নদী খননের মাটি বিক্রি করার এখতিয়ার উনাদের আছে কি না—জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর
দিতে পারেননি।
তিরাইল গ্রা মের সোহেল রানা ও শফিকুল ইসলাম জানান, আমরা প্রতি গাড়ি মাটি ১২শ টাকা দরে কিনে নিয়েছি। নাম
প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, বাড়ির পাশেই নদী, অথচ এ মাটি আমাদের নগদ টাকায় কিনে নিতে হচ্ছে।
গত দুই সপ্তাহে মাটি বিক্রির কমপক্ষে ৪০ লাখ টাকা এরা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এসএসসি পরীক্ষার্থী জানায়, আমাদের বাড়ির পা শ দিয়ে সন্ধ্যার পর থেকে সারা রাত
মাটিবোঝাই ট্রাক্টর চলে। এসব ট্রাক্টরের শব্দে না পারছি পড়তে, না পারছি ঘুমাতে।

মাটি কাটার কাজে নিয়োজিত এক্সক্যাভেটর মালিক পরিচয় দেওয়া উপজেলার চকপাড়া গ্রামের বাবুজানান, ডিসি-
ইউএনও, ওসি সবার পারমিশন নিয়েই মাটি কাটা হচ্ছে। বিষয়টি সবাই জানেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বোরহান উদ্দিন মিঠুজানান, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। আর নদী খননের মাটি
কোনো ব্যক্তি কে বিক্রির অনুমতি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমি খোঁজ নেওয়াসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ
করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nine − seven =