মনোজ হালদারের ভু’য়া সনদ বানিজ্য

0
87

অনুসন্ধানী প্রতিবেদনঃ পর্ব  ( ০২ ) ঃ   আলোচিত পিরোজপুর জেলার নেসারাবাদ উপজেলার পি.জি.এস. সুকাদিত্যকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

ভুয়া সনদ বানিজ্যে ঐ প্রতিষ্ঠানের জুড়ি নেই। ঐ বিদ্যালয়ের দেয়া একটি ভুয়া সনদকে নিয়ে এলাকায় বইছে সমালোচনার ঝড়।

স্কুলের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ঐ ভুয়া সনদকে কেন্দ্র করে অন্য একটি স্কুলের আয়া পদে নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। ঐ ভুয়া সনদে চাকরি পাওয়ার আশায় একটি  দরিদ্র পরিবার জমি বিক্রির কথা বলে বিভিন্ন লোকের নিকট থেকে ঋনও গ্রহন করেছিল। চাকরি না হওয়ায় ঐ পরিবারটি ঋন করা বেশির ভাগ টাকা ফেরত দিলেও এখনও অনেক টাকা ঋনী রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। ভুয়া সনদের  সূত্র ধরে অপরাধ বিচিত্রায় গত ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ তারিখের সংখ্যায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিতর্কিত ঐ সনদের  বৈধতা যাছাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে অপরাধ বিচিত্রার পক্ষ থেকে উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বরাবরে ডাকযোগে দুইবার আবেদন করা হয়। যার অনুলিপি পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, নেসারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং নেসারাবাদ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে প্রেরন করা হয়। কিন্তু উক্ত বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো তথ্য সরবরাহ করেনি। ইহা ছাড়াও উক্ত প্রধান শিক্ষক মনোজ হালদারের অপকর্মের সাফাই গেয়ে একাধিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক সাংবাদিক  ম্যানেজ করার মিশনে নামে। অর্থলোভী ভুয়া সনদ বানিজ্যের হোতা মনোজ হালদারের পক্ষ নিয়ে ঐ শিক্ষকরা ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সুচতুর প্রধান শিক্ষক মনোজ হালদার  বিপদ আচ করতে পেরে ভুয়া সনদকে বৈধতা দিতে এর স্বপক্ষে ডকুমেন্টস তৈরিতে ব্যস্তু হয়ে পড়েছে বলে গোপন সূত্রে জানা যায়। অনুসন্ধানী সাংবাদিক টিমকে ম্যানেজ করার জন্য আফরোজা পরিচয়ে নারী কন্ঠে জনৈক ব্যাক্তি সাংবাদিক শেখর হালদারের মুঠোফোনে ফোন করেছিল। পরে জানা যায় ঐ ভুয়া সনদধারী রুমা আক্তারই আফরোজা পরিচয়দানকারী নারী। প্রধান শিক্ষক মনোজই তাকে ফোন করতে বলেছিল বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। এ বিষয়ে এলাকাবাসীর মন্তব্যে উঠে আসে যে, মোটা অংকের অবৈধ লেনদেনের বিনিময়ে মানোজ কুমার হালদার ঐ ভুয়া সনদ প্রদান করেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্য একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষক জানান, অনেক সময় এলাকার দরিদ্র পরিবারের মেয়েরা গার্মেন্টস শিল্পে চাকরি করার কথা বলে আমাদের নিকট থেকে সনদ নেয়। এলাকার গরীব লোক হওয়ায় মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে হাতে লিখে এ ধরনের প্রত্যয়ন পত্র দিয়ে থাকি । বিদ্যালয়ে এর কোনো ডকুমেন্টস আমরা সংরক্ষণ করি না।  কিন্তু কোনো সরকারি কাজে  ব্যবহারের জন্য আমরা কখনোই এ ধরনের প্রত্যয়ন পত্র দেই না।  এ বিষয়ে অপরাধ বিচিত্রার অনুসন্ধানী টিমের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসতে থাকে আরও  অনেক তথ্য।   ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোজ কুমার  হালদার কর্তৃক ২২/০৯/২০২২ তারিখে স্বাক্ষরিত ঐ ভুয়া প্রত্যয়নের সূত্র ধরে অপরাধ বিচিত্রার অনুসন্ধানী টিম বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে থাকে। সারেংকাঠী পঞ্চগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি আয়া পদে দাখিলকৃত আবেদন পত্রের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য।  পি.জি.এস সুকাদিত্যকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃক প্রদানকৃত ঐ ভুয়া প্রত্যয়ন পত্রে রুমা আক্তার নামে এক ছাত্রীকে উক্ত স্কুলের ২০০১ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। 

তাঁকে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণের প্রত্যয়ন পত্রও প্রদান করা হয়। তার পিতার নাম লেখা আছে আনছার  আলী। ঠিকানা উল্লেখ আছে কাউখালি উপজেলার সোনাকুর গ্রাম।  সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত রুমা  আক্তার পিরোজপুরের নেসারাবাদ উপজেলার  পশ্চিম সারেংকাঠী গ্রামের কালাম কাজীর স্ত্রী। তাকে এই এলাকা এবং তার পিতৃ এলাকার লোকজন আফরোজা নামে চেনে।  প্রতিবেশীদের তথ্যমতে ১৪-১৫ পূর্বে তাদের বিবাহ হয়। বৈবাহিক সূত্রে রুমা আক্তারের এ এলাকায় আগমন। সে উক্ত সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছিল এমন কোনো প্রমান স্কুলের বর্তমান এবং প্রাক্তন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রতিবেশী এমনকি তার পৈত্রিক গ্রামের এলাকা থেকেও পাওয়া যায় নি। ঐ স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক নির্মল মন্ডল জানান আমার জানামতে আমার সময়ে ঐ নামে এবং উক্ত ঠিকানার কোনো ছাত্রী এই স্কুলে ছিল না।   পিরোজপুর জেলার নেসারাবাদ উপজেলার সারেংকাঠী পঞ্চগ্রাম সন্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৫টি শুন্য পদে নিয়োগের জন্যবিজ্ঞাপ্তি দেয়া হয়। তখন আয়া পদে উক্ত ভুয়া সনদধারী রুমা  আক্তারও আবেদন পত্র জমা দেয়। এলাকায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। জনশ্রুতি আছে একটি মহল পেশীশক্তির ভয় দেখিয়ে এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আবেদন পত্র বাছাই কমিটিকে উক্ত ভুয়া সনদকে বৈধতা দিতে বাধ্য করে। ভুয়া সনদে সরকারি চাকরি হয় না জেনেও ঐ চক্রটি  নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল অবৈধ অর্থিক লেন দেন ও পেশি শক্তির জোরে তাদের মনোনীত ভুয়া প্রার্থীর পক্ষে নেয়ার পায়তারা চালাতে থাকে। নিরাপত্তার কারণে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা নেসারাবাদ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্ম কর্তার কার্যালয়ে গ্রহন করতে বাধ্য হয়। গত ২৯/১১/২০২৩ তারিখে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও ভুয়া সনদধারীর পক্ষে ফলাফল ঘোষণা করার জন্য প্রভাব বিস্তার করতে থাকে ঐ চক্রটি। অবশেষে ৪ পদের জন্য ফলাফল ঘোষণা করা হলেও আয়া পদে কোনো প্রার্থীই উত্তীর্ন হয়নি বলে তাদের নিয়োগ বাতিল করা হয়।   সকল ঘটনা প্রবাহ বিশ্লেষন করে দেখা যায় সব অপকর্মের মূলে রয়েছে ঐ ভুয়া এবং মিথ্যা প্রত্যয়ন পত্র। যার মূল হোতা পি.জি.এস. সুকাদিত্যকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোজ কুমার  হালদার। এলাকাবাসীর মন্তব্য প্রধান শিক্ষক মনোজ হালদার মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এই ধরনের দূর্নীতি করেছে। এখন টাকাও ফেরত দিতে পারছে না নিজেকে দায়মুক্তও করতে পারছে না। এদিকে অবৈধ ভুয়া সনদকে বৈধতা পাওয়ার জন্য ভুয়া সনদধারী পিরোজপুর ০২ আসনের সংসদ সদস্যের কাছের লোকজন দ্বারা বিভিন্ন মহলে তদবির চালিয়ে যাচ্ছে। ঐ ভুয়া সনদধারী এটাও ঘোষণা দিয়ে বেড়াচ্ছে পরবর্তী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সে পুনঃরায় আবেদন করবে। সচেতন মহলের প্রশ্ন উক্ত সনদটি ভুয়া তা জেনেও বাছাই কমিটিতে কিভাবে রুমা আক্তারের আবেদনটি বৈধতা পেল? কিভাবে অবৈধ সনদধারী নিয়োগ পরীক্ষায় অবতীর্ণ হল? তবে কি এখানেও অনৈতিক অর্থনৈতিক লেন দেন ছিল?    ভুয়া সনদের বিষয়ে জানতে নেসারাবাদ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন এর সাথে অপরাধ বিচিত্রার পক্ষ থেকে কয়েকবার তার মুঠোফোনে ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। এখন প্রশ্ন আসে তবে কি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারও অবৈধ লেনদেনের সাথে জড়িত? তার বিরুদ্ধে সারেংকাঠী পঞ্চগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অন্য ৪ টি পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য ৪,৫০,০০০/= টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট সচেতন মহলের দাবি এই দূর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যাবস্থা গ্রহন করে দূর্নীতির হাত থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে রক্ষা করা হউক। এদিকে এলাকাবাসীর পক্ষে জনস্বার্থে ঐ দূর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক মনোজ হালদারের বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলে একটি সূত্র জানায়। ( বিঃ দ্রঃ অপরাধ বিচিত্রার গত ০৫  ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে কয়েকটি স্থানে রুমা আক্তারের পরিবর্তে রুমানা আক্তার ছাপা হয়েছে। এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত।) 

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five × two =